মঙ্গলবার ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে ভুরুঙ্গামারীর কৃষি   মোংলায় কয়লার ট্রাকসহ আটক ২, বাকীদের বিরুদ্বে মামলা   পাম তেল জব্দ ঘিরে রায়গঞ্জ পুলিশের বিরুদ্ধে আদর্শ গ্রুপের অভিযোগ   ৮ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়ে মৌলভীবাজারের সর্বত্র উড়ে লাল-সবুজ পতাকা   খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা   নির্বাচন এলে যারা তসবিহ নিয়ে ঘুরে তারাই ধর্মকে ব্যবহার করে: জামায়াত আমির   বিএনপি ধর্মের নামে প্রতারণা করতে চায় না: সালাহউদ্দিন আহমেদ   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে ভুরুঙ্গামারীর কৃষি
এ এস খোকন, ভুরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৪:০৬ AM

কৃষি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করে। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ভুরুঙ্গামারীতে  কৃষিকাজে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। বীজতলা তৈরী, চারা রোপন, ধান কাটা,  মাড়াই, বস্তাবন্দি করা- সবই হচ্ছে যন্ত্রের মাধ্যমে। এতে একদিকে যেমন সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাচ্ছে, অন্যদিকে খরচ কমায় খুশি কৃষক। প্রশমিত হয়েছে শ্রমিক সংকট। যান্ত্রিকীকরণের পর থেকেই ভুরুঙ্গামারীর কৃষি ক্ষেত্র ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেও সম্প্রতি নতুন গতিতে এগিয়ে  যাচ্ছে। 

বর্তমান কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল জব্বার যোগদানের পর  উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে।  তাঁর নেতৃত্বে ওয়ার্কশপ উন্নয়ন, নারী প্রশিক্ষণার্থীদের অংশগ্রহণ, চর এলাকার কৃষককে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, বন্যা সহনশীল জাতের ধান উৎপাদন, আধুনিক মেশিনারিজ সংযোজন, প্রণোদনার বীজ ও সার সঠিকভাবে বিতরণ চলছে। 

এছাড়া প্রকৃত কৃষকদের কাছে কৃষি উপকরণ বিতরণে  বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ, কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত কৃষি পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ এবং তাদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করন, পারিবারিক পুষ্টি বাগান তৈরি, পতিত জমি চাষের আওতায় আনা, ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরি, এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করন সহ সরকারের বিভিন্ন  উন্নয়ন সহায়তা কৃষকের মধ্যে সরবরাহের লক্ষ্যে তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলশ্রুতিতে এগিয়ে যাচ্ছে ভুরুঙ্গামারীর কৃষি। 

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুসারে, এ উপজেলায়  কৃষি ও গ্রামীন প্রকল্পের আওতায় ফুটপাম্প ১৫টি, পাওয়ার স্পেয়ার ১০টি, রিপার ১৫টি, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ১০টি, সমন্বিত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের অধীনে কম্বাইন হারভেস্টার ১০টি, রিপার বাইন্ডার ২টি, মেইজ সেলার ১টি, এসএসিপি রেইনস  প্রকল্পের গ্রাসরুট সার্ভিস সেন্টারে পাওয়ার টিলার ১টি, কম্পিউটার ১টি, থ্রি হুইলার ভ্যান ১টি, ওয়াটার পাম্প ১টি, ট্রলি ১টি, ময়েশ্চার মিটার ও সোহেল মিকচার পেকেটিং মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে। 

চলতি রবি মৌসুমে প্রণোদনার মাধ্যমে ২৯০০ জন সরিষা, ৯৫০ জন গম, ৮৫০ জন বোরো উফশী ধান বীজ এবং  ডিএপি ও এমওপি সার পেয়েছেন এবং ১৮০০ জন কৃষক হাইব্রিড ধান বীজ পেয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে আরও ৪১০ জন কৃষকদের মধ্যে মুগ, মসুর, চিনাবাদাম, মাসকলাই, অড়হড়, সূর্যমুখী, পিয়াজ, খেসারীর বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২৩ -২৪ অর্থ বছরে ১৮ হাজার ৪শ ৭৫ জন কৃষককে প্রণোদনা সহায়তা ও ২০২৪ -২৫ অর্থ বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬ হাজার চারা প্রদান করা হয়। 

জানা গেছে, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কয়েক বছর ধরেই মাঠে প্রবেশ করছে নতুন নতুন যন্ত্র। তবে গত বোরো মৌসুমে ধান ও গম কাটার জন্য কম্বাইন্ড হারভেস্টার এবং বর্তমানে রোপা আমন কাটার জন্য  রিপার একটি নতুন প্রযুক্তি। অল্প সময়ে যন্ত্রটি দিয়ে ফসল কাটার জুড়ি নেই। প্রচলিত পদ্ধতির বিপরীতে যন্ত্রটি ব্যবহারে খরচও কম। এর মাধ্যমে ধান কেটে কৃষকরাও পাচ্ছেন সুফলতা। এছাড়া হেলে পড়া ধানও কাটা যায়। জমিতে কিছুটা পানি থাকলেও যন্ত্রটি কার্যকর। এছাড়া এই যন্ত্র দিয়ে কাটা যায় গম। যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কাটা ধান বা গম ডান পাশে সরিবদ্ধভাবে পড়ে, যাতে সহজে আঁটি বাঁধা যায়। যন্ত্রটি স্থানান্তরেও রয়েছে সহজ সুবিধা। 

