রবিবার ১৬ মার্চ ২০২৫ ২ চৈত্র ১৪৩১

শিরোনাম: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে ঝোড়ো হাওয়ার আভাস   বিগত সরকারের সব হত্যার বিচার করবে বিএনপি: তারেক রহমান   ঈদের আগে সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা   ‘স্বাধীনতা দিবসে কুচকাওয়াজ হবে না’ খবরটি সত্য নয়   মার্চের ১৫ দিনে প্রবাসী আয় ১৬৫ কোটি ডলার   আবরার হত্যার রায় ছাত্ররাজনীতির জন্য কড়া বার্তা   স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজ হচ্ছে না : স্বরাষ্ট্র সচিব   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
মামলাবাণিজ্যে মেতেছেন প্রতারক সিকদার লিটন, নিজের নামে ৩ ডজন মামলা-জিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৫:০৯ পিএম

দেশের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে তিন ডজন মামলা-জিডি, পুলিশের তালিকায় চিহ্নিত সেই প্রতারক সিকদার লিটন নিজেই এখন মামলাবাণিজ্যের হোতা। জামিনে কারামুক্ত হয়ে একের পর মিথ্যা মামলা করে অভিনব কৌশলে প্রতারণায় নেমেছে দাগী এই আসামি। র‌্যাবেব হাতে গ্রেপ্তার, সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদ, দুদকের চার্জশিট, কারাভোগ, কোনো কিছুকেই পরোয়া করছে না ছদ্মবেশী এই প্রতারক।

সিকদার লিটন (৫০) ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামের সিদ্দিক সিকদারের ছেলে। স্থানীয়রা তাকে টুটুল ওরফে সুমন নামেও চেনে। তাদের কাছে সিকদার লিটন যুবক বয়স থেকে প্রতারক ও বাটপার হিসেবে পরিচিত।

পেশাদার প্রতারক সিকদার লিটন ক্ষমতার পালাবদলের পর কারামুক্ত হয়ে ভোল বদলে এখন পুরোদস্তুর মামলাবাণিজ্য চালাচ্ছে। স্বচ্ছল ব্যক্তিদের টার্গেট করে আজগুবি এসব মামলায় নিরীহ মানুষ ও বিশিষ্টজনকেও আসামি করছে এই মামলাবাজ। নীরিহ মানুষকে হয়রানি করে চাঁদাবাজি করাই তার প্রধান উদ্দেশ্য।

স্থানীয়রা জানান, সিকদার লিটন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও সেটা ভুয়া পরিচয়। এলাকার মানুষ তাকে প্রতারক হিসাবেই জানে, যার পেশা হচ্ছে নানা ভাবে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটানোর ভয় দেখিয়ে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ, স্বচ্ছল ও   বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করা। ফলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে আলফাডাঙ্গার মানুষের কাছে সিকদার লিটন ছিল রীতিমতো আতঙ্কের নাম। 

অভিযোগ রয়েছে, লিটন সিকদার ফরিদপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মঞ্জুর হোসেন বুলবুলের ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিত। নিজ জেলা ফরিদপুরের পাশাপাশি ঢাকা, খুলনা, পাবনা, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলায় অপরাধের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে সিকদার লিটন।

মনজুর হোসেন এমপি থাকাকালে তার ছবিসহ শেখ হাসিনার ছবিসম্বলিত পোস্টার সাঁটিয়ে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল ছদ্মবেশী প্রতারক সিকদার লিটন। সেসময় আলফাডাঙ্গায় প্রায় সবার চেনা এস এম আকরামের ভাই হাসানের সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথনে ‘আল্লাহর পরে এমপি বুলবুলের স্থান’ বলে মন্তব্য করে জনরোষে এলাকা ছাড়া হয়েছিল সিকদার লিটন।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগের শাসনামলে সরকারি বেসরকারি দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে নানা জনের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিকদার লিটন। চাকরি দিতে পারেনি, উল্টো টাকা ফেরত চাওয়ায় ভুক্তভোগীদের দিয়েছে প্রাণনাশের হুমকি।

সিকদার লিটন ডিজিটাল প্রতারণায়ও সিদ্ধহস্ত। চাঁদা না দিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্মানহানির পাশাপাশি নানা রকম কুৎসা ছড়ায় সে। এনিয়ে একাধিকবার জনরোষের মুখে পড়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় সিকদার লিটন।

পুলিশের রেকর্ড (পিসিপিআর) বলছে, লিটন সিকদারের বিরুদ্ধে প্রতারণা,  কুৎসা রটানো, প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন জেলায় মামলা ও জিডি হয়েছে অন্তত ৩৬টি। ২০১৮ সালে খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা থানায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়। এই মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি প্রতারক লিটন।

