শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: বাংলাদেশে এলো তারেক রহমানের বুলেটপ্রুফ গাড়ি, দাম কত?   হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা, মধ্যরাতে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স   নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন মনিরুল ইসলাম   লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীরের সঙ্গে ইউএই রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ    পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন   কেরাণীগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া   খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সেক্রেটারিয়েট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন'র দোয়া মাহফিল    
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ৫ সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮:৩২ পিএম

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আজ বুধবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংবিধান সংস্কারে কমিশন। এতে ক্ষমতা কাঠামো, সংসদের ধরনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

তিন মাস ধরে সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করেছে কমিশন। প্রায় এক লাখ লোকের মতামত গ্রহণসহ বিভিন্ন দেশের সংবিধানও পর্যালোচনা করা হয়েছে।

এসবের ভিত্তিতে পাঁচ খণ্ডের প্রতিবেদন প্রস্তুত করে জমা দেওয়া হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।

প্রথম খণ্ডে রাখা হয়েছে সুপারিশ এবং সুপারিশগুলোর যৌক্তিকতা। বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রাপ্ত মতামত রাখা হয়েছে বাকি চার খণ্ডে। সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ জানান, সংস্কারের প্রস্তাবনা তৈরি করার ক্ষেত্রে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধ, ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টন, জবাবদিহিতা, রাষ্ট্র পরিচালনায় সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, ‘কিছু মতভেদ থাকলেও সংস্কারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ব্যাপারেও আমি আশাবাদী।’

প্রধান সুপারিশগুলো

এক. ক্ষমতার ভারসাম্য : বাংলাদেশের সংবিধান এ পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বদলে সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পুনরায় প্রবর্তন করা হয়। কিন্তু সংসদীয় ব্যবস্থার বদলে ধীরে ধীরে ব্যবস্থাটি নিছক প্রধানমন্ত্রীশাসিত ব্যবস্থায় রূপ নেয় বলে মনে করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দলের প্রধান হিসেবে দল চালান, সংসদের নেতা হিসেবে তিনি সংসদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন এবং তিনি প্রধানমন্ত্রী হন এবং এমন প্রধানমন্ত্রী, তিনি যা বলবেন রাষ্ট্রপতিকে তা শুনতেই হবে, এর অন্যথার কোনো জায়গা নেই।’ সংবিধানের মধ্যেই ‘ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্রের পথ’ রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে যে ‘একচ্ছত্র আধিপত্য ও ক্ষমতা’ দিয়েছে, সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কথা বিভিন্ন পক্ষ থেকে বেশ কিছুদিন ধরেই বলা হচ্ছিল।

অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার কথা বলে আসছে। তবে সংস্কার কমিশন ভারসাম্য আনতে চাইছে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে।
শুধু দুজন ব্যক্তি বা দুটি অফিসের মধ্যে ক্ষমতা বাড়িয়ে কমিয়ে নয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমাদের বিবেচনা করতে হবে যে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করতে পারি কি না। জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নিয়োগ দেওেয়ার পদ্ধতি কি তৈরি করা যায়?’ দেশ পরিচালনায় রাষ্ট্রের তিন অঙ্গের (আইন সভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ) মধ্যে সমন্বয় সাধনের কথাও বলেন তিনি। 

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের কাঠামো দাঁড় করানোর কথা প্রস্তাবনায় থাকছে বলে জানা গেছে, তাতে অন্য দুই বিভাগের সাথে আইনসভার সরকার ও বিরোধী উভয় পক্ষকে সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এতে নির্বাহী প্রধান তথা সরকার প্রধানের এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পেয়ে সেটা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভাগ হয়ে যাবে।

দুই. সংসদ : দুই কক্ষ, পাঁচ শতাধিক আসন, নারী আসনেও ভোট : বর্তমানে বাংলাদেশের এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদে নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসনসহ মোট ৩৫০টি আসন রয়েছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাবনা আসতে যাচ্ছে তা একরকম অনুমান করা যাচ্ছিল। কেননা বর্তমানে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সবাই দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে।

সংসদের নিম্নকক্ষের আসন সংখ্যা বেড়ে চারশো হওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর সঙ্গে উচ্চকক্ষে আরো ১০৫টি আসন যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। নিম্নকক্ষের ৪০০ আসনের ১০০টি নারী আসন। তবে কেবল দলের মনোনয়নে নয়, তাদেরও সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হতে হবে।

আসন বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ ছিল। এখন আঠারো কোটি মানুষ, তাদের প্রতিনিধিত্বের জায়গা করতে হবে। আরো ছোট ছোট কনস্টিটুয়েন্সি (নির্বাচনি এলাকা) তৈরি করতে পারলে মানুষ সরাসরি ইন্টারঅ্যাক্ট করতে পারবে।’ 

উচ্চকক্ষে আনুপাতিক পদ্ধতিতে সদস্য নির্ধারণ করা হবে। সাধারণ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের হার অনুযায়ী উচ্চকক্ষে আসন পাবে দলটি। দিনি বলেন, ‘সকলের প্রতিনিধিত্বের একটা পথ তৈরি হবে। কত শতাংশ মানুষ তাদের ভোট দিয়েছে, সেই বিবেচনা থেকে যদি প্রতিনিধিত্ব থাকে তাহলে সকলের ভয়েসটা থাকবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের মধ্যে ক্ষমতার এক ধরনের ব্যালান্স (ভারসাম্য) থাকবে। তারা নিঃসন্দেহে একটা ভূমিকা পালন করবে।’ এতে খরচ বৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে কথিত নির্বাচনে কত হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলো। আজ যদি আগামীর জন্য দেশের প্রয়োজনে কিছু অর্থ ব্যয় করি, সেটা ভবিষ্যতের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য ব্যয় করা হবে।’

তিন. ৭০ অনুচ্ছেদ : বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম আলোচিত অংশ ৭০ অনুচ্ছেদ। এতে বলা হয়েছে - ‘কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি যদি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তিনি যদি নিজ দল থেকে পদত্যাগ করেন, অথবা সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহলে সংসদে তার আসনটি আসন শূন্য বলে বিবেচিত হবে।’

নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগ না থাকায় সংসদ সদস্যের মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয় বলে মনে করেন অনেকে। অনুচ্ছেদটি থাকা না থাকার প্রশ্ন আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। 

৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে সুস্পষ্ট সুপারিশ আছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।  তবে, সুপারিশে কী থাকছে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সরাসরি উত্তর দেননি কমিশন প্রধান আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক চিত্রটা বোঝার চেষ্টা করুন, আমরা একটা জবাবদিহিতার অবস্থা তৈরির প্রচেষ্টা করছি, সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলেই সত্তর অনুচ্ছেদের ভূমিকা কী হবে, সেটা বুঝতে পারবেন।’

চার. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা : বিচার বিভাগ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হয়েছিল ২০০৭ সালে। লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব মুক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। কিন্তু, বিগত দিনে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, বিচার বিভাগ আদতে স্বাধীন নয়, সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ীই পরিচালিত হয়।

‘প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে’ সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয় তৈরির সুপারিশ করেছে। 

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘বিচার বিভাগে আর্থিক বরাদ্দ সরাসরি কনসোলিডেটেড ফান্ড (স্বতন্ত্র তহবিল) থেকে নিয়ে আসার প্রস্তাব থাকছে। যাতে করে এখন যেমন আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হতে হয়, সেটা স্বাধীনতার জন্য বড় ধরনের হুমকি, তা আর করতে না হয়।’

পাঁচ. স্থানীয় সরকার : বাংলাদেশে প্রায় এক দশক ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় প্রতীকে হয়ে আসছিল। স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নের সংসদ সদস্যদের তহবিল বরাদ্দসহ তাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো হয়েছিল। 

এসব কারণে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকার নির্ভর হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘তাদের বাজেট পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে নির্বাহী বিভাগ এতটাই নিয়ন্ত্রণ করে যে স্থানীয় সরকারের পক্ষে কিছু করা সম্ভব হয় না। তদুপরি সংসদ সদস্যরা সমস্ত উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিল। এটা তো তাদের (সংসদ সদস্য) দায়িত্ব নয়। স্থানীয় সরকারগুলো শক্তিশালী করা ছাড়া আপনি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারবেন না।’



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com