বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শিরোনাম: ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের ফল প্রকাশ    বিশ্বাস পুনর্নির্মাণের জন্য আমি গত দুইদিন ধরে বাংলাদেশ সফর করছি : ডোনাল্ড লু     ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ    রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নব নিযুক্ত তিন বিচারপতি    র‍্যাব, শ্রমিক অধিকার ও মানবাধিকার বিষয়ে অগ্রগতি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র    সমীকরণে ছিটকে গেছে লখনৌ-দিল্লি, রইলো যারা.....    আ.লীগের কারণে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত দেশের মানুষ: ফখরুল   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিজের ৩ সন্তানকেই হারালো বাবা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, ২:৪৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

টানা পাঁচ মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বর্বর এই হামলায় ২৯ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ধ্বংস হয়ে গেছে বহু ফিলিস্তিনি পরিবার। অন্য অনেকের মতো আহমেদ আল-গুফেরি নামে এক ফিলিস্তিনিও তার পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন তার ১০৩ জন স্বজন। নিহত হয়েছেন তার স্ত্রীও। ইসরায়েলি আগ্রাসন কেড়ে নিয়েছে তার তিন মেয়ে সন্তানের প্রাণও। সন্তানদের হারিয়ে ফিলিস্তিনি এই বাবার প্রশ্ন, কে তাকে বাবা বলে ডাকবে?

মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর নিক্ষেপ করা বোমা আহমেদ আল-গুফেরির পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গাজা সিটিতে তাদের পরিবারের বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় ১০৩ জন আত্মীয় নিহত হলেও আহমেদ ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) দূরে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেরিকো শহরে আটকা পড়েছিলেন। আর এতেই তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস যখন ইসরায়েল আক্রমণ করে তখন আহমেদ তেল আবিবের একটি নির্মাণ সাইটে কাজ করছিলেন। সেই হামলার জেরে পরবর্তীতে সৃষ্ট যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের সামরিক অবরোধের কারণে তিনি তার স্ত্রী এবং তিন কন্যার কাছে ফিরে যেতে পারেননি।

তবে তিনি প্রতিদিন একই সময়ে তার স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে কথা বলতেন। মূলত যখন ফোন সংযোগ চালুর অনুমতি দেওয়া হতো তখনই কথা বলতেন তিনি। আর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হামলার সময় তিনি তার স্ত্রী শিরিনের সাথে ফোনে কথা বলছিলেন।

আহমেদ আল-গুফেরি বলছেন, ‘সে (শিরিন) জানত যে, সে মারা যাবে। সে আমাকে বলেছিল, সে যদি আমার সাথে খারাপ কিছু করে থাকে তাহলে তাকে যেন ক্ষমা করে দিই। আমি তাকে বলেছিলাম, এমন কথা বলার দরকার নেই। এবং এটিই ছিল আমাদের শেষবার ফোনে কথা বলা।’

সেই সন্ধ্যায় তার মামার বাড়িতে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় আহমেদ আল-গুফেরি স্ত্রী এবং তার তিন কন্যা - তালা, লানা এবং নাজলা নিহত হয়। একইসঙ্গে সেই হামলায় আহমেদের মা, তার চার ভাই এবং তাদের পরিবার, সেইসাথে তার কয়েক ডজন খালা, চাচা এবং চাচাত ভাইও নিহত হয়। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা শতাধিক।

সেই হামলার পর দুই মাস পার হয়ে গেলেও ধ্বংসস্তূপের নিচে তাদের কয়েকজনের লাশ এখনও আটকে আছে।

বিবিসি বলছে, গত সপ্তাহে ছিল আহমেদের ছোট মেয়ের জন্মদিন। বেঁচে থাকলে নাজলার বয়স এসময় দুই বছর হয়ে যেত। স্ত্রী-সন্তানদের চলে যাওয়ার পর দুই মাস পার হলেও আহমেদ এখনও বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি।

নিজের সন্তানদের মৃতদেহ হাতে ধরতে না পেরে বা তাদের সমাধিস্থ করতে না পারা আহমেদ এখনও এমন ভাবে কথা বলেন, যেন তারা বেঁচে আছেন। এসময় অশ্রুতে যেন তার চোখ-মুখ স্থির হয়ে যায়।

আহমেদ আল-গুফেরি বলছেন, ‘আমার মেয়েরা আমার কাছে ছোট পাখির মতো। আমার মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নের মধ্যে আছি। আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না, আমাদের কী হয়েছে।’

তিনি তার ফোন এবং ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে মেয়েদের ছবি সরিয়ে দিয়েছেন, যাতে তাদের ছবি দেখে তিনি চমকে না ওঠেন। হামলায় বেঁচে থাকা কয়েকজন আত্মীয় এবং প্রতিবেশীর কাছ থেকে তিনি সেই দিনের ঘটনার বিবরণ পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

