
রাজশাহীতে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ সদস্যসহ চারজন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো ছাড়াও তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যায় শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ চলে কয়েক দফা।
আহতরা হলেন- নগরের দড়িখড়বোনা এলাকার বাসিন্দা ও রাজশাহী মহানগর মহিলা দলের সহ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক লাভলী খাতুন, তার আড়াই বছর বয়সী শিশুকন্যা লামিয়া (৩), সিটিএসবি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন (৪২) ও রেলওয়ের কর্মচারী মোহাম্মদ রনি। পথচারী রনি ও সিটিএসবির সদস্য তোফাজ্জল ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। আর মহিলা দলের নেত্রী লাভলীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় শিশুকন্যাসহ তিনি আহত হন। আহতদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে যান লাভলী।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, মারামারির ঘটনায় কয়েকজন আহত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে সংঘর্ষের সময় দড়িখড়বোনা এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। এতে আজকের পত্রিকার রাজশাহীর মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার জাহিদ হাসান সাব্বিরের মোটরসাইকেলটি পুড়ে যায়। সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনে গিয়ে সড়কের পাশে রাখা মোটরসাইকেলটি একটিপক্ষ আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে কাদিরগঞ্জ এলাকায় একটি বহুতল ভবন ঘেরাও করেন মহিলা দল নেত্রী লাভলীসহ তার অনুসারীরা। এই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে পরিবারসহ থাকেন নগরের বোয়ালিয়া (পশ্চিম) থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ বাবু ওরফে ব্যাটারি বাবু। আওয়ামী সরকারের পতনের পর ব্যাটারি বাবু ও তার ভাই সাব্বির বাবুর বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে মামলা রয়েছে।
ওই ভবনের সামনে লাভলী দাবি করেন, তারা ভবনের ভেতরে আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদ বাবুকে ঢুকতে দেখেছেন। তারা ভবনটি ঘিরে রাখলে যৌথ বাহিনী অভিযানে আসে। ঐদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভিযান চালিয়ে ওই ভবনে মোস্তাককে পাওয়া যায়নি। যদিও ভবনের নিরাপত্তা প্রহরীর খাতায় প্রবেশকারী হিসেবে মোস্তাকের নাম দেখা যায়। মোস্তাককে না পেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভবনটি ঘিরে রাখে। পরে সেখান থেকে মোস্তাক আহমেদের ভাই সাব্বির বাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
স্থানীয় সূত্র বলছে, মোস্তাক আহমেদ বাবুকে না পাওয়ার জন্য মহিলা দল নেত্রী লাভলী সাবেক যুবদল নেতা মারুফ হোসেন জীবনকে দায়ী করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মারুফের লোকজন সন্ধ্যায় দড়িখড়বোনা এলাকায় লাভলীর বাড়িতে হামলা করেন। তারা বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে চলে গেলে লাভলীর অনুসারীরা দড়িখড়বোনা রেল লাইনের পাশে মারুফের ব্যক্তিগত কার্যালয় ভাঙচুর করেন। এরপর দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে দড়িখড়বোনা, উপশহর মোড়, রেলগেট, সপুরা ও শালবাগান এলাকায়। এসময় কয়েকটি হাতবোমারও বিস্ফোরণ হয়।
বিষয়টি নিয়ে মারুফ হোসেন জীবনের মোবাইলে ফোনে কল করা হলে সনি নামে এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেন, লাভলীর ভাই তাঁতী লীগ আর ছেলে যুবলীগ করত। তাদের ধরার জন্য ছাত্রদলের ছেলেরা গিয়েছিল। তারপর মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।