রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত শনিবার (৯ নভেম্বর) রাতে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানা এবং কুমিল্লার তিতাস ও চান্দিনা থানা এলাকায় ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. সেলিম (৩৫), আবুল কালাম (২৯), মো. হকসাব (৪৮), হযরত আলী ভূইয়া (৫২) ও মো. বিল্লাল (২৫)।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত লোহার তৈরি ৩৪৭৫ কেজি ওজনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ (যার মূল্য আনুমানিক ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা), বিভিন্ন বোল্টের ১০টি ব্যাটারি, দুটি পুরাতন গ্রাইন্ডিং মেশিন, একটি রুফিং মেশিন, একটি সিলিং ফ্যান, দুটি অ্যাডজাস্ট ফ্যান ও ৫০ ফুট ইন্টারনেট ক্যাবল উদ্ধার করা হয়।
গতকাল রোববার (১০ নভেম্বর) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান জানান, ব্যবসায়ী মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ১১ অক্টোবর খিলগাঁও থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৯ অক্টোবর রাত ৮টা থেকে ১১ টার মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয় ১৫/২০ জনের একটি দল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অবস্থিত কনস্ট্রাকশন সল্যুশনস নামক একটি প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে প্রবেশ করে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে কন্টেইনারের ভেতর আটকে রেখে গোডাউনে থাকা নগদ তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা লুট করে।
পরে একটি ট্রাক নিয়ে এসে গোডাউনে থাকা আনুমানিক ২৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা মূল্যের বিভিন্ন মালামাল, একটি টিভিএস মোটরসাইকেল, গোডাউনের কর্মচারীদের কাছে থাকা নগদ এক লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা ও কর্মচারীদের ১৫টি মোবাইল ফোন যা লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতির এ ঘটনায় নগদ টাকাসহ যেসব মালামাল লুট হয় তার আনুমানিক মূল্য ৩৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
থানা সূত্রের বরাতে ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, তদন্তাধীন এ মামলায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত ট্রাকটি শনাক্ত করা হয়।
পরে গত ৭ নভেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজার পেট্রোবাংলা ভবনের সামনে অভিযান চালিয়ে ট্রাকটি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা ট্রাকের ড্রাইভার সেলিমকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার রাতে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলার তিতাস থানার গাজীপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাতিতে জড়িত আবুল কালাম ও মো. হকসাবকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে লুণ্ঠিত এডজাস্ট ফ্যান, সিলিং ফ্যান, ইন্টারনেট ক্যাবল, গ্রাইন্ডিং মেশিন ও রুফিং মেশিন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার আবুল কালাম ও হকসাবের দেওয়া তথ্য মোতাবেক কুমিল্লা জেলার তিতাস থানার কড়িকান্দি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হযরত আলী ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তার হেফাজত হতে লুণ্ঠিত এস্কাভেটরের ১০টি ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়। পরে আরো লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধারের লক্ষ্যে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানার মাধাইয়া বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বিল্লালকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার হেফাজত থেকে লুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রকারের লোহার তৈরি পাত, বিম, প্লেটসহ সর্বমোট ৩৪৭৫ কেজি লোহার মালামাল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত সব মালামাল ভুক্তভোগীর নিজের বলে শনাক্ত করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের গ্রেপ্তার ট্রাক ড্রাইভার সেলিম জানায়, সে তার ট্রাকযোগে ১৫/২০ জনের একটি দলসহ ঘটনার দিন কনস্ট্রাকশন সল্যুশনস নামক প্রতিষ্ঠানের গোডাউনে প্রবেশ করে। সেখানে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মারধর করে উদ্ধারকৃত মালামাল লুট করে তার ট্রাকে করে দলের সদস্যরাসহ কুমিল্লা জেলার তিতাস থানা এলাকায় চলে যায়।
সেখানে গ্রেপ্তার আবুল কালাম ও মো. হকসাবের কাছে লুণ্ঠিত মালামাল বিক্রি করে। পরে ডাকাতির এসব মালামাল আবুল কালাম ও হকসাব গ্রেপ্তার হযরত আলী ভূইয়া ও বিল্লালের কাছে বিক্রি করে।
প্রসঙ্গত, একই ডাকাতির ঘটনায় গত ১৫ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে খিলগাঁও থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাসেল, মীর হোসেন ও আবুল হাসান নামক তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
সে সময় লুণ্ঠিত একটি মোটরসাইকেল ও একটি কম্পিউটারের সিপিইউ উদ্ধার করা হয়েছিল। ডাকাতির এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
গ্রেপ্তারদের খিলগাঁও থানার মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তার মধ্যে গ্রেপ্তার সেলিম আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ডাকাতিতে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।