
দয়াময় স্রষ্টা ও স্রষ্টার মহান রাসুল প্রদত্ত দুনিয়ায় সব মানুষের জীবন স্বীকার করা বা না করার দুই বিপরীত ধারা আছে। সব মানুষের জীবন ও অধিকার অস্বীকার ও উৎখাতের মূল প্রক্রিয়া একক ধর্মের নামে ও একক মতবাদভিত্তিক একক বস্তুবাদি চেতনাভিত্তিক একক জাতিবাদি রাষ্ট্রের লক্ষ্যে একক গোষ্ঠীবাদি রাজনীতি।
যারা জীবনের দয়াময় স্রষ্টা ও তাঁর মহান রাসুল প্রদত্তভাবে নিজেদের ও সবার সব মানুষের জীবন ও জীবনের অধিকার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন, তারা মানবতার রাষ্ট্রের লক্ষ্যে মানবতার রাজনীতি করবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ সবার জীবন স্বীকার ও সবার অধিকার রক্ষার ধারাই মানবতার রাষ্ট্রের লক্ষ্যে মানবতার রাজনীতি।
সব মানুষের জীবন ও অধিকার স্বীকার করা আর মানবতার রাজনীতি সমার্থক, কারণ মানবতার রাজনীতি মানেই সব মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল ও সব মানুষের মানবিক স্বার্থ রক্ষার রাজনীতি।
যিনি সব মানুষের জীবন ও অধিকার স্বীকার করবেন তিনি একক গোষ্ঠীবাদি সকল রাজনীতির বিরুদ্ধে থাকবেন। কারণ একক গোষ্ঠীবাদি রাজনীতি মানেই সব মানুষের জীবন অস্বীকার ও অধিকার উৎখাত করে একক গোষ্ঠীবাদি স্বৈরদস্যুতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করে মানবতার কবর রচনা করা।
যারা স্রষ্টা ও তাঁর মহান রাসুল প্রদত্ত সব মানুষের জীবন ও জীবনের অধিকার অস্বীকার ও উৎখাত করে শুধু তাদের একক গোষ্ঠীর মালিকানা কায়েম করতে চান তাদের হাতিয়ার একক গোষ্ঠীবাদি রাষ্ট্রের লক্ষ্যে একক গোষ্ঠীবাদি রাজনীতি।
যারা সর্বজনীন মানবতার ধারক, আর যারা অন্যদের অস্বীকার ও উৎখাত করে কেবল গোষ্ঠীবাদি স্বার্থের ধারক, এই দুই বিপরীত ধারার মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গঠন বিপরীত গঠন।
যারা সব মানুষের জীবন তথা সব মানুষের অধিকার স্বাধীনতা নিরাপত্তা স্বীকার করে তাদের মনস্তাত্ত্বিক গঠন মানবিক চেতনাভিত্তিক মানবিক গঠন। আর যারা কেবল নিজেদের অধিকার স্বীকার করে অন্যদের জীবনের অধিকার স্বাধীনতা অস্বীকার করে দমন পীড়ন রুদ্ধ করে এমনকি খুন করে হলেও অন্যদের উৎখাত ও ধ্বংস করার চেষ্টা করে তাদের মনস্তাত্ত্বিক গঠন মানবতাবিরুদ্ধ ভয়ংকর বস্তুবাদি গঠন।
যেকোনো মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গঠন নির্ভর করে তার চেতনার উপর। চেতনা নির্ভর করে জীবন সম্পর্কে তার উপলব্ধির উপর। উপলব্ধি নির্ভর করে তার বিশ্বাস চিন্তা চেতনা গঠনকারি ও নিয়ন্ত্রক বিভিন্ন শক্তির উপর। এই নিয়ন্ত্রক শক্তি সত্য বা মিথ্যা, ন্যায় বা অন্যায়, মানবতাবোধ ভিত্তিক বা মানবতাবিরুদ্ধ কোনো না কোনো ধর্ম কোনো না কোনো মতবাদ এবং পরিবার- প্রতিবেশ- অর্থনীতি- সমাজ- রাষ্ট্র এবং সময়ের রাজনৈতিক প্রবাহ।