তারা তাকে বলেছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমে তার পরিবারের বাড়ির প্রবেশপথে আঘাত করে। তিনি বলেন, ‘এরপর তারা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পাশেই আমার মামার বাড়িতে গেল। পনের মিনিট পরে, ওই বাড়িতে বিমান হামলা হয়।’


এই বাড়িতেই বিমান হামলা চালিয়ে আহমদের পরিবারকে হত্যা করা হয়
গাজা শহরের জেইতুন এলাকায় সাহাবা মেডিকেল সেন্টারের কোনে চার তলা ভবনটিতে হামলা চালিয়ে ওই পরিবারটিকে হত্যা করা হয়েছিল। হামলার পর এখন সেটি কেবলই কংক্রিটের একটি ঢিবি আর ধুলোময় পোশাকের টুকরো দেখা যায়।

আহমেদের জীবিত আত্মীয়দের একজন হামিদ আল-গুফেরি। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, হামলা শুরু হওয়ার পর যারা পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিল, তারাই সেদিন বেঁচে গিয়েছিল। আর যারা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা নিহত হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘হামলায় চারদিকে আগুন লেগে গিয়েছিল। আমাদের পাশের চারটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। প্রতি ১০ মিনিটে তারা একটি করে বাড়িতে হামলা করছিল সেদিন। আমাদের সন্তান এবং আত্মীয়সহ গুফেরি পরিবারের ১১০ জন লোক সেখানে ছিল। তাদের মধ্যে গুটিকয়েক ব্যতীত সবাইকে হত্যা করা হয়েছে।’

জীবিতরা বলছেন, সেদিনের হামলায় সবচেয়ে বেশি বয়সী যিনি নিহত হয়েছিলেন তিনি ছিলেন ৯৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা; আর মাত্র নয় দিন আগে জন্ম নেওয়া সবচেয়ে ছোট এক ছেলে শিশুও সেদিন প্রাণ হারায়।

আহমেদ আল-গুফেরির একজন চাচাতো ভাই - যাকে আহমেদ নামেও ডাকা হয় - বিমান হামলা থেকে হওয়া দুটি বড় বিস্ফোরণের বর্ণনা দিয়েছেন।


তিনি বলেন, ‘হামলার বিষয়ে কোনও আগাম সতর্কতা ছিল না। যদি (কিছু) লোক আগেই এই এলাকা ছেড়ে না যেত, আমি মনে করি শত শত মানুষ সেদিন নিহত হতো। এলাকাটি এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন দেখাচ্ছে। সেখানে একটি গাড়ি পার্কিং, পানি রাখার জায়গা এবং তিনটি বাড়ি ও একটি বড় বাড়ি ছিল। তবে হামলার পর পুরো আবাসিক এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে।’

হামিদ বলেন, ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের জন্য জীবিতরা ভোররাত পর্যন্ত কাজ করেছেন। আর চাচাতো ভাই আহমেদ বলছেন, ‘যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে ঘুরছিল এবং আমরা যারা হতাহতদের বের করার চেষ্টা করছিলাম, তখনও কোয়াডকপ্টারগুলো থেকে আমাদের দিকে গুলিবর্ষণ করা হচ্ছিল।’

উম্মে আহমেদ আল-গুফেরি বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা ঘরে বসে ছিলাম এবং মূহুর্তের মধ্যে আমরা নিজেদের ধ্বংসস্তূপের নিচে দেখতে পেলাম। আমাকে একপাশ থেকে অন্য দিকে ছুড়ে ফেলা হলো। আমি জানি না কিভাবে তারা আমাকে বের করে এনেছে। আমরা আমাদের চোখের সামনে মৃত্যু দেখেছি।’

বিবিসি বলছে, বর্বর সেই হামলার আড়াই মাস পর উদ্ধারকারীরা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা কিছু লাশের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। আর এই পরিবার একটি ছোট খননকারী যন্ত্র ভাড়া করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছে।’

আহমেদ বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা (আজ) চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি, যার মধ্যে আমার ভাইয়ের স্ত্রী এবং আমার ভাগ্নে মোহাম্মদ রয়েছে। তাদেরকে টুকরো টুকরো করে বের করা হয়েছে। তারা ৭৫ দিন ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিল।’



তাদের অস্থায়ী কবরগুলো কাছাকাছি খালি জমির একটি অংশে দেওয়া হয়েছে। এসব কবর লাঠি এবং প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। তবে পশ্চিম তীরের জেরিকোতে আটকে থাকা আহমেদ তাদের দেখতে পারেননি।



ভোরের পাতা/আরএস

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]