
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় এ বছরও তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তুলার বাম্পার ফলনের আশা করছেন এই অঞ্চলের তুলা চাষী কৃষাণ-কৃষাণী। উৎপাদিত তুলার কাঙ্খিত বাজার দর পাবেন বলেও আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।
উপজেলার ঝিকরগাছা (এক) ও ঝিকরগাছা (দুই) দু'টি ইউনিটে বিভক্ত সাড়ে ৬'শ কৃষকের ৭'শ বিঘা জমি এবার তুলা চাষের আওতায় এসেছে। যা প্রতি বছর ক্রমবর্ধন হারে বাড়ছে। এবছর প্রতিবিঘা জমিতে আঁশতুলার গড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫/২০মন। প্রতিমন তুলার দাম ৪হাজার টাকা।প্রতি বিঘা তুলার গুণগতমান ও প্রকারভেদে স্থানীয় বাজারমূল্য হিসেবে যা দাড়াই ৬০/৮০হাজার টাকা।
যা কৃষকের মোট উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় দ্বিগুণ।
চলতি বছর উপজেলার দুটি ইউনিটে মোট তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮হাজার ৫'শ মন। সরকারি তরফে প্রণোদনা সহায়তায় তুলা চাষীরা বাড়তি লাভের আশা করছেন বলে কৃষকেরা জানান।
তুলা চাষীদের দাবি প্রণোদনা সহায়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসম্মত উৎপাদিত তুলার ন্যায্য বাজারমূল্য পেলে কৃষকেরা তুলাচাষে আরো উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হতে পারে।ফলশ্রুতিতে তুলা চাষের ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি ঘটতে পারে গোটা উপজেলাব্যাপী। এবছর উপজেলার নির্বাসখোলা ও পানিসারা ইউনিয়নের মাঠ জুড়ে তুলাচাষের ব্যাপকতা লক্ষ্য করা গেছে। রঘুনাথনগর,মহিনিকাটি, বর্ণি,বেজিয়াতলা, টাওরা,পানিসারা, শিওরদা,গাবুরাপুর ও আশিংড়ি এলাকায় আঁশতুলার ব্যাপক চাষাবাদ লক্ষ্য করা গেছে। সফল তুলাচাষী আয়নাল হক,জিন্নাত হোসেন, মনিরুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম,আব্দুল আলিম,শাহিনুর রহমান ও শাহানুর রহমান জানান, এবছর তুলার কাঙ্খিত উৎপাদনে দারুন খুশি।
তুলাচাষে সংশ্লিষ্ট ইউনিট প্রধান ওহিদুজ্জামান ও এস এম আসাদুজ্জামানের মতে, উপজেলার দুটি ইউনিটে বড় তুলা চাষীর সংখ্যা প্রায় ১০০জন,মাঝারি ৫০ ও ছোট বা প্রান্তিক চাষির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫'শ জন।
অভিন্ন মতামত জানিয়েছেন, বাংলাদেশ কটন জিনার অ্যাসোসিয়েশন যশোর জোনের ফিল্ড অফিসার মোহাম্মদ তারেক রেজা পলাশ। তিনি এতদাঞ্চলে তুলা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলেন,
সহযোগিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তুলা চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান জরুরী।
কটন জিনার এসোসিয়েশন যশোর জোনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঝিকরগাছার হৈবত জিনিং ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী মো: হাবিবুর রহমান মন্টু তুলা চাষীদের উৎপাদিত তুলার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, দেশে প্রায় ৮৫লাখ বেল তুলার বার্ষিক চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে উৎপাদিত তুলার গড় উৎপাদন মাত্র ২লাখ বেল। দেশের বস্ত্রশিল্পের অন্যতম কাঁচামাল এই আঁশতুলার বিপুল ঘাটতি মেটাতে আমদানি নির্ভর হতে হয়। গুনতে হয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। অথচ তুলাচাষের সম্ভাবনাময় দেশের উর্বর মাটিতে তুলা চাষের সম্প্রসারণ ঘটানো গেলে আমদানি নির্ভরতা বহুলাংশে কমানো যেতে পারে। সাশ্রয় ঘটতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা। এমনটাই মতামত প্রকাশ ও আশারবাণী শোনালেন তুলাচাষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।