সকল বস্তুর উর্ধে স্রষ্টার নামে স্রষ্টার আলোকে মানুষ হিসেবে জীবনের সত্য উপলব্ধি করতে পারলে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গঠন ও চেতনা এবং দৃষ্টিবোধ একরকম হবে, না করতে পারলে ভিন্ন রকম হবে।
স্রষ্টার নামে স্রষ্টার আলো রেসালাতের আলোকে আলোকিত মানবসত্তা থাকলে স্রষ্টার ভালোবাসায় সৃষ্টির ভালোবাসা তথা সব মানুষের ভালোবাসা ভিত্তিক হৃদয়ের মানসিক গঠন থাকবে নাহয় বিপরীত গঠন হবে।
স্রষ্টার পরিবর্তে ভাষা গোত্র দেশ রাষ্ট্র লিংগ বর্ণ বর্ডার ইত্যাদি বস্তুর ভিত্তিতে বস্তুবাদি আত্মসত্তা তৈরি হলে সে বস্তুর উর্ধে মানবসত্তা হারিয়ে ফেলবে।
মানবসত্তা না থাকলে মানুষ হিসেবে তার জীবনের সত্য ভিত্তিক অস্তিত্ব ও সত্তার আসল ভিত্তি বুঝতে পারবেনা যার পরিণতিতে সে অনিবার্যভাবেই বস্তুবাদের আঁধারে নিমজ্জিত হবে এবং বস্তুবাদি সত্তায় পরিণত হবে।
মানবসত্তা হারিয়ে বস্তুবাদি সত্তায় পরিণত হলে জীবনের সত্য ও মানবতার বিপরীত বস্তুবাদি চেতনার ভাবধারায় তার মন মগজ দৃষ্টিবোধ গড়ে উঠবে, মানবাত্মা হারিয়ে বস্তুবাদি জাতীয়তাবাদি জীব হয়ে যাবে, ফলে তার মন মগজ নিয়ন্ত্রক অপশক্তির ধারায় সে তার পক্ষ- বিপক্ষ, তার জয়-পরাজয়, স্বাধীনতা- পরাধীনতার সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে।
জীবনের সত্যভিত্তিক মানবসত্তা হারিয়ে ফেললে, মানুষ হিসেবে বস্তুবাদের আঁধারমুক্ত মানবিক হৃদয়ের গঠন না হলে নিজেকে এবং মানুষকে বস্তুর উর্ধে মানুষ হিসেবে উপলব্ধির দৃষ্টিবোধ হারিয়ে কেবল বস্তুবাদি আত্মপরিচয়ের ভিত্তিতে বস্তুবাদি বৈষম্যের ভিত্তিতে দেখবে, ফলে অখন্ড মানবতার বোধ- মানবিক ভ্রাতৃত্ব- মানবিক ভালোবাসা- মানবিক সম্পর্ক উপলব্ধি করতে পারবেনা বরং মানবতার বিপরীত হয়ে বস্তুবাদি বৈষম্য বিভেদ বিদ্বেষের বিকৃত বিষাক্ত দৃষ্টিতে দেখবে। যার বাস্তব রূপায়ণ হবে মানবতাবিরুদ্ধ বস্তুবাদি ও অধর্ম উগ্রবাদি গোষ্ঠীবাদি অপরাজনীতির মাধ্যমে।
মানবসত্তা থাকলে সে বস্তুবাদি সত্তা যেমন মেনে নিতে পারবেনা তেমনি অখন্ড মানবতার বিরুদ্ধে বস্তুবাদি জাতীয়তাবাদি চেতনা ভিত্তিক বিভাজন বৈষম্য বিদ্বেষ শত্রুতা র ধারা মেনে নিতে পারবেনা।
একক গোষ্ঠীবাদি স্বৈরদস্যুতান্ত্রিক অপরাজনীতির খুন জুলুম ধ্বংসযজ্ঞ মেনে নিতে পারবে না।
বস্তুবাদি চেতনা ভিত্তিক মানবাধিকার অস্বীকার ও উৎখাতের ধারা এখন ধর্মের মুখোশেও ধর্মের নাম নিয়েই কাজ করে। এখন সত্য ও মানবতার মুক্তির আসল ধর্ম প্রায় বিলুপ্ত হয়ে প্রায় সব ধর্মই বস্তুবাদের বিভিন্ন শাখা হয়ে গেছে।
