র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির লিমন এবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন। এতে সাবেক সামরিক উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক র্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউট কার্যালয়ে লিমন নিজে এসে অভিযোগ দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ। তিনি বলেন, গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই শিক্ষক আজ মামলা দায়ের করলেন।
এসময় সাংবাদিকদের লিমন বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ন্যায়বিচার পাইনি। ন্যায়বিচারের আশা নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করলাম।
২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে বরিশাল র্যাব-৮-এর সদস্যরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এ সময় র্যাবের গুলিতে তৎকালীন কলেজছাত্র লিমন হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়। তখন লিমনের বয়স ছিল ১৬ বছর ৩ মাস। পরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে লিমনের বাঁ পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলেন।
এ ঘটনায় লিমনের মা বাদী হয়ে ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল র্যাব-৮-এর তৎকালীন ডিএডি লুৎফর রহমান, করপোরাল মাজহারুল ইসলাম, মো. আবদুল আজিজ, নায়েক মুক্তাদির হোসেন, সৈনিক প্রহ্লাদ চন্দ ও সৈনিক কার্তিক কুমার বিশ্বাসের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ছয় র্যাব সদস্যের নামে ঝালকাঠির আদালতে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলাটি রাজাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হালিম তালুকদার তদন্ত করেন।
তিনি ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে র্যাব সদস্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন। লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩০ আগস্ট ঝালকাঠির সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে নারাজি দাখিল করেন। আদালত ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তার নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন। নারাজি খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০১৩ সালের ১৮ মার্চ রিভিশন দায়ের করেন হেনোয়ারা বেগম।
২০১৮ সালের ১ এপ্রিল অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এস কে এম তোফায়েল হাসান রিভিশন মঞ্জুর করেন। রিভিশন মঞ্জুর হওয়ার পর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজা মামলাটি তদন্তের জন্য ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল পিবিআইকে নির্দেশ দেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পিবিআই প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম ২০২২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর থানা-পুলিশের মতো আদালতে আবারও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে পিবিআই উল্লেখ করে, লিমন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা সত্য, তবে কারা তাকে গুলি করেছে, তার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করা হবে। এ কারণে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম আদালতে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর নারাজি দাখিল করেন। মামলাটি পুনঃ তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।