রিপার মেশিন ব্যবহারকারী জয়মনিহাট ইউনিয়নের ছোটখাটামারি এলাকার  নুরুজ্জামান জানান, আমার মেশিন দিয়ে ৩ থেকে ৪০০ টাকা খরচে মাত্র ১ ঘন্টায় এক বিঘা জমির ধান কাটা যায়। সাধারণত এক বিঘা জমির ধান কাটতে ২০০০ থেকে ২৪০০ টাকা লাগে। সময় এবং অর্থ বেঁচে যাওয়ায় দিন দিন মেশিন দিয়ে ধান কাটার চাহিদা বাড়ছে। এতে করে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন।

কম্বাইন্ড হারভেস্ট মেশিন ব্যবহারকারী ভুরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের মিরাজুল জানান, কৃষির আধুনিকায়নে দিন দিন বাড়ছে এসব মেশিনের চাহিদা। গত বছর ধান কাটার মৌসুমে বৃষ্টি থাকায় অনেক কৃষকের ধান পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল এই মেশিনের সাহায্যে শত শত মন ধান কেটে মাড়াই করে কৃষকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি। তখন আমরা কৃষকের চোখে মুখে যে খুশি আনন্দ দেখেছি তা আজও ভুলতে পারিনা। যদি এই মেশিন না থাকতো তাহলে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হতো এবং অনেক কৃষককে পথে বসতে হতো। 

তিনি আরো বলেন, এই মেশিন দিয়ে ধান, গম কাটা ও মাড়াইয়ে  জুড়ি নেই। মাত্র ২০ মিনিটে এক বিঘা জমির ধান, গম কাটা ও মারাই করা যায়। শ্রমিকের সাহায্যে এক বিঘা জমির ধান কাটা, বাড়িতে আনা এবং মাড়াই করা প্রর্যন্ত খরচ হয় ৪৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা। সেখানে কম্বাইন হারভেস্ট মেশিন ব্যবহারে খরচ হয় মাত্র দুই হাজার  টাকা।

উপজলার পাথরডুবি ইউনিয়নের  প্রত্যান্ত গ্রাম মইদাম ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বোরো, আউশ ও আমন- তিন মৌসুমেই ধানের আবাদ হয় ওই এলাকায়। ধানের চারা রোপনের সময় কষ্ট কম হলেও মাড়াইয়ের সময় বেশ পরিশ্রম করতে হয় নারীদের। 

ওই গ্রামের কিষাণী সালমা বেগম ও মাজেদা খাতুন বলেন, ‘একপাশ দিয়া চোখের নিমেষে ধানকাটা শেষ, অন্য পাশে গরগর শব্দে বস্তায় ধান ঢুকছে। মনে হয় জাদুর মেশিন। চঁহকুর পলকে কাম শেষ অয়া যায়"।

পাইকেরছড়া ইউনিয়নের বেলদহ গ্রামের আবু জায়েদ সিদ্দিকী  তার একটি ধান লাগানোর ট্রান্সপ্লান্টার রয়েছে। ট্রেতে চারা রোপন করেন তিনি। ট্রেতে থাকা চারা মেশিন দিয়ে লাগানোতে সময় কম লাগে। পরিশ্রম ও সময় কমে যাওয়ায় এক ফসল উঠে গেলে আরেক ফসলের জন্য জমি প্রস্তুত করার সময়ও কমেছে। এতে তিন ফসলের মাঝে সরিষার মতো অল্প সময়ে চাষ করা যায় এমন আরেকটা ফসলও করতে পারছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা সরওয়ার তৌহিদ জানান, শ্রমিক সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও কৃষি জমি হ্রাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কৃষি যান্ত্রিকীকরণে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের  মধ্যে সরকারের কৃষি প্রণোদনার বিভিন্ন ফসলের সার ও বীজ বিতরণে কাজ চলমান রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আব্দুল জব্বার  বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে  দিন দিন  ফসলের জমি কমছে, অপরদিকে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। সে কারণেই অধিক জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিকল্প নেই। উপজেলায় সরিষা ও সূর্যমুখীর চাষাবাদ বৃদ্ধি, পার্টনার ফিল্ড স্কুল স্থাপন সহ ভেজাল সার ও কীটনাশক শনাক্ত করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ধ্বংস করা চলমান রয়েছে।প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি আমরা কৃষকদের হাতে এসব প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। কৃষক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এখন মাঠেই প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ হচ্ছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com