সব ধর্মের নামধারী রাজনৈতিক দল ই একক ধর্মের নামে তাদের একক গোষ্ঠীবাদি রাষ্ট্র চায়, যার অর্থ তাদের মতবাদের বিপরীত অন্য সবার জীবন ও নাগরিকত্ব অস্বীকার এবং অন্য সবার বিশ্বাস আদর্শ স্বাধীনতা উৎখাত করার অপরাজনীতি।
ইসলামের নামে রাষ্ট্র করে ইসলামের আসল ধারার বিপরীত বিভিন্ন উপদল রাষ্ট্র জবরদখল করে রাষ্ট্র কুক্ষিগত করে ইসলামের দাবিদার অন্য মুসলিম দাবিদারদেও আকিদা বিশ্বাস অধিকার আদর্শ নিষিদ্ধ ও উৎখাত করে সত্য ও জীবনের ধারা হত্যা করে ফেলে।
তাওহীদ রেসালাত ভিত্তিক যে সত্তা ও চেতনার ভিত্তিতে বস্তুবাদ থেকে আত্মার মুক্তি এবং একক গোষ্ঠীর স্বৈরদস্যুতান্ত্রিক রাষ্ট্র মুলুকিয়ত থেকে জীবনের মুক্তির জন্য দুনিয়ায় আল্লাহতাআলার নুর ও হাবীব প্রাণাধিক প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শুভাগমণ তথা ইসলামের উদয়, সে ইসলামের নামেই এখন ইসলামের উদয়ের কেন্দ্রভূমিতে বস্তুবাদি চেতনা ভিত্তিক বস্তুবাদি জাতীয়তাবাদের এক জঘন্য শাখা সৌদি গোত্রবাদি স্বৈরদস্যুতন্ত্র মুলুকিয়ত প্রতিষ্ঠিত।
আইয়ামে জাহেলিয়াতের যে বস্তুবাদি গোত্রবাদি চেতনা ভিত্তিক একক গোষ্ঠীবাদি স্বৈরদস্যুতন্ত্র থেকে ইসলামের আসল ধারা ও একক গোষ্ঠীর স্বৈরদস্যুতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন মানবতার রাষ্ট্রের ধারা রক্ষার জন্য কারবালায় ঈমান দ্বীনের প্রাণ নুরে রেসালাত পবিত্র আহলে রাসুল আলাইহিমুস সালাম শাহাদাত বরণ করেছেন। সে শাহাদাতের আমানত খেয়ানত করে মুসলিম মিল্লাত কলেমার বিপরীত চেতনাভিত্তিক বস্তুবাদি জাতীয়তাবাদ এবং সত্যবিরুদ্ধ ও মানবতাবিরুদ্ধ একক গোষ্ঠীবাদি রাষ্ট্র ও রাজনীতি মুলুকিয়ত মেনে নিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব বিসর্জন করে সব বাতিল জালিম অপশক্তির দাসত্ব কবুল করে নিয়েছে।
ইসলামের নামে চলমান ওহাবিবাদ সালাফিবাদ শিয়াবাদ বস্তুবাদি মতবাদের ই ইসলামের মুখোশধারী বস্তুবাদি ধারা এবং একক গোষ্ঠীবাদি স্বৈরদস্যুতান্ত্রিক অপরাজনীতি মুলুকিয়তের ধারা।
সত্য ও মানবতার মুক্তির উৎস রাহমাতাল্লিল আলামীন আল্লাহতাআলার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেয়া সব মানুষের জীবন নিরাপত্তা -স্বাধীনতা-অধিকার- মর্যাদা - মালিকানা ভিত্তিক মানবতার রাষ্ট্রের বিপরীতে বলপূর্বক কেবল নিজেদের মতবাদ চাপিয়ে দিয়ে অন্য সকল মানুষের জীবন এবং জীবনের নিরাপত্তা -স্বাধীনতা-অধিকার অস্বীকার করে সবাইকে হয় হত্যা নয় দাস করে রাখার রাজনৈতিক ধারা এসব সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদ।
