বুধবার ৬ নভেম্বর ২০২৪ ২১ কার্তিক ১৪৩১

শিরোনাম: ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানালেন প্রধান উপদেষ্টা   প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে শহীদ আবু সাঈদ পরিবারের সাক্ষাৎ   ধানমন্ডি থেকে আমির হোসেন আমু গ্রেপ্তার   শারজায় টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ   মোংলায় কনটেইনার টার্মিনাল হলে চট্টগ্রামে চাপ কমবে: উপদেষ্টা   আদানির সঙ্গে সব চুক্তি বাতিলে লিগ্যাল নোটিশ   ট্রাম্প বা কমলা জয়ী হলে ভারতের ওপর যে প্রভাব পড়বে   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
কেন গণভবনকে জাদুঘরের সঙ্গে সরকার প্রধানের বাসভবনও রাখা উচিত
জাহিদ নেওয়াজ খান
প্রকাশ: শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:০২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার একটি খবরের শিরোনাম: গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত।

খবরে বলা হয়:

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বতী সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

পরে সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত জানান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। 

তিনি বলেন, গণভবন জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতি এবং বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যত অন্যায়-অবিচার হয়েছে, তার সবকিছু সংরক্ষণ করার জন্য এটাকে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর' হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

দ্রুতই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, গণভবন যে অবস্থায় আছে, জনগণ যেভাবে রেখেছেন, সে অবস্থায় রাখা হবে। এর মধ্যে ভেতরে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে, যাতে অভ্যুত্থানের স্মৃতি সংরক্ষিত  থাকে।

পাশাপাশি তিনি জুলাই আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে একটি ফাউন্ডেশন করার কথা জানিয়েছেন। শিগগিরই প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টামণ্ডলী শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একটি সম্মীলনীতে মিলিত হবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ফাউন্ডেশন গঠন একটি প্রক্রিয়ার বিষয়। এজন্য একটু সময় হয়ত লাগবে। তবে, শহীদদের মা-বাবা-ভাই-বোনদের সঙ্গে তাদের সাক্ষাতটা এরই মধ্যে হয়ে গেলে ভালো হতো। এখন যত দ্রুত সেটা করা যায়, ততই ভালো। খুব ভালো হয় যদি প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার আগেই এটা অনুষ্ঠিত হয়।

আমাদের যে বাচ্চারা নিহত হয়েছে, তাদের আমরা কোনোদিনই আর মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারব না। কোনো ক্ষতিপূরণই তাদের পরিবার, বিশেষ করে মা-বাবা-ভাই-বোন-সন্তানদের জন্য ক্ষতিপূরণ হবে না। কিন্তু এরকম একটা সম্মেলনের মাধ্যমে অন্তত আমরা আনুষ্ঠানিক এবং জাতীয়ভাবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। 

শোক শেষ পর্যন্ত ব্যক্তির হলেও সমষ্টির গৌরবে তাদের ত্যাগের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি সেখানে দিতে পারি। এ গৌরবে শহীদরাই যে শীর্ষে, সেটা আমরা আরেকবার তাদের বলতে পারি। শোক হয়ত প্রশমিত হবে না, কিন্তু মা-বাবা-সন্তানরা জানবেন, বৃহত্তরের যে মহত্তম কল্যাণে তারা আত্ম উৎসর্গ করেছেন, সেটি মানুষ ভুলে যায়নি।

একইসঙ্গে, যে ছাত্ররা জুলাই আন্দোলন সংঘটিত করেছে তাদের একটা প্রতিনিধিত্বমূলক সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা যদি যোগ দেন, তাহলে ভালো হয়। সেখানে বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে প্রতিনিধিদের বক্তব্য তিনি শুনতে পারেন। সংস্কারের যে রোডম্যাপ সরকার পরিকল্পনা করছে সেটাও সেখানে প্রধান উপদেষ্টা তুল ধরতে পারেন। ছাত্রদের উদ্দেশে একটা পরামর্শ ও দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দিতে পারেন তিনি। সেখানে তিনি জানাতে পারেন, আমাদের যে তরুণ সমাজ, তাদেরকে এ সরকার কীভাবে গঠনমূলক কাজে সম্পৃক্ত করতে পারে।

পাশাপাশি সমাজের শ্রেণি-পেশার যে প্রতিনিধিরা জুলাই আন্দোলনে যোগ দিয়ে একে একটি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পরিণত করেছেন, তাদের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টা একটি সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন। ছাত্রদের আন্দোলনে তাদের ভূমিকা কম নয়। সেখানে এক দফার সঙ্গে তাদের আরো কিছু আকাঙ্খা ছিল। সেই আকাঙ্খার কথাটা অন্তর্বর্তী সরকারের পরিস্কার জানা উচিত।

