শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: বাংলাদেশে এলো তারেক রহমানের বুলেটপ্রুফ গাড়ি, দাম কত?   হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা, মধ্যরাতে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স   নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন মনিরুল ইসলাম   লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীরের সঙ্গে ইউএই রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ    পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন   কেরাণীগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া   খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সেক্রেটারিয়েট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন'র দোয়া মাহফিল    
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে
#জলাশয়,জলাভূমি রক্ষার কথা কিন্তু তা গুরুত্ব পাচ্ছে না #পরিবেশের সাথে নারীর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর
আরিফুর রহমান
প্রকাশ: সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫, ১০:১০ পিএম

বিশ্বে নানা কারণে জলবায়ুর পরিবর্তন অতি দ্রুত ঘটছে। এর বিরূপ প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ছে নারী ও শিশুর ওপর। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন শিশু ও নারী স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। কোনো নির্দিষ্ট স্থানের সুদীর্ঘ সময়ে, সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার গড় বা সামগ্রিক অবস্থার হিসাবকে জলবায়ু বলে। সাধারণত বৃহৎ এলাকাজুড়ে জলবায়ু নির্ণীত হয়ে থাকে। জলবায়ুর পরিবর্তন আবহাওয়া পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। কোনো স্থানের আবহাওয়ার পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ঘটনা।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, সেগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এদিকে গত বর্ষা মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাপকতা ছিল চরম ও নজিরবিহীন। বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে গত ৩৪ বছরের মধ্যে আঘাত হানা ভয়াবহ বন্যায় ৫৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ২০ লাখেরও বেশি শিশু। এই দুর্যোগে অনেক শিশু তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছে। আরো হারিয়েছে ঘরবাড়ি, বিদ্যালয়। বিনষ্ট হয়েছে ফসল, গবাদিপশু ইত্যাদি। 

বন্যার পানি শিশুদের জীবনকে এলোমেলো করে দিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় পর পানি নেমেছে। এর ফলে তাদের ঘর-বাড়ি নষ্ট হয়েছে। স্কুলগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত হয়েছে। 
মাঠের ফসল তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে মা ও নবজাতকের জীবন রক্ষার জন্য জরুরি সব চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট হয়েছে। 

পানিবন্দি অবস্থায় খাদ্য সংকট, যাতায়াত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা দুর্লভ হয়ে পড়ে। ফলে জরুরি প্রসূতি সেবা ব্যাহত হয়েছে। অধিকহারে শিশু পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। 

শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুটো প্রভাবই পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারাবিশ্বে বিদ্যমান রোগের ৮৮% পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে সম্পর্কিত। 

যে সকল কারণে জলবায়ু পরিবর্তন হয় তার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, কলকারখানা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, মিল ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া, যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া, ইট ভাটার কালো ধোঁয়া যা মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ করছে, গাছ কাটার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবে মেরু অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। যার ফলে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। গাছপালা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। জীবন ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এছাড়া  নদীর ওপর অবৈধ স্থাপনা তৈরির ফলে নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছে, বস্তির অস্বাস্থ্যকর খোলা পায়খানা যা পানিতে মিশে পানি মারাত্বকভাবে দূষিত করছে, কলকারখানার ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য যা পানিতে গিয়ে মিশে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে, ময়লা আবর্জনার স্তূপ পরিবেশ দূষিত করছে।

বৈশ্বিক স্তরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন রোগ, অক্ষমতা এবং উচ্চ মৃত্যু হার দেখা যায়। একটানা বায়ু দূষণের মধ্যে থাকলে শিশুর জন্মের সময় ওজন কম হয়, গর্ভকালীন অবস্থায় ছোটো আকার (এসজিএ), এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই শিশুর জন্ম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুরা বায়ু দূষণের সংস্পর্শে থাকলে, তাদের হাঁপানি রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। যার কারণে হাঁপানিতে আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসনালিতে অক্সিডেটিভ চাপ ও শ্বাসনালি প্রদাহ বৃদ্ধি পায়। বায়ুদূষণ একটি শিশুর স্নায়ুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। 

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করতে হবে। তবে নিম্নলিখিত কাজগুলো করলে বায়ু দূষণ কিছুটা হ্রাস করা সম্ভব হবে, যেমন, বেশী করে গাছ লাগাতে হবে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তেল, গ্যাস, কয়লার মতো অনবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার না করে সৌর শক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়াতে হবে, উইন্ডো টারবাইন ব্যবহার করে বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ও সোলার প্যানেলের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে, পরিবেশ বান্ধব কলকারখানা তৈরির প্রস্তাব করতে হবে। পানি শোধনাগারের মাধ্যমে কলকারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর বর্জ্য ও পানি শোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নদীতে ফেলতে হবে, বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করে সকল বর্জ্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় গ্যাস তৈরি করে গৃহস্থালি বৈদ্যুতিক চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। অবশিষ্টগুলো জৈব সার হিসেবে চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করা যাবে।

বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বায়ুদূষণ হ্রাস করা খুবই কঠিন। তারপরও উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করলে বাংলাদেশ তথা বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করা সম্ভব হবে। এ জন্য প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি।

পরিবেশ দিবস: এদিকে পরিবেশ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশু।

তারা জানিয়েছেন, “বর্তমান সময়ের প্রতিবেশ ও পরিবেশগত  বড় বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণে নারীর ঐতিহাসিক ভূমিকা থাকলেও পরিবেশগত বিপর্যয় ও জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শিকার হচ্ছেন নারী ও শিশু। তাছাড়া বর্তমানে ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাভূমি ও উন্মুক্ত স্থান হ্রাস এবং শহরমুখী জনস্রোতের কারনে পরিবেশগত দূষণ, শব্দ দূষণ ও অস্বাভাবিক মাত্রায় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নারী ও শিশুরা বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। কম ওজনের শিশুর জন্ম হচ্ছে, অকাল প্রসব ও  নবজাতকের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নবনীতা ইসলাম নামে একজন গবেষক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি উত্তরণে জলবায়ু কর্মপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন, সরকারের নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন, জলবায়ু কর্মপরিকল্পনার মধ্যে বিভিন্ন কর্মকৌশল গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী। 

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন নারীরা। পরিবেশের সাথে নারীর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে একেক স্থানের আবহাওয়ায় ভিন্নতা রয়েছে। ঢাকার পরিবেশ অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে, যা নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব তৈরি করছে। জলবায়ুগত পরিবর্তনে নারীরা অতিরিক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, ডেংগুতে নারীদের আক্রান্ত হওয়ার হার কম হলেও তাদের মৃত্যুহার বেশি।  নগরায়নের যে ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে তা বিধ্বংসী নগরায়ন। জলাশয়, জলাভূমি রক্ষার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও তা গুরুত্ব পাচ্ছে না। নগরের সকল পরিবেশগত বিপর্যয় রোধ করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি প্রকৃতির আইনকে মেনে চলতে নগর ব্যবস্থাপকদের প্রতি তারা আহ্বান জানান।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com