সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রভাষক মামুন হোসেন হত্যাকাণ্ডের দশ বছরেও মূল আসামিরা ধরা পড়েনি। ২০১৩ সালের এই দিনে সাতক্ষীরা সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি প্রভাষক মামুন হোসেনকে হত্যা করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
নিহত মামুন হোসেনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসি তন্নী এখনও সেই স্মৃতি মনে করতেই আঁতকে উঠেন। চোখের সামনে তার স্বামী হত্যার দৃশ্য যেন তাকে এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়।
এ ঘটনায় পুলিশ কিছু আসামীদের গ্রেপ্তার করলেও দ্রুত বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন এবং মামুন হত্যাকান্ডে জড়িত সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচার কাজ সম্পন্ন করার জোর দাবি জানান আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা।
সাতক্ষীরা জজকোর্টের সরকার কৌশলী(পিপি) অ্যাড. আব্দুল লতিফ বলেন, মামুন হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে, দ্রুত বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যার প্রতিবাদে প্রতিবছর কর্মসূচি পালন করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন।
সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসান বলেন, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর জেলা জুড়ে জামায়াত-শিবিরের তান্ডব শুরু হয়। শহরতলীর বকচরা মোড়ে পুলিশ ও বিজিবির ধাওয়া খেয়ে কদমতলার দিকে ফেরার পথে জামায়াত-শিবিরের কিছু নেতা-কর্মী প্রথমে মামুনের বাড়িতে প্রবেশ করে মামুনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে মুড়ি ও পানি খেতে চায়। পরে ওরা জামায়াত-শিবিরের কয়েক শত নেতাকর্মীকে ডেকে এনে ছাত্রলীগ করার অপরাধে মামুনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে। এক পর্যায়ে তারা মামুনের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস ও বাবা শহীদুল ইসলামসহ তার ছোট বোনকে মারপিট করে ঘরের নীচের তলার দরজায় তালা মেরে ঘরে পেট্রোল ঢেলে ও গান পাউডার ছড়িয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি জামায়াত-শিবিরের হাতে নিহত সকল দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা মামলার বিচার কাজ দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার কথা বলা হয়েছে। এতদিনেও বিচার কাজ শেষ না হওয়ায় আওয়ামী লীগের এই নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার রায়ের খবরে জামায়াত-শিবিরের কয়েক হাজার কর্মী এ দিন দুপুরের পর সাতক্ষীরা শহরের সহিংসতার চেষ্টা করে। তারা শহরের কদমতলা এলাকায় জড়ো হয়ে হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতা মামুন হোসেনের বাড়িতে। মামুন হোসেনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। ৬ মাসের নববিবাহিতা স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসি তন্নী জামায়াত নেতাদের পায়ে ধরে বার বার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও তাতে তাদের মন গলেনি।
মামুনকে হত্যার পর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা শহরের দিকে আসতে চাইলে সার্কিট হাউস মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের ওপর হামলা চালায় তারা। এ ঘটনায় পুলিশের প্রায় ৫০ সদস্য আহত হয়।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা মামুন হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জামায়াতের নেতা সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল খালেক মণ্ডল, ফিংড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নরুল হুদাসহ ১৯০ জন হামলাকারীর বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ এ মামলায় এজহার নামীয় ১৩ জনসহ অজ্ঞাত আরও ৩১ জনকে গ্রেফতার করেছে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, যাদের নেতৃত্বে মামুনকে হত্যা করা হয়েছে পুলিশ তাদের গত এক বছরেও গ্রেফতার করতে পারেনি। বর্তমানে ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক হান্নান মাহমুদ মামলাটি তদন্ত করছেন।
নিহত পরিবারের দাবি পুলিশ যেন দ্রুত হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনে।
ওই বছর ২০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় এসে জামায়াত-শিবিরের সহিংসতায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় মামুনের স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবার হাতে ৮ লাখ টাকা তুলে দেন।