২০১৯ সালে আলফাডাঙ্গা থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় প্রতারণার মামলা। ২০২০ সালে কোতয়ালী থানায় আরেক প্রতারণার মামলার মামলার চার্জশিটেও অভিযুক্ত হয়। ফরিদপুরের কোতয়ালী থানায় ২০২০ সালেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলাতেও সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ২০২১ সালে আলফাডাঙ্গা থানায় প্রতারণার আরেক মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি সে। ঢাকা মহানগরীর পল্লবী ও কলাবাগান থানায় ২০২৩ সালে প্রতারণা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় দুটি মামলা।

২০২০ সালে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে (১৬৪৪/ভি, তারিখ-৩/৯/২০২০) তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, সিকদার লিটন এলাকাবাসীর কাছে চিহ্নিত প্রতারক ও বাটপার। আলফাডাঙ্গা থানা পুলিশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন থানার পুলিশ এসে নানা সময় তার খোঁজ করে। সে তার এলাকায় নানা জনের সঙ্গে যেসব অপকর্ম করেছে, তাতে তাকে পেলে লোকজনই মারধর করবে। তার নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। সে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নানা অপকর্মে লিপ্ত।

এই প্রতারক মামলাবাজ সিকদার লিটনকে ২০২০ সালে একবার  গ্রেপ্তার করে র্যা ব। তবে জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়েই আবারো প্রতারণা, চাঁদাবাজি ও অর্থ আত্মসাতের মতো নানা অপরাধে সক্রিয় হয়েছে। তবে এবার চাঁদাবাজির জন্য বেছে নিয়েছে বিভিন্ন জনের নামে মামলা করার অপকৌশল।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিজের অতীত অপকর্ম ঢাকতে নতুন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে সিকদার লিটন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাভেদ নামে এক আসামিকে হত্যার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামী করে আদালতে মামলার আবেদন করে সিকদার লিটন। শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রী, নেতার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার এবং ঢালাওভাবে কারারক্ষীদের আসামী করা হয়েছে।

সিকদার লিটন এই মামলার আবেদনও করে আন্দোলনের পাঁচ মাস পরে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে। যেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করলেই তার নিজের অতীতের অপকর্ম মুছে ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে যাবে সিকদার লিটন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একাধিক কারা কর্মকর্তা ও কারারক্ষীকে হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে মামলা থেকে নাম কাটানোর সুযোগ নিতে তাকে মোটা দাগে খুশি করার সংকেত দিচ্ছে প্রতারক সিকদার লিটন।

কারা হেফাজতে তথাকথিত নির্যাতনের শিকার এমন ভুয়া অভিযোগেও সে পুলিশ আর অনেক কারা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলার আবেদন করেছে। এসব মামলার ভয় দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে অর্থ আদায় করা তার প্রধান উদ্দেশ্য।

২০২৪ সালের অক্টোবরে সিকদার লিটন চাঁদাবাজি মামলা করে ফরিদুরের ডাচ বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা জামাল আবু নাসের ও আব্দুল আজিজের নামে। এটিও মূলত পাতানো সাজানো মামলা। একইভাবে আরেকটি চাঁদবাজির ভুয়া অভিযোগে ফরিদপুরের আদালতে মামলার আবেদন করেছে এই প্রতারক, যেখানে ফরিদপুর-১ নির্বাচনী এলাকার পরস্পরবিরোধী একাধিক নেতার নাম দিয়েছে।

সিকদার লিটনের চাঁদাবাজির নতুন কৌশল মামলা-বাণিজ্য নিয়ে আতঙ্কিত ফরিদপুর ও আশেপাশের এলাকার স্বচ্ছল মানুষজন। চিহ্নিত এই অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে স্থানীয় প্রশাসন, সেই আশায় আছেন এলাকাবাসী।

শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ আমলে শেখ হাসিনা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবিসহ নিজের পোস্টার ছাপানো সিকদার লিটন এখন সেজেছে বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী। বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে ফেসবুকে পোস্টও দিচ্ছেন, পুলিশের তালিকায় চিহ্নিত এই প্রতারক।

সিকদার লিটনের বেপরোয়া অপরাধ কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তারা বলছেন, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও প্রতারণাসহ নানা অপকর্মে এলাকাছাড়া হয়েছিল সিকদার লিটন। এমনকি মা-বাবার মৃত্যুর পরও সে এলাকায় আসতে পারেনি। আর এখন সেই প্রতারক নতুন রূপে এলাকায় ফিরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মামলাবাণিজ্য করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। প্রশাসনের উচিত দাগী এই প্রতারকের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।



আর/আর



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com