প্রকাশ: শুক্রবার, ৬ জুন, ২০২৫, ৬:৪৭ পিএম

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) চার বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল বৃহস্পতিবার এক লিখিত বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বিবিসি, আল-জাজিরাসহ অন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রও এর মিত্রদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও অবৈধ পদক্ষেপ নেওয়ার অভিযোগে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কো রুবিও। বিবৃতিতে রুবিও বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এখন আর নিরপেক্ষ নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তারা ভুলভাবে দাবি করছে যে, তাদের এমন সীমাহীন ক্ষমতা আছে, যার মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো তদন্ত ও বিচার চালাতে পারে। এই বিপজ্জনক দাবি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের মিত্রদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।’ এই মিত্রদের মধ্যে যে ইসরায়েলও অন্তর্ভুক্ত—তাও বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ওই চার বিচারক হলেন—উগান্ডার বালুঙ্গি বোসা, পেরুর লুজ ডেল কারমেন ইবানেজ, বেনিনের রেইনি আদেলাইদে সোফিয়া আলাপিনি গানসোউ এবং স্লোভেনিয়ার বেতি হোলার। নিষেধাজ্ঞার ফলে ওই বিচারকদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সম্পত্তি ও আর্থিক সম্পদ জব্দ করা হবে। একই সঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন করতে পারবে না। এই লেনদেনের মধ্যে অর্থ, পণ্য বা সেবা প্রদানও অন্তর্ভুক্ত।
তাৎক্ষণিকভাবে ওই চার বিচারকের পাশে দাঁড়িয়েছে আইসিসি। তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের। এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে আইসিসি বলেছে, ‘এই পদক্ষেপগুলো একটি আন্তর্জাতিক বিচারিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতাকে দুর্বল করে দেওয়ার স্পষ্ট চেষ্টা। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বিশ্বের ১২৫টি সদস্য রাষ্ট্রের ম্যান্ডেট অনুযায়ী পরিচালিত হয়। যারা জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছেন, তাদের লক্ষ্যবস্তু বানালে সংঘাতের ফাঁদে আটকে থাকা সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হয় না। বরং, আগ্রাসী শক্তিতে আরও সাহস জোগায়। শাস্তির ভয় ছাড়া যেকোনো কিছু তারা করতে পারে—এমন অভয় দেওয়া হয় তাদের।’
একটি তথ্যপত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ব্যাখ্যা করেছে যে,২০২০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্ত অনুমোদনের দেওয়ার কারণে বিচারক বোসা এবং ইবানিয়েজ কারানজাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। সেটি ছিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময়। এর আগে আইসিসি আফগানিস্তানে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে তদন্তের আবেদন খারিজ করেছিল। তবে, পরের বছর আদালত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে।
একজন প্রসিকিউটরের অনুরোধে আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন গোপন বন্দিশিবিরে মার্কিন সেনা ও সিআইএ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তের অনুমোদন দেওয়া হয়। আদালত উল্লেখ করে, রোম সংবিধির সদস্য রাষ্ট্র হওয়ায় আফগানিস্তানে বিচারিক ক্ষমতা রাখে আইসিসি। তবে তখনকার ট্রাম্প প্রশাসন এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে এবং আইসিসিকে ‘আইনি সংস্থার ছদ্ম নিয়ে থাকা একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান’ বলে আখ্যায়িত করে।