বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়ার পথ দেখিয়ে দিলেন ড. ইউনূস

শেখ হাসিনা আমলের বিপুল অর্থ পাচার এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের হুমকির মধ্যে দেশের অর্থনীতি কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেই পথ বাতলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরই মধ্যে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এবার দুর্নীতি মামলায় আওয়ামী লীগ ও এর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের জব্দ করা সম্পদ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য ও তরুণদের জন্য ব্যয়ের কথা শোনা গেল ইউনূসের মুখে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, জ্বালানি তেল এবং গ্যাস আমদানি বাড়ানো হবে বলে জানালেন তিনি। জাপানের সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব বিষয় উঠে এলো।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সম্প্রতি ইউনূস একজন ছাত্রনেতাকে জানিয়েছিলেন যে, যদি দলগুলো সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্যে না পৌঁছায়, তবে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে এ প্রশ্নের উত্তর দিইনি। যদি জাপানে উত্তর দিই, তাহলে সেটি আমার জন্য অনেক ঝামেলার সৃষ্টি করবে।’
‘নিক্কেই ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনের ফাঁকে সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর সম্ভাব্য ৩৭ শতাংশ শুল্কের হুমকি দিয়ে রেখেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা থেকে আরও বেশি তুলা, জ্বালানি তেল ও গ্যাস কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এই প্রস্তাবকে বাণিজ্য আলোচনার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করা হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেহেতু প্রতিটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান। সে প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, যদি এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ থেকে এসব পণ্য আমদানির পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করবে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা অনেক তুলা সেন্ট্রাল এশিয়া থেকে কিনি, আবার ভারত থেকেও। এখন ভাবছি, আমরা এগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনব। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি অনেকটা কমবে।
তিনি বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৬৮০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং আমদানি করেছে ২৫০ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে ৩৬ কোটি ১০ লাখ ডলারের তুলা আমদানি ছিল।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জন্য প্রতিবছর প্রায় ৭৯০ কোটি ডলারের কাঁচা তুলা প্রয়োজন। এর বেশির ভাগ আসে উজবেকিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের মতো সেন্ট্রাল এশিয়ান দেশগুলো থেকে। ২০২৪ সালের আমদানি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তুলা বাংলাদেশের মোট আমদানির ১২.৫ শতাংশ ছিল।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমেরিকার তুলা উৎপাদকরা আমাদের খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে’ এবং তারা ‘প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের কিছু রাজনৈতিক সংযোগ’ তৈরিতে সহায়তা করছে।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকার ‘কটন বেল্ট’ অঞ্চলের রাজ্যগুলো থেকে কংগ্রেস এবং সিনেটে যেসব প্রতিনিধি নির্বাচিত হন, তারা বাংলাদেশের বন্ধু হতে পারেন।
জ্বালানি বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল আমদানি করলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তা কেনা সম্ভব।
যদিও বাণিজ্য আলোচনার সময়সূচি বা শুল্ক কতটা কমবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবু তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা একে হুমকি হিসেবে দেখি না। বরং সুযোগ হিসেবে দেখি।’
এদিকে, মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত গত বুধবার ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শুল্ক কার্যকরের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। আদালত রায় দিয়েছেন, সংবিধান অনুসারে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কংগ্রেসের। প্রেসিডেন্ট একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
দেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রায় ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে থাকা আরও ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সম্পদ শনাক্ত ও জব্দ করা হয়েছে। এ অর্থের মাধ্যমে বর্তমান সরকার দুটি সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে। এ টাকা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হবে। এ ছাড়া দরিদ্র জনগণের জীবন বদলাতে এবং তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে ব্যবহৃত হবে।