
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠিত তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) বিভাজনের সুর স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী জোট গঠন ইস্যুতে দলের ভেতরে মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে দলটির নারী নেত্রীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া। তাদের কয়েকজন এরই মধ্যে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। দল থেকে পদত্যাগ করে ঢাকা-৯ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ঘোষণো দিয়েছেন জুলাই আন্দোলনের আলোচিত সংগঠক তাসনিম জারা। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীনও পদত্যাগ করেছেন। তিনি ঢাকা-১৭ আসনে এনসিপির প্রার্থী ছিলেন।
জানা গেছে, জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির নির্বাচনী জোট গঠন ঠেকাতে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন দলটির নারী নেত্রীরা। গত ২৫ ডিসেম্বর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বাসায় বৈঠকে নারী নেত্রীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট হলে তারা সম্মিলিতভাবে দলত্যাগ করবেন। এরপর একের পর এক নেত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানাচ্ছেন।
জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এনসিপির জেষ্ঠ্য যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্ভরযোগ্য মিত্র না। তার রাজনৈতিক অবস্থান বা দর্শনসহ কোনও সহযোগিতা বা সমঝোতায় যাওয়া এনসিপিকে কঠিন মূল্য চুকাতে হবে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি রাজনৈতিক জোট প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল নেতারা মন্তব্য করেছিলেন জামায়াত জুলাইয়ের স্পিরিট, বাংলাদেশ নিয়ে পরিকল্পনায় একমত হলে জামায়াতের সঙ্গে জোট করতে আসতে পারে যেকোনও দল।
সামান্তা শারমিন আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির এত দিনের অবস্থান অনুযায়ী তার মূলনীতি, রাষ্ট্রকল্প জামায়েত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন তথা সেকেন্ড রিপাবলিককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দল এনসিপি। ফলে এই তিনটি বিষয়ে অভিন্ন অবস্থান যেকোনও রাজনৈতিক মিত্রতার পূর্বশর্ত।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, আমার বর্তমান অবস্থান পার্টির গত দেড় বছরের অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিম্নকক্ষে পিআর আওয়াজ তুলে সংস্কারকে ব্যাহত করায় লিপ্ত হয়েছিল জামায়াত। ফলত এনসিপির আহ্বায়ক বলেছিলেন ‘যারা সংস্কারের পক্ষে নয় তাদের সাথে জোটও সম্ভব নয়’। তাই জুলাই পদযাত্রার পর থেকে ‘৩০০’ আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় আহ্বায়কসহ একাধিক বরাতে এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে এনসিপি- এই মর্মে সারাদেশ থেকে প্রার্থীদের আহ্বান করা হয়।
সবশেষ তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোট করার সমস্যাসমূহ তুলে ধরা মানেই বিএনপির পক্ষে অবস্থান বোঝায় না। বরং বিভিন্ন বিষয়ে এতদিন ধরে প্রকাশিত ও নানান মহলে প্রশংসিত এনসিপির অবস্থান আমি সঠিক মনে করি ও নিজেকে এই আদর্শের সৈনিক মনে করি। বিএনপি-জামায়াতের যেকোনওটির সঙ্গে জোট এনসিপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পলিসি থেকে সরে গিয়ে তৈরি হচ্ছে।
এনসিপির আরেক নেত্রী ডা. মাহমুদা মিতু গতকাল এক পোস্টে লিখেছেন, চাটুকারিতা ও দালালি যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তাতে স্পষ্ট, সচেতন না হলে দমন পীড়নের দিন আবার ফিরে আসবেই।
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নারী নেত্রী নুসরাত তাবাসসুম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, নীতির চাইতে রাজনীতি বড় না। কমিটমেন্ট ইজ কমিটমেন্ট।
অন্যদিকে গতকাল রাতের এক পোস্টে সামান্তা লিখেছেন, অসহায় এক মোমেন্টাম পার করছি! এ কেমন দোলাচল? তীরে এসে তরী ডুবালে এদেশের কী হবে?
জামায়াতের সাথে এনসিপির জোট নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন এনসিপির জুনিয়র নেত্রী মুনিরা শারমিন। তিনি ফেসবুকে লিখেন, মাইনাসের গেইম খেলো না বন্ধু, আমলনামা সুরক্ষিত আছে। সততার শক্তিকে চ্যালেঞ্জ কইরো না।
এদিকে জামায়াতের সঙ্গে জোট গঠনে আপত্তি জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে চিঠি লিখেছেন দলটির ৩০ নেতা। এই তালিকায় নারী নেত্রীদের মধ্যে আছেন যুগ্ম আহ্বায়ক অর্পিতা শ্যামা দেব, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম এবং কেন্দ্রীয় সদস্য সৈয়দা নীলিমা দোলা।