প্রকাশ: শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:১৯ AM আপডেট: ০৮.১১.২০২৪ ১২:৫৪ এএম

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন হয়েছে এবং কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
রাষ্ট্রপতির নিকট সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক কোন বিচারপতি সম্পর্কে কোন অভিযোগ প্রেরণ করা হয়নি উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য উঠে এসেছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো: শফিকুল ইসলামের দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, ”তিন বিচারপতির অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল” মর্মে খবরটি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃক আজ সন্ধ্যায় সম্প্রচারিত হয়। বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের গোচরিভূত হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পরে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হলেও এবং উক্ত কাউন্সিলে কয়েকজন বিচারপতি সংক্রান্তে তথ্য যাচাই বাছাই এর কাজ চলমান থাকলেও রাষ্ট্রপতির নিকট সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক কোন বিচারপতি সম্পর্কে কোন অভিযোগ প্রেরণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেল কর্তৃক সম্প্রচারিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, কাল্পনিক এবং ভিত্তিহীন। বিষয়টি জন গুরুত্বপূর্ণ বিধায় সকলের অবগতির নিমিত্তে প্রচারের জন্য অনুরোধ করা হলো।’
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের বিধান সংক্রান্ত সংবিধানের বহুল আলোচিত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পক্ষের করা ‘রিভিউ’ গত ২০ অক্টোবর পর্যবেক্ষণ সহ নিষ্পত্তি করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ থেকে বাতিল হওয়া ২ থেকে ৮ উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল (রিস্টোর) করে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ ঐতিহাসিক রায় দেন। এক রায়ের ফলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল হয় এবং বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে ফেরে বলে জানান রিভিউ শুনানিতে অংশ নেয়া সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়। ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। সে রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। সে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় দেন।
বহুল আলোচিত ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে, দেশের গণতন্ত্র, রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, সুশাসন, দুর্নীতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে আপিল বিভাগের দেয়া সে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সে রিভিউ’ গত ২০ অক্টোবর পর্যবেক্ষণ সহ নিষ্পত্তি করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। রিটকারি পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান। আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।