
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ এড়াতে আরো ৯০ দিনের জন্য শুল্কবিরতির সময়সীমা বাড়িয়েছে। এর ফলে বছরের শেষভাগের গুরুত্বপূর্ণ ছুটির মৌসুমকে সামনে রেখে মার্কিন খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে জানান, তিনি একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। যাতে আগামী ১০ নভেম্বর ভোর ১২টা ০১ মিনিট (ইস্টার্ন স্ট্যান্ডার্ড টাইম) পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত থাকবে এবং বিরতির অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও মঙ্গলবার সকালে সমান সময়ের জন্য অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে এবং গত এপ্রিল মাসে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করার জন্য যেসব মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তাদের ওপর পদক্ষেপ নেওয়া বিলম্বিত করে।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কে পারস্পরিক বাণিজ্য সুবিধার অভাব এবং এর ফলে সৃষ্ট জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবিলায় চীনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।’
এই শুল্কবিরতি মঙ্গলবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। নতুন সিদ্ধান্তে তা নভেম্বরের শুরুর দিকে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা ক্রিসমাস মৌসুমের ইলেকট্রনিক্স, পোশাক, খেলনা ইত্যাদি আমদানি কম শুল্কে করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ এনে দিবে।
নতুন আদেশের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীনা পণ্যের শুল্ক ১৪৫ শতাংশে এবং চীনের মার্কিন পণ্যের শুল্ক ১২৫ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কমেছে—যা কার্যত দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করত। আপাতত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনা আমদানির ওপর ৩০ শতাংশ এবং চীন মার্কিন পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছে।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এ সিদ্ধান্তে স্বস্তি দেখা যায়। ৩৯ বছর বয়সী রোবোটিক্স পেশাজীবী ওয়াং মিংইয়ু বলেন, ‘আমার মনে হয় না চীন বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই সম্পর্কের অবনতি দেখতে চায়।
তবে এই খেলা এবং মুখোমুখি অবস্থান হয়তো এখানেই শেষ নয়—এখনও ঝুঁকি রয়ে গেছে।’
ট্রাম্প গত সপ্তাহে সিএনবিসিকে জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্য চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছেছে এবং চুক্তি হলে বছরের শেষের আগে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। দুই দেশ গত মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আলোচনার পর ৯০ দিনের জন্য শুল্কবিরতির ঘোষণা দেয়। জুলাইয়ের শেষ দিকে সুইডেনের স্টকহোমে পুনরায় বৈঠক হয় এবং মার্কিন আলোচকরা ট্রাম্পকে সময়সীমা বাড়ানোর সুপারিশ নিয়ে ফেরেন।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বারবার বলেছেন, বসন্তে আরোপিত শতকরা তিন অঙ্কের শুল্ক দুই দেশের জন্যই অগ্রহণযোগ্য এবং তা কার্যত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার সমান।
ট্রাম্প রবিবার চীনকে সয়াবিন আমদানি চারগুণ বাড়ানোর দাবি জানান। যদিও বিশ্লেষকরা এর বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। চীন উচ্চ প্রযুক্তির পণ্য কেনার সুযোগ চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র সে বিষয়ে অনিচ্ছুক। এ ছাড়া ফেন্টানিল পাচারের কারণে ট্রাম্প ২০ শতাংশ শুল্ক কমাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
চীনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ২১.৭ শতাংশ কমেছে, তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রপ্তানি ১৬.৬ শতাংশ বেড়েছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য বলছে, জুনে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে বিকল্প বাজার খোঁজা উভয়ের জন্যই অনুকূল নয় বলে দুই বৃহত্তম অর্থনীতি শিগগিরই চুক্তিতে পৌঁছাবে।
প্রাক্তন মার্কিন বাণিজ্য কর্মকর্তা রায়ান মাজেরাস বলেন, ‘এতে অবশ্যই উভয় পক্ষের উদ্বেগ কমবে এবং শরতের মধ্যে একটি কাঠামোগত চুক্তির দিকে এগোনোর সুযোগ তৈরি হবে।’ এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করার জন্যও চাপ দিচ্ছে এবং ট্রাম্প এ বিষয়ে চীনের ওপর দ্বিতীয় পর্যায়ের শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।