
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, ‘সংস্কৃতি ও শিল্প আমাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। আমাদের লক্ষ্য হলো, সব বিভেদ দূর করা এবং একে অপরকে সম্মান করে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া।’
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ছায়া জাতিসংঘ ক্লাবের উদ্যোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি ও শিল্প শিক্ষা সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনের মূল থিম ছিল ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের আলিঙ্গন’।
আয়োজকরা জানান, সম্মেলনটি বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতি, শিল্প এবং শিক্ষার প্রতিনিধিদের একত্রিত করেছে। যারা একে অপরের সাথে সংলাপ ও মেলবন্ধন স্থাপন করে এক উন্নত ভবিষ্যতের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি ও শিল্পী। সম্মেলনে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেশন অনুষ্ঠিত হয় যা বৈশ্বিক সংস্কৃতি ও শিক্ষায় সংহতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা তুলে ধরে।
অনুষ্ঠানটি শুরু হয় উপস্থাপকের শুভেচ্ছা বক্তব্য এবং স্পন্সরদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের মাধ্যমে। এরপর বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি স্যারের স্বাগত বক্তব্য প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে সম্মেলনের মূল থিম ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের আলিঙ্গন’ তুলে ধরে বক্তব্য প্রদান করেন সম্মানিত অতিথিরা।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী বলেন, ‘সংস্কৃতি ও শিল্পের মাধ্যমে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা গর্বিত, এমন একটি সম্মেলন আয়োজন করতে পেরেছি যা আমাদের সংস্কৃতির শক্তি এবং জাতির ঐক্যকে প্রমোট করেছে।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক আব্দুর রব খান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈচিত্র্য এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্বের প্রতি এক বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়। এই বৈচিত্র্য আমাদের শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রেও প্রতিফলিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশে সংস্কৃতি ও জাতিগত বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব এবং এটি আমাদের জাতীয় উন্নতির জন্য অপরিহার্য। আজকের সম্মেলন আমাদের জন্য এই ঐক্য প্রতিষ্ঠার এক অনন্য সুযোগ।
আমরা এই উদ্যোগের অংশ হতে পেরে গর্বিত।’
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘আদিবাসী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বাংলাদেশের বৈচিত্র্যের অমূল্য অংশ। আজকের সম্মেলন আমাদের একত্রিত হতে এবং এই বৈচিত্র্যকে সম্মান জানাতে এক নতুন সুযোগ প্রদান করেছে।’
ইউনেস্কো প্রতিনিধি বিপাশা ত্রিপুরা বলেন, ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতি ও শিল্প মানবতার উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব জাতির মধ্যে সাংস্কৃতিক সংহতি স্থাপন করতে হবে। যাতে সবাই একত্রিত হয়ে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়ে তুলতে পারে।’
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংহতি প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং আজকের সম্মেলন এটি বাস্তবায়নে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য আমাদের সমাজের শক্তি। এ ধরনের সম্মেলন বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি। আইসিসিএই-২০২৫ ছিল একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক বৈচিত্র্যের মধ্যে সংলাপ ও সম্মান প্রচারের মাধ্যমে বৈশ্বিক ঐক্য প্রতিষ্ঠার বার্তা দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনটি সব অংশগ্রহণকারীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
দুপুরে সেশনে অংশগ্রহণকারীরা সরাসরি শিল্প প্রদর্শনী উপভোগ করেন এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয় যা রাত ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত চলে।