শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শিরোনাম: মালয়েশিয়ান শ্রমবাজারে জনশক্তি পাঠানো বন্ধ হবে না     নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটার ও প্রার্থীদের বিশ্বাস জন্মেছে : ইসি     বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী    দেশের ১৫৭টি উপজেলায় আগামী ২১ মে সাধারণ ছুটি    সিএএ আইনে ১৪ জনকে নাগরিকত্ব দিল বিজেপি সরকার    রাশিয়ার দাপটে পিছু হটছে ইউক্রেন    ১ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৬৭টি গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে : প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী    
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি: ১০ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৩, ১০:৩৩ এএম | অনলাইন সংস্করণ

২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টায় সাভারের রানা প্লাজা ভবনের তৃতীয় তলায় পিলার ও দেয়ালে ফাটল দেখা দেয়। খবর পেয়ে বিজিএমইএ কর্মকর্তারা রানা প্লাজায় আসেন। তারা ওই ভবনের গার্মেন্টস মালিকদের পরামর্শ দেন—বুয়েটের ভবন বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা পর্যন্ত সব কার্যক্রম যেন বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু পাঁচ গার্মেন্টস মালিক এবং তাদের লোকজন ভয়ভীতি দেখিয়ে পরদিন (২৪ এপ্রিল) শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেন। এর সঙ্গে যোগ দেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক খালেক ও সোহেল রানা। পরে এদিনই (২৪ এপ্রিল) ধসে পড়ে রানা প্লাজা।

রানা প্লাজা ধসের ১০ বছর পূর্ণ হলো আজ ২৪ এপ্রিল। সবচেয়ে বড় এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ১৩৬ জন পোশাকশ্রমিক। কিন্তু এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার ১০ বছর পার হয়ে গেলেও বিচারকাজ চলছে ধীরগতিতে।

ভয়াবহ দিনটিকে স্মরণ করতে স্থানীয় শ্রমিক সংগঠনগুলো নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। রোববার (২৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের রানা প্লাজার সামনে অস্থায়ী ‘শহীদ বেদি’তে মোমবাতি জালিয়ে নিহতদের স্মরণ করেন পরিবারের সদস্য, আহত শ্রমিক এবং বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে চার দফা দাবিতে মানববন্ধনও করেছে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে সাভার বাসস্ট্যান্ডে রানা প্লাজার সামনের স্মৃতিস্তম্ভ বেদিতে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

রানা প্লাজায় ফুল দিয়ে নিহতদের স্মরণে ব্যানার হাতে ফুল দিয়ে স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানানোর সময় চোখের জলে স্মৃতিচারণ করেন আহত শ্রমিক ও স্বজনরা।

এছাড়া গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, গার্মেন্টস শ্রমিক লীগসহ বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন একে একে ফুল দিয়ে নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ১০ বছর আগে এই দিনে হাজারের বেশি শ্রমিক ভবনের নিচে চাপা পড়ে মারা গেলেও এখনও নিহত শ্রমিক পরিবারের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন এবং রানা প্লাজার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এখনও বিচার হয়নি। রানা প্লাজায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসন ব্যবস্থা করা; রানা প্লাজা ঘটনার জন্য দায়ী সবার বিচারের ব্যবস্থা করা; দেশের শ্রম আইন সংস্কার করে শ্রমিকবান্ধব আইন গড়ে তোলা; দেশের সব শিল্প খাতে আহত শ্রমিকদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে।

এর আগে তিন দিন ধরে চারদফা দাবিতে ঢাকার শহীদ মিনারে অনশন করছেন রানা প্লাজায় আহত কয়েকজন শ্রমিক।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়। এরমধ্যে শ্রমিকদের মৃত্যুতে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করে পুলিশ। ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘন করে ভবন নির্মাণের অভিযোগে অপর মামলাটি করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আর ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দায়ের করা এসব মামলার বিচার চলছে ধীরগতিতে। আর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া সেই ভবন নির্মাণে ত্রুটি থাকার অভিযোগে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইনে দায়ের করা মামলাটির জট খোলেনি এখনও। দীর্ঘদিন হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে আছে এটি। হাইকোর্টে শুনানির কোনও উদ্যোগ নেই।

শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয় ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই। পরে সাক্ষীর পর্যায়ে এসে থেমে যায় মামলার কার্যক্রম। হাইকোর্টের আদেশে পাঁচ বছর স্থগিত থাকে মামলাটি। পরে গত বছরের জানুয়ারিতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হয়। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি মামলার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ আদালতে পাঁচ জন সাক্ষ্য দেন। এ পর্যন্ত ৪৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১৫ মে পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় অভিযোগপত্রে সাক্ষী করা হয়েছে ৫৯৪ জনকে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই  ওয়ালী আশরাফ। তদন্ত শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মৃত্যু ঘটানোসহ দণ্ডবিধির বেশ কিছু ধারায় বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ২০১৫ সালের ১ জুন অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলাটির ৪১ আসামির মধ্যে বর্তমানে কারাগারে আছেন একজন। তিনি হলেন রানা প্লাজা ভবনের মালিক সোহেল রানা। জামিনে আছেন ৩২ জন আসামি। পলাতক ৬ জন। মারা গেছেন ২ জন আসামি।



ইমারত নির্মাণ বিধিমালার মামলাটির তদন্ত শেষে সিআইডি সোহেল রানা ও তার বাবা-মাসহ ১৮ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আসামিদের মধ্যে একমাত্র সোহেল রানা কারাগারে রয়েছেন। পাঁচ আসামি পলাতক, অন্যরা জামিনে আছেন। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন।

ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি নিয়ে আরেকটি মামলা করে দুদক। রানা প্লাজা ধসের জন্য ছয় জন সরকারি কর্মকর্তাকে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি না পাওয়ার কারণে তিন বছর ঝুলে ছিল এই মামলা। সে সময় জনপ্রশাসন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুক্তি ছিল—যারা বড় অপরাধ করেননি, তাদের অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি করার অনুমতি দিতে পারবে না তারা। শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি বিমল সমাদ্দার বলেন, এ মামলার সাক্ষীর সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি। আর এরমধ্যে ৪৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব হয়েছে। এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। এরমধ্যে ছয় জনের পক্ষে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আসে। এখনও দুই জনের স্থগিতাদেশ বহাল আছে। এ রকম পরিস্থিতিতে আপনি মামলা শুরু করতে পারবেন না। ফলে বিচারিক আদালতের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও উচ্চ আদালতের এই আদেশের কারণে মামলার কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি। পরবর্তী সময়ে গত বছর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যাদের স্থগিতাদেশ নেই তাদের মামলা চালিয়ে নেওয়ার।

মামলার দীর্ঘসূত্রতার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের একইসঙ্গে আরও অনেক মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হয়। প্রতি ১৫ দিন বা এক মাস পর পর আমরা এই মামলার ডেট পাচ্ছি। একেকবার সাক্ষী পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে পাঁচ জন পর্যন্ত সাক্ষীর সাক্ষ্য নিয়েছি। সাক্ষী পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে এখন। সাক্ষীদের অনেকেই এখন আর তাদের আগের ঠিকানায় থাকেন না। ফলে তাদের বিভিন্ন জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আদালতে আনা হয়। সব মিলিয়ে চ্যালেঞ্জ অনেক।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]