
গত ২৫ অক্টোবর মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নদী ও সাগরে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে গেলেও ভোলার জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। জালে ধরা পড়ছে পাঙাশ, কোরাল, চিংড়ি, আইর, বোয়াল, পোয়াসহ অন্যান্য মাছ। জেলেদের জালে ইলিশের শূন্যস্থান পূরণ করছে এসব মাছ।
সরেজমিনে সদরের মেঘনা নদী তীরবর্তী কাচিয়া কাঠিরমাথা মাছঘাট, ধনিয়া তুলাতুলি মাছঘাট ও শিবপুরের ভোলারখাল মাছঘাট সংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো জেলে জাল-ট্রলারসহ মাঝিমাল্লা নিয়ে নদীতে ইলিশ শিকারে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নদী থেকে মাছ ধরে তা বিক্রির জন্য নদী তীরবর্তী আড়ৎগুলোতে নিয়ে আসছেন। যার অধিকাংশই পাঙাশ, কোরাল, চিংড়ি ও পোয়া। এসব মাছ জেলেরা আড়তে নিলামে বিক্রি করার পর খরচের হিসেবে মিলিয়ে কেউ হতাশ, আবার কারও মুখে হাসি ফুটছে।
আড়তে বড় সাইজের প্রতি কেজি কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকা, পাঙাশ ৭৫০, আড়াইশ গ্রামের প্রতি কেজি চিংড়ি ১৩৫০ টাকা, আইড় ১৩০০ টাকা, বড় সাইজের বোয়াল ১১-১২০০ টাকা প্রতি কেজি। ৫-৬০০ গ্রামের প্রতিকেজি ইলিশ ১৭-১৮০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রামের ২১৫০ টাকা, ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি সাইজের ২৫৫০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের প্রতিকেজি ইলিশ ৩৫০০ টাকা।
নদী থেকে মাছ ধরে তা আড়তে এনে বিক্রির পর টাকা গুনছেন মাঝি রফিক ও জামাল। এরপর বসলেন খরচের হিসাব মেলাতে। জানতে চাইলে তারা দুজন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদীতে মাছ ধরায় ২২ দিনের সরকারি অভিযান শেষ হইছে। ওই সময় আমরা পুরোপুরি বেকার ছিলাম। অভিযান শেষ হওয়ার পর গত কয়েকদিন গাঙ্গে (নদীতে) গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছি না। তবে পাঙাশ, কোরাল ও আইরসহ অন্যান্য মাছ কিছু পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তা বিক্রি করে কোনোমতে খরচ উঠানোর চেষ্টা করছি। নদীতে মাছ ধরা ছাড়া অন্যকোনো কাজও জানি না। বাধ্য হয়েই নদীতে যেতে হয়।
তারা আরও বলেন, ৪-৬ জন মাঝিসহ রাতের ৩টা বাজে গাঙ্গে গিয়ে জাল ফেলছি। ট্রলারের তেলসহ প্রায় ১৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। ৫ পিস ছোট ইলিশ ও ৪ কেজি ওজনের একটা পাঙাশ পেয়েছি। আড়তে এনে বিক্রির পর সব মিলিয়ে সাড়ে ৩ হাজার টাকা পেয়েছি। মোটামুটি জেলেদের হাতখরচ দিতে পারব।
মো. খলিল ও মোশাররফ মাঝি বলেন, আসলে মূল কথা হচ্ছে আমরা নদীতে যাই ইলিশ ধরার আশায়। বড় সাইজের ১ হালি ইলিশ পেলেই হয়। কিন্তু বড় সাইজের ইলিশ তো দূরের কথা ছোট সাইজের ইলিশও তেমন পাই না। বছরের শুরু থেকে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় গত ছরের দেনা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। বছর শেষ হতে যাচ্ছে, জানিনা শোধ করতে পারব কি না। সামনের দিনে যদি কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাই তাহলে দেনা রয়েই যাবে। কবে থেকে আবারও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাব তাও জানা নেই।
তুলাতুলি মাছঘাটের আড়ৎদার ইমতিয়াজ আহমেদ নাসিম ও ভোলারখাল মাছঘাটের আড়ৎদার মো. সুমন বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন ২২ দিন জেলেরা বেকার ছিল, আমাদের আড়ৎও বন্ধ ছিল। কিন্তু অভিযান শেষে জেলেরা নদীতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাচ্ছে না। মোকাম থেকে দাদন এনে জেলদের দিয়েছি। ইলিশ পাঠানোর জন্য মোকাম থেকে চাপ দিচ্ছে। আশানুরূপ ইলিশ মোকামে পাঠাতে পারছি না। নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় জেলেদের আমরা চাপও দিতে পারছি না। আমরা সব দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।