শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: বাংলাদেশে এলো তারেক রহমানের বুলেটপ্রুফ গাড়ি, দাম কত?   হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা, মধ্যরাতে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স   নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন মনিরুল ইসলাম   লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীরের সঙ্গে ইউএই রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ    পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন   কেরাণীগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া   খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সেক্রেটারিয়েট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন'র দোয়া মাহফিল    
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
স্কুলে কমছে উপস্থিতি, কোচিং-বাণিজ্যে ঝুঁকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা
মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ৮:১২ পিএম

মতলব উত্তরের একটি বিদ্যালয়ে উপবিষ্ট অবস্থায় সকালে সমাবেশে অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা, হাজিরা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।

মতলব উত্তরের একটি বিদ্যালয়ে উপবিষ্ট অবস্থায় সকালে সমাবেশে অংশ নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা, হাজিরা কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।

চাঁদপুরের মতলব উত্তরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। একইসঙ্গে বিদ্যালয়ের বাইরে কোচিং বাণিজ্য ফুলেফেঁপে উঠেছে, যা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে অনীহা তৈরি করছে। এর সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে বাল্যবিবাহের উদ্বেগজনক প্রবণতা। এই তিনটি সমস্যা এখন উপজেলার সার্বিক শিক্ষা-পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মতলব উত্তরে ৪২ মাধ্যমিক ও  উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। যার মধ্যে চলতি শিক্ষাবর্ষে বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার কমছে। প্রধান কয়েকটি বিদ্যালয়ে আগের তুলনায় ১৫–২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে প্রতিদিন। স্কুল কর্তৃপক্ষ মনে করছে শিক্ষার্থীরা ভোরবেলা ও সন্ধ্যায় কোচিংয়ে অংশ নেওয়ায় ক্লান্ত হয়ে পড়ছে এবং নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত হতে আগ্রহ হারাচ্ছে। অনেকে আবার কোচিংকে ‘অবশ্য-পাঠ্য’ মনে করে স্কুল সময়কে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৪৯.৬০%।  ভোকেশনাল (কারিগরী) পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৬৫.১০%, এবং দাখিল পরীক্ষায় (মাদ্রাসা বোর্ড) পাশের হার ছিল ৪৯.৫১%।  জিপিএ-৫ (সর্বোচ্চ গ্রেড) পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা এসএসসিতে ৬৭ জন, ভোকেশনালে ১০ জন, দাখিলে ৪ জন। 
অন্যদিকে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় 

পাশের হার ২৩.০২%। আলিম (মাদ্রাসা বোর্ড) পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৫০.৬৩%। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ জন। যা  অন্যান্য বছরের তুলনায় পাশের হার খুবই কম। জীবগাঁও জেনারেল হক স্কুল অ্যান্ড কলেজেের থেকে এইচএসসি পরিক্ষায় মোট ১৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও একজনও পাস করতে পারেনি। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের পাসের হার শূন্য শতাংশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ কিছু শিক্ষক বিদ্যালয়ের সময়ের বাইরেও নিজস্ব বা ভাড়ায় নেওয়া কক্ষে কোচিং পরিচালনা করছেন। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্কুলে গেলে যা শেখে না, কোচিংয়ে তা শেখায় এমন ধারণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। ফলে স্কুলে যাওয়ার দরকারই বোঝে না অনেকে।

শিক্ষকরা দাবি করছেন অভিভাবকদের অনুরোধ এবং পরীক্ষামুখী শিক্ষার চাপ থেকেই কোচিং চালু হয়েছে। তবে তারা এটিও স্বীকার করেন যে অতিরিক্ত কোচিং শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত করছে।
এদিকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় বাল্যবিবাহের প্রবণতা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। উপজেলা প্রশাসন গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে। 

ফাতেমা বেগম নামে এক মা বলেন, মেয়েকে স্কুলে পাঠালেও ভয় থাকে রাস্তা নিরাপদ তো? আবার খরচও বাড়ছে। তাই অনেকেই আগেভাগে বিয়ের চিন্তা করে।

কয়েকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ না থাকা, শিক্ষার্থীদের অনিয়ন্ত্রিত মোবাইল ফোন ব্যবহার এবং স্কুল পরিবেশে সহপাঠ কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতাও উপস্থিতি কমার অন্যতম কারণ।
নাউরি আহমাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক একেএম তাইজুল ইসলাম বলেন, কেবল পড়াশোনার চাপ দিয়ে হবে না; বাচ্চাদের স্কুলে আগ্রহী করতে সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে যাওয়া এবং ফলাফল বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো ইংরেজিতে দুর্বলতা। তিনি বলেন, প্রায় সব শিক্ষার্থী ইংরেজিতে খারাপ ফল করেছে, কারণ প্রাথমিক স্তরে সঠিক ভিত্তি নেই এবং পড়ানোর পদ্ধতিও দুর্বল। বিজ্ঞান, গণিত ও রসায়নেও ফল হতাশাজনক। মোবাইল, ফেসবুক ও টিকটক আসক্তি ক্লাসে উপস্থিতি কমাচ্ছে এবং শিক্ষার প্রতি উদাসীনতা তৈরি করছে।

তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীরা ক্লাস এড়িয়ে যায়, মাদকাসক্তি বেড়ে চলেছে এবং বাল্যবিবাহ শিক্ষার ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় মেয়েদের পড়াশোনা চলাকালীন বয়সে বিবাহ বন্ধ করা জরুরি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমা এবং কোচিং, নির্ভরতা বাড়া এই দুটি বিষয় আমরা গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়গুলোকে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে কোনো শিক্ষককে স্কুলের সময়ের বাইরে কোচিং পরিচালনা করতে হলে নীতিমালা মানতেই হবে। প্রয়োজন হলে মোবাইল টিম পাঠানো হবে।

তিনি আরও বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষা অফিস, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করছে। বিশেষ করে নবম–দশম শ্রেণির মেয়েদের ঝরে পড়া রোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম, অভিভাবক সমাবেশ এবং স্কুলভিত্তিক কর্নার খোলা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন হবে।

উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে কোচিং-বাণিজ্যের ওপর নজরদারি বাড়ানো, নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং বিদ্যালয়-পর্যায়ে সচেতনতা সভা আয়োজনের কথা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে স্কুলে উপস্থিতি বাড়াতে বিশেষ কার্যক্রম শুরু করেছি। বাল্যবিবাহ বন্ধে ইউনিয়নভিত্তিক নজরদারি জোরদার করা হচ্ছে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com