মো. সাজেদুল হক সাজু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাচোলে অর্থনৈতিকভাবে আধুনিক কৃষকদের সাবলম্বী করার দ্বার উন্মোচিত কার্পাস তুলার চাষে। বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় এখানকার মাটি ও আবহাওয়া কার্পাস তুলা চাষের উপযোগী। বরেন্দ্র অঞ্চলে চলতি বছর বিভিন্ন জায়গায় বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে কার্পাস তুলা চাষ। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান চাষাবাদে দেখা দিয়েছে পানি সংকট। আর ধান চাষের বিকল্প ফসল হিসেবে পরিচিত কার্পাস তুলা চাষ।
আবাদ হীন পতিত জমি, উঁচু জমি, এমনকি আম বাগানের সঙ্গে আন্ত ফসল হিসেবে কার্পাস তুলা চাষ করে সফল হচ্ছেন চাষিরা। অন্য ফসলের চেয়ে উৎপাদন খরচ কম হওয়ার কারণে এবং ফলন ভালো হওয়ায় তুলা চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
চাষিরা বলছেন, কম সেচ ও বৃষ্টির পানিতে কাজ হওয়ায় তুলা চাষ অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভজনক। উৎপাদিত তুলা বাজার দর ভাল থাকায় লাভবান তারা।
রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ, জেলার বরেন্দ্র অঞ্চল প্রায় ৫শ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে কার্পাস তুলা। বিনা সেচে কিভাবে তুলা উৎপাদন করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে চাষিদের সঙ্গে কথা জমানায়, এই অঞ্চলে উঁচু জমিতে সেচ সংকটে ধান ও সবজি চাষের প্রবণতা কমে গেছে। সেখানে দিনদিন তুলা চাষে আগ্রহ কৃষকদের মধ্যে।
গবেষকরা বলছেন, এই অঞ্চলে ধান চাষাবাদে ২০-২২ বার সেচের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আগাম কার্পাস তুলা চাষের ক্ষেত্রে, আষাঢ় মাসের বৃষ্টির পানিতে বীজ বপণ করে অগ্রহায়ণ মাসে তুলা ঘরে তোলা যায়। এতে একটা সেচে দিলেই হয়ে যায়।
নাচোল উপজেলা কাজলা গ্রামের চাষি মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রায় ১০ বছর থেকে কার্পাস তুলা চাষ করেছেন। তার জমিতে এক সময় ধান ও বিভিন্ন শাক সবজি চাষ হত। তবে গোভির নলকূপের পানি উঠা কমে যাওয়ার জন্য তিনি বিকল্প ফসল হিসেবে কার্পাস তুলা চাষ করেছেন। তিনি ১০-১২ বিঘা জমিতে প্রতি বছর তুলা চাষ করেন।
ফলন ও খরচ বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, বিঘা প্রতি তুলার ফলন হয় ১২ থেকে ১৫ মণ। বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ ১০-১২ হাজার টাকা। তুলা বিক্রি করে আয় করা য়ায় প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
নাচোল উপজেলা আখিরা গ্রামের কৃষক বাইরুল ইসলাম বলেন দিনদিন গোভীর নলকূপে পানি কম উঠায় ধানসহ অধিক সেচ সম্বলিত ফসল চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ছে এ অঞ্চলে। তাই তিনি ধানের পরিবর্তে আম বাগান করেছিলাম৷ এরপর তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অফিসাররা যোগাযোগ করে আমার সঙ্গে। আমগাছের সাথে কার্পাশ তুলা চাষের পর্মরশ দেয়। প্রশিক্ষণে দেওয়া পর বীজসহ অন্যান্য উপকরণ প্রদান তুলা উন্নয়ন বোর্ড। এ বছর প্রায় তিন বিঘা জমিতে আম বাগানের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে কার্পাস তুল চাষ করেছি। অন্য ফসলের চেয়ে তুল চাষে পরিচর্যা কম, রোগবালাই লাগ। ইতি মধ্যে একবার তুলা উত্তোলন করেছি। ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর তুলার দাম ভালো আছে বলে জানান তিনি।
একই উপজেলা কাজলা গ্রামের কৃষক মাদুস রানা। তিনি জন্মলগ্ন থেকে কৃষি কাজের সঙ্গে জাড়িত। নাচোল উপজেলা বরেন্দ্র অঞ্চলের উঁচু জমি হওয়ার কারণে সবধরনের ফসল চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না। তাই মাঠে অন্য জনের দেখে তিনিও কয়েক বছর থেকে শুরু করেছে তুলা চাষ। মাসুদ রানা বলেন তুলা চাষ, কম উর্বরতা জমিতে করা যায়। এবং পানি কম লাগে। কার্পাস তুল সঙ্গে, অন্য ফসল চাষাবাদ করা যায়। চলতি মৌসুমে মাসুদ রানা, ১০ বিঘা জমি কার্পাস তুল চাষ করেছেন। তিনি বলেন আমার জমিতে এবছর তুলার ফলন ভালো হয়েছে। ধান চাষ করলে এমন লাভ হত না। তুলা চাষে খরচ কম দাম বেশি। তাই তিনি আগামী আরও চাষ বাড়াবেন বলে ভাবছেন।
বাংলাদেশ চাহিদার মাত্র দই শতাংশ দেশে উৎপাদন হয়। এর প্রচার প্রকাশ বাড়ানো হলে আরও চাষ বাড়ে বলে জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডে নাচোল উপজেলা ইউনিটের কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বর্মন।
তিনি বলেন, বর্তমানে যে জমিগুলোতে তুলা চাষ হয়েছে সেগুলো তে একসময় কোন ফসল হত না। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তুলা চাষের বিভিন্ন দিক বললে তারা চাষ করতে আগ্রহী হন। তুলা যাদিও ছয় মাসের ফসল তারপরেও চাষাবাদ পদ্ধতি খুবই সহজ। আগ্রিম উৎপাদন করলে সেটা সেচবিহীনভাবে চাষ করা সম্ভব। দেশে চাহিদার মাত্র কয়েক শতাংশ তুলা উৎপাদন হয়। তাই এ ফসলের চাহিদা ব্যপক রয়েছে। চাষিদের তুলা চাষের জন্য প্রশিক্ষণ, বীজ ও সকল ধরনের পরমর্শ দিয়ে আসছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।