
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ভোগান্তি কমেনি বানভাসিদের। দূষিত পানি ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চর্মরোগ, জ্বর, ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ায় ভুগছেন অনেকেই। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না মেলায় বেড়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খাদ্য সংকট ও হাজার হাজার কৃষকের ফসলহানির দুঃশ্চিন্তা।
পদ্মা তীরের নিম্নাঞ্চলে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রায় এক মাস থেকে পানিবন্দি থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চাঁপাইনবাবগন্জ সদর ও শিবগঞ্জের চারটি ইউনিয়নে সুপেয় পানির অভাব, যোগাযোগ দুর্বলতা ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।
নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাউসার আলী বলেন,তারা অবহেলিত এলাকায় বাসিন্দা। এবারে বন্যায় কোনো চিকিৎসাসেবা পাইনি, এখন ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি আর ডায়রিয়া। শিবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়নের আবদুল কাদের অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবছরই এমন হয়, কিন্তু আগে থেকে কোনো পূর্বাভাস মেলে না, তাই প্রস্তুতি নিতে পারি না।
স্থানীয় কৃষক আসফাউল হক বলেন, অন্যের কাছে টাকা ধারদেনা করে ৫ বিঘা আউস ধান ও শাক সবজি রোপন করেছিলেন। দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকায় সব ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এমন অবস্থা অনেক কৃষকের। ফসল নষ্ট হওয়ায় খাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিবে। এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ নারায়ণপুর ইউনিয়নের জমিস উদ্দীন বলেন, আমরা অবহেলিত জনপদের মানুষ। আমাদের ইউনিয়নটির বেশিরভাগ অংশ পানিবন্দি। চলতি বন্যা মৌসুমে কোন চিকিৎসা সেবা পাায়নি তারা। বর্তমানে প্রায় প্রত্যেক ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত মানুষজন। তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলেন চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কেউ এলো না।
উজিরপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জানান, বন্যার কারণে মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ত্রাণ ও চিকিৎসা পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, তবে সরকারি সহায়তা আরও বাড়ানো জরুরি।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলী জানান, গত ২৫ আগস্ট চরপাকা এলাকায় বন্যাদুর্গতদের জন্য মেডিকেল ও ভেটেরিনারি ক্যাম্প বসানো হয়, যেখানে বিনামূল্যে ওষুধ ও স্বাস্থ্যপরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সমাজসেবা অফিসের সেবা সরাসরি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে এবং নতুন করে ৭০০ পরিবার সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে পর্যাপ্ত প্রণোদনা দেওয়া হবে, এ কাজে ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন জানান, পাঁকা ও উজিরপুর ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামে ওষুধ সরবরাহ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগ সুত্রে জানা গেছে চলতি বন্যায় জেলা সদর এর আলাতুলি, নারায়নপুর, শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর, পাঁকা, দুর্লভপুরে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারকে ১০ কেজি, ১৫ কেজি ২০ কেজি ও ৩০ কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভীষণ দুর্যোগ প্রবন এলাকায় শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ একেএম শাহাব উদ্দীন বলেন,বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয়েছে। পানিবন্দি মানুষদের চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগন্জ উপজেলার ২৫ কিলোমিটার নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে পোলাডাঙ্গা বিওপি ও মনোহরপুরে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন রোধ এর কাজ চলছ।