সব ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদ একক ধর্মরাষ্ট্রের নামে নিজেদের মতবাদ সবার উপর চাপিয়ে দিয়ে তাদের বিপরীত সবার জীবন ধর্ম অধিকার উৎখাত করে।
ধর্মরাষ্ট্রের নামে সব অধর্ম উগ্রবাদ ই সব মানুষের অধিকার অস্বীকার করে নিজেদের একক গোষ্ঠীবাদি স্বৈরদস্যুতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম করে।
মানবতা ও পাশবতার এই দুই বিপরীত পক্ষের রাজনৈতিক অবস্থান ও কার্যকারিতার উপরই নির্ভর করে দুনিয়া ও মানব জীবন কোন ধারার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
সত্য ও মানবতার ধারা বিজয়ী না পরাজিত থাকবে, নাকি মিথ্যা ও জুলুমের স্বৈরদস্যুতার ধারা জয়ী বা পরাজিত থাকবে তা নির্ভর করে সব মানুষের জীবন ভিত্তিক মানবতার ধারা আর বিপরীত ধারার কার হাতে রাষ্ট্র তার উপর। রাষ্ট্র রাজনীতিরই কাঠামো। রাজনীতির দর্শন ও চরিত্রের উপরই নির্ভর করে রাষ্ট্রের চরিত্র।
রাজনীতির দর্শন ও চেতনা শুধু রাষ্ট্রের চরিত্র নিয়ন্ত্রন করে না, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক গঠন ও চরিত্রও রাজনীতির মাধ্যমেই তৈরি হয়। আর সব রাজনীতির ভিতরের দর্শন হিসেবে কাজ করে কোনো না কোনো ধর্ম বা অধর্ম এবং বিভিন্ন মতবাদ।
রাজনীতির ভিত্তি হতে হবে সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব। সব মানুষের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনীতির নাম মানবতার রাজনীতি। সর্বজনীন মানবতার রাজনীতির বিপরীত রাজনীতি একক ধর্ম ও একক জাতিবাদি একক গোষ্ঠীবাদি রাজনীতি। মানবতার রাজনীতি না থাকলে মানবতাবিরুদ্ধ একক গোষ্ঠীবাদি পাশবিক রাজনীতির দখলে চলে যায় জীবন ও রাষ্ট্র।
একক গোষ্ঠীবাদি অপরাজনীতি ই মিথ্যা জুলুমের স্বৈরদস্যুতার মূল হাতিয়ার। মানবতার রাজনীতির অনুপস্থিতির কারনেই একক গোষ্ঠীবাদি অপরাজনীতি ভিত্তিক একক গোষ্ঠীবাদি স্বৈরদস্যুতান্ত্রিক রাষ্ট্র কায়েম হয়।
একক গোষ্ঠীবাদি অপরাজনীতির মাধ্যমেই মিথ্যা অবিচার স্বৈরতার সকল অপশক্তি রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাষ্ট্রক্ষমতার বলেই মানবতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়সন্ত্রাস চালায়।
একক গোষ্ঠীবাদি অপরাজনীতি না থাকলে মিথ্যা অবিচার স্বৈরতার রাজনৈতিক ধারা টিকে থাকা সম্ভব নয় এবং ফলে একক গোষ্ঠীবাদি রাষ্ট্রও সম্ভব নয়।
ধর্মের মানবিক শিক্ষার বিপরীত একক ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদি সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও মানবতাবিরুদ্ধ বস্তুবাদি চেতনা ভিত্তিক একক জাতিবাদি ধারার রাষ্ট্র জবরদখলের মূল হাতিয়ার একক গোষ্ঠীবাদি অপরাজনীতি।
লেখক: ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান