পাবনার চাটমোহর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প আজ বিলুপ্তের পথে। সুতা ও কাঁচা মাল, পুঁজির অভাব এবং আধুনিক কাপড়ের সাথে প্রতিযোগিতা টিকতে না পেরে একের পর এক তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। দুইজন তাঁত মালিক এ শিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছে তাদের বাপ দাদার পুরানো পেশা হিসাবে আর কত দিন লোকসান গুনবে এই দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে তারা।
এক সময় চাটমোহরের হরিপুর তাঁতিপাড়া, চরসেনগ্রাম, গৌড়নগর, বিন্যাবাড়ি, কুয়াবাসী, চড়ুইকোলসহ বিভিন্ন গ্রামের প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবার তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। এ এলাকায় তৈরী করা শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, ওড়না এলাকার পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন শোরুমে বিক্রি হতো।
একযুগ পূর্বে হরিপুর তাঁতি পাড়ার প্রায় ৪০ পরিবার তাঁত শিল্পের পাঁচ হাজারের অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান ছিল। বর্তমানে দুইটি পরিবার তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক পাঁচজন।
তাঁত শ্রমিক মোঃ মঞ্জুর হোসেন বলেন, প্রতিদিন ৩-৪ টি লুঙ্গি করতে পারি। প্রতি পিস লুঙ্গির হাজিরা পাই ৭০ টাকা। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি।
তাঁত শ্রমিক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ২-৩ টি শাড়ি তৈরি করতে পারি। প্রতি পিস শাড়ি মজুরি ১০০ টাকা। প্রতিদিন ৬-৭ টি শাড়ির কাজ করা যায়। কিন্তু চাহিদা না থাকায় কাজ করতে পারছিনা।
তাঁতিপাড়া তাঁত মালিক মোঃ বিল্লাল হোসেন বলেন,কাপড়ের দামের চেয়ে সুতার দাম বেশি হওয়ায় তৈরী করে বাজারে বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। একটি শাড়ি উৎপাদন ব্যয় হয়৫০০-৫৭৫ টাকা আর বিক্রি হয় ৬৯০ টাকা। তাঁত শিল্পে কোন সরকারি অনুদান পাওয়া যায় না। স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া যেত তাহলে আগামীতে তাঁত শিল্প ঘুরে দাঁড়াতো।
তাঁতিপাড়া তাঁত শিল্প মালিক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, পূর্বে ৮০-৯০টি তাঁত ছিলো। বর্তমানে ৩টি তাঁত আছে। কাচামাল তুত, সাগু, আতপ চাউল, সোহাগা, রং, সুতাসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধি পেলেও কাপড়ের দাম বৃদ্ধি না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। অর্থাভাবে এটিও বন্ধ করে দিতে হতে পারে।
তাঁত শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা ও সহজ ঋনের সুবিধা কামনা করছেন এসব এলাকার তাঁত শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত পরিবারগুলো।