
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর জেলায় চতুর্থ দিনের মতো দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাস মালিক সমিতি হঠাৎ দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয়। এর ফলে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বিঘ্নিত হয়। এর আগে চলতি মাসে শ্রমিকরা দুই দফায় কর্মবিরতি পালন করেছিলেন।
যাত্রীরা বলছেন, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বাস বন্ধ করায় তাঁদের নাজেহাল হতে হচ্ছে। অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে প্রাইভেট কার বা ছোট গাড়ি ভাড়া করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে সময় ও খরচ দুটোই বেড়ে যাচ্ছে।
ঢাকাগামী যাত্রী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার জরুরি কাজে ঢাকায় যেতে হবে। ট্রেনের টিকিট পাইনি, বাসও বন্ধ। এখন ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।
সিরাজগঞ্জগামী যাত্রী আমিরুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সরাসরি ঢাকার বাস নেই। সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। এতে খরচ যেমন বাড়ছে, তেমনি ভোগান্তিও।
রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রায় এক যুগ পর চালক ও শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। চালকদের প্রতি ট্রিপে ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে মালিকপক্ষ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সেই ভাতা দিচ্ছেন না। বরং তারা বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।
অন্যদিকে বাস মালিকরা অভিযোগ করছেন, শ্রমিকরা যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলতে চাইছেন এবং খোরাকি ভাতা দাবি করছেন। এতে যাত্রী হয়রানির পাশাপাশি ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে। এসব কারণে নতুন করে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ বাস–ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর রহমান রতন বলেন, যেখানে সেখানে যাত্রী তোলা হলে পরিবহন ব্যবসা টিকবে না। এ বিষয়েই বিরোধ তৈরি হয়েছে।
চতুর্থ দিনেও কিছু বাস চলতে দেখা গেছে। তবে হানিফ, দেশ, ন্যাশন্যালসহ বেশিরভাগ জনপ্রিয় পরিবহন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।
এদিকে উত্তরবঙ্গ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব নজরুল ইসলাম জানান, আজ বেলা ১২টায় রাজশাহীতে মালিক–শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক চলছে। সেখানেই সমাধান বের হতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইদুর রহমান বলেন, ঢাকার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে বেতন বৃদ্ধির বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত কার্যকর না করে একতরফাভাবে বাস বন্ধ করে দিয়েছে। যত্রতত্র যাত্রী তোলার অভিযোগও ভিত্তিহীন।
এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর বেতন-ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে প্রথম দফায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। মালিকদের আশ্বাসে তারা ফের কাজে ফিরে গেলেও ২২ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও বাস বন্ধ করে দেন। এরপর মালিক–শ্রমিক দ্বন্দ্ব নতুন করে তীব্র আকার ধারণ করেছে।
টানা চতুর্থ দিনের মতো দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় উত্তরাঞ্চলের পরিবহন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়েছেন, তেমনি অর্থনৈতিক ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছে পরিবহন খাত। আজকের বৈঠকে সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।