স্মরণ করুন সেই দিনগুলোর কথা। ছাত্ররা যখন একের পর এক গুলিতে নিহত হচ্ছিল তখন শুরুতে খুব বেশি মানুষ তাদের পাশে দাঁড়াননি; বা, দাঁড়ানোর সাহস পাননি। কিন্তু, যারা শুরুতে দাঁড়িয়েছিলেন তারাই ইসক্রা হয়ে মশাল জ্বালিয়েছেন। সেখানে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ছিলেন। সেখানে শিক্ষক ছিলেন, আইনজীবী ছিলেন, চিকিৎসক ছিলেন, প্রকৌশলী ছিলেন, সাবেক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, সাংবাদিক ছিলেন, চিত্রশিল্পী ছিলেন, শিল্পী ছিলেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ছিলেন, দিন-মজুর-রিকশাচালকরাও ছিলেন। নিজ নিজ পেশার অন্যদের যে স্রোত ছিল, তারা সেই স্রোতের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছিলেন। ছাত্রদের আন্দোলনে তাদের অংশগ্রহণ জনস্রোত সৃষ্টি করেছে— যা গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়েছে।

তাদের অন্য কোনো স্বীকৃতির দরকার নেই। তবে, তাদের কথাটা শোনা দরকার। তাদের নিয়েও বড় একটা সম্মেলন হতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা তাদের কথা শুনতে পারেন। অন্তর্বর্তী সরকার যে অন্তর্ভূক্তিমূলক সমাজের কথা বলছেন, সেটা গড়ে তোলার জন্য তাদের আকাঙ্খার কথাটা শোনাও জরুরি।

সেটা হয়ত ইউনূস সরকার করবে। তবে, শুরুতে গণভবনকে জাদুঘর করার যে পরিকল্পনার কথা বলেছিলাম, সেটা নিয়ে একটু আলোচনা হওয়া দরকার।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভাষ্যে 'জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদদের স্মৃতি এবং বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে যত অন্যায়-অবিচার হয়েছে, তার সবকিছু সংরক্ষণ করার জন্য এটাকে 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর'হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।'

বাঙালি ভুলোমনো জাতি। তার প্রমাণ একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের আসল চেতনাকে পণ্যে পরিণত করার অতীত অভিজ্ঞতার মধ্যেই আমরা দেখতে পাই। যুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। স্বাধীনতার মূল মন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা সেটার জলাঞ্জলি দিয়েছি। পরে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে একপক্ষ লুটপাটতন্ত্র এবং গণতন্ত্রহীনতা কায়েম করা হয়েছে। অন্যপক্ষ মুক্তিযুদ্ধকেই অস্বীকার করতে চায়। দু'পক্ষ থেকেই এভাবে শহীদদের অবমাননা করা হয়েছে।

নব্বই এর ছাত্রগণঅভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও একইরকম ঘটেছে। শত প্রাণের বিনিময়ে গণতন্ত্রের পথে আমরা নতুন যাত্রা করেছিলাম। কিন্তু, অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের যাত্রা হয়েছে স্বৈরতন্ত্রের পথে। শেষ পর্যন্ত যা একরকম একদলীয় শাসনের রূপ নিয়েছিল। সেই গণঅভ্যুত্থানের তেমন কোনো স্মারক আমাদের নেই। যেমন ছিল না ওই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খার স্বীকৃতি ও বাস্তবায়ন।
স্মারক গুরুত্বপূর্ণ। তারচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আকাঙ্খার বাস্তবায়ন। দুটোই যদি একসঙ্গে ঘটে সেটা সবচেয়ে ভালো।

গণভবনকে জুলাই আন্দোলনের স্মারক জাদুঘরে পরিণত করার প্রস্তাবে তাই কিছু যোগ করতে চাই।

সহজ কথায় গণভবন হবে একইসঙ্গে জাদুঘর এবং নির্বাচিত সরকার প্রধানের বাসভবন। 'যৌক্তিক সময়ের মধ্যে' প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অন্তর্বর্তী সরকার যে নির্বাচন করবে, সেই নির্বাচনের যিনি সরকার প্রধান নির্বাচিত হবেন তার সরকারি বাসভবনের পাশাপাশি গণভবন হবে একইসঙ্গে স্মারক জাদুঘর। সামনের অংশ জাদুঘর, পেছনের অংশ সরকার প্রধানের বাসভবন।

এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের সময় গণভবনের বর্তমান চিহ্নগুলো রেখে দিতে হবে। ধরা যাক, সীমানা প্রাচীরের যে অংশগুলো জনতা ভেঙ্গে ফেলেছে, সেই দেওয়ালগুলো মেরামত করে ওই ভাঙ্গা অংশগুলো হবে কালো রঙের। থরে থরে সাজানো সুন্দর ইটগুলোর মাঝে হঠাৎ কয়েক হাত এলোমেলো কালো রঙই সাক্ষ্য দেবে কেন দেওয়াল সেখানে কালো। আর দেওয়ালজুড়ে থাকতে পারে আন্দোলনে শহীদদের ছবি এবং কিছু আইকনিক গ্রাফিতি।

নির্বাচিত নতুন সরকার প্রধান যতবার যখন ওই সীমানা প্রাচীর বা জাদুঘরের পাশ দিয়ে যাওয়া আসা করবেন, যতবার কালো অংশগুলো দেখবেন, যতবার শহীদদের মুখগুলো দেখবেন, যতবার গ্রাফিতিগুলো দেখবেন; ততবার তার মনে হবে জনগণকে ভুলে গেলে জনগণের শক্তি কী করতে পারে। জাদুঘর আর তার বাসভবন যদি পাশাপাশি হয়, সকাল-বিকাল তিনি দেখবেন জনতার শক্তির প্রকৃত রূপ।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]