অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসেবে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে কমপক্ষে পাঁচ জনকে নিয়োগ দিতে বুধবারও (১৩ নভেম্বর) রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।
সড়ক অবরোধের কারণে রংপুরসহ বিভাগের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।
সমাবেশ থেকে সন্ধ্যার মধ্যে রংপুর ও রাজশাহী থেকে উপদেষ্টা নিয়োগ না করলে শাটডাউনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে রংপুর নগরীর লালবাগ এলাকায় অবস্থিত কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। মিছিলকারীরা পায়ে হেঁটে আড়াই কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে রংপুর নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড়ে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। কর্মসূচিতে রংপুরের বিভিন্ন স্তরের মানুষ অংশ নিয়ে কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন।
অবরোধের কারণে রংপুরসহ বিভাগের আট জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের দুই পার্শ্বে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অবরোধের কারণে আটকে পড়া শত শত মানুষ পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
সমাবেশে ছাত্র নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আমরা আশা করেছিলাম, অতীতে সব সরকারের আমলে রংপুর অঞ্চলের মানুষ যে চরম বৈষম্যেরে শিকার হচ্ছিল সেটি থাকবে না। কিন্তু আমরা দেখলাম, ২৪ এর আন্দোলনের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড আখতার হোসেনসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে একজনকেও উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেওয়া হলো না। অথচ একটি বিভাগ থেকেই ১৩ জনকে উপদেষ্টা পরিষদে রাখা হয়েছে। তাহলে আমরা কি সবসময় বৈষম্যের শিকার হবো? শুধু উপদেষ্টা পরিষদ কেন মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু পুলিশ ও বড় বড় সব পদেই আমাদের রংপুরের মানুষকে নিয়োগ দেয়া হয় না।
এ জন্য তো আবু সাঈদ বুক পেতে দিয়ে জীবন দেয়নি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আবু সাইদ চেয়েছিল, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রংপুরের মানুষের প্রতি বৈষম্য দূর হবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি অতীতের মতো এখনও আমরা চরমভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। এটা রংপুরের বীর জনতা কখনও মেনে নিতে পারে না। সে জন্যই আমরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছি। আজ সন্ধ্যার মধ্যে সরকার যদি পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়- তাহলে রংপুর-রাজশাহী বিভাগে ব্লকেড, শাটডাউনসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
অবরোধ চলাকালে সমাবেশে বক্তব্য দেন- রংপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ইমরান আহামেদ, ইমতিয়াজ ইমতি, সাজ্জাদ হোসেন, ডা. জামিল, নাহিদ হাসান খন্দকার , হামিম মোন্তাজিরসহ অন্যান্যরা।
তবে তীব্র যানজটের মুখে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধে দুপুর পৌনে ২টায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর আবারো যান চলাচল শুরু হয়।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুর রশীদ বলেন, শিক্ষার্থীরা রংপুর অঞ্চলের মানুষের প্রতি চরম বৈষম্যের অভিযোগ করে আন্দোলন করছে। আজও তারা রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। তাদের দাবির প্রতি রংপুরের সাধারণ মানুষের সমর্থন আছে বলে মনে হলো। তবে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের অনুরোধ করেছি। পরিস্থিতি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।