দেশের সব দলেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক থাকবে: নির্মল রঞ্জন গুহ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:১৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
একুশ মানে মাথা নত না করা, একুশ মানে উঁচু করা। এই একুশের রক্তমাখা বলিষ্ঠ পথ ধরে আমরা একাত্তরের যুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। আমাদের এই স্বাধীনতার আগে থেকেই বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাদের মতো ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের জাতির পিতার কাছে টিকতে পারে নাই, আর এখন আল জাজিরার মতো এই রকম একটি গণমাধ্যম সংগঠন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যার কাছে কোনভাবেই পাত্তা পাবে না। ষড়যন্ত্রকারীরা কোনভাবেই আমাদেরকে দ্বিখণ্ডিত করতে পারবে না।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২৫৬তম পর্বে শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আলোচক হিসাবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ড. মোহাম্মদ আলী মানিক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা সোহেল শাহরিয়ার রানা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল দাস।
নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, ভাষা আন্দোলনের এই মাসে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকদের মাঝে একটু হলেও সাড়া দেয় এই একাত্তরের অপশক্তির বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য। বঙ্গবন্ধু মুজিব রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েই হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় নেতা। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা অমান্য করে মিছিল করলে পাকিস্তানি শাসকদের বর্বরতায় রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার নিহত হন। ভাষার জন্য বাংলার বীর সন্তানদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়। বিক্ষুব্ধ জনতার দাবির মুখে ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পেয়েই তিনি সারা দেশ ঘুরে জনমত গঠন করে হত্যার প্রতিবাদ ও বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জোর দাবি করেন। ১৯৫২ সালের ৩০ মে পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে গিয়েও রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবির সঙ্গে সরকারের দুর্নীতি ও পাট চাষিদের ন্যায্য অধিকারের দাবিতে জোরালো বক্তব্য দেন। ১৯৫৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম বার্ষিকীতে মিছিল ও আরমানিটোলার সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে তিনি বলেছিলেন, একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালনকালে বাংলা ভাষার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন। ভাষার মাস আসলেই আমারা যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিরা আছি তাদের মধ্যে একটা ঐক্য গড়ে উঠে। এই মাসটা আসলেই আমাদের মনের মধ্যে একটা আবেগ কাজ করে। ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাষা আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাঙালিয়ানার যে জোয়ার আসে, সেটাই আমাদের জাতীয়তা বোধের জন্ম দেয়। আর এই জাতীয়তা বোধের উৎসারিত চেতনা থেকেই আমরা এখনো সব আন্দোলন-সংগ্রামে প্রেরণা পাই। শোষণের বিরুদ্ধে, নির্যাতনের বিরুদ্ধে, দাবি আদায়ের সংগ্রামে আমাদের উজ্জীবিত করে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি। পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমন করার জন্য ১৪৪ ধারা জারির মাধ্যমে জনসমাগম, জনসভা ও মিছিল নিষিদ্ধ করে দেয়। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে পুলিশ গুলি চালায়। শহিদ হন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতসহ আরও অনেকে। আমি বিশ্বাস করি এমন একটি দিন আসবে আমাদের দেশের রাজনৈতিক সব দলেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির লোকেরা থাকবে। আমার প্রত্যাশা হচ্ছে, এই স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারি দলেও থাকবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির লোকেরা, বিরোধীদলেও থাকবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির লোকেরা। সেই দিনটির জন্য আমি অপেক্ষায় আছি।