শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শিরোনাম: শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ    মালয়েশিয়ান শ্রমবাজারে জনশক্তি পাঠানো বন্ধ হবে না     নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটার ও প্রার্থীদের বিশ্বাস জন্মেছে : ইসি     বৈদেশিক ঋণের প্রকল্প দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী    দেশের ১৫৭টি উপজেলায় আগামী ২১ মে সাধারণ ছুটি    সিএএ আইনে ১৪ জনকে নাগরিকত্ব দিল বিজেপি সরকার    রাশিয়ার দাপটে পিছু হটছে ইউক্রেন   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
পানিতে ডুবে প্রতি বছর প্রাণহানি ১৯ হাজার
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: রোববার, ২৫ জুলাই, ২০২১, ৬:৩৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বিশ্বে প্রথমবারের মতো ২৫ জুলাই ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ পালিত হচ্ছে। পানিতে ডুবে মৃত্যু একটি বড় ধরনের জনস্বাস্থ্য সমস্যা বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারায় পানিতে ডুবে। বাংলাদেশেও প্রতি বছর মারা যায় ১৯ হাজার মানুষ। 

পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধকল্পে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে ‘যে কেউ পানিতে ডুবে যেতে পারি, সবাই মিলে প্রতিরোধ করি’। পানিতে ডুবে মৃত্যুর বেশির ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

কিশোরগঞ্জ জেলায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সমষ্টির গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে এ বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত ১৯ মাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের গেটওয়ে হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ জেলায় অন্তত ৪৩ জন পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করেছে সমষ্টি। 

তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রচারিত সংবাদে এ সংখ্যা আরও বেশি। আর চলতি বছরের সাত মাসেই কিশোরগঞ্জ জেলায় পানিতে ডুবে  ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

এছাড়া ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে এ বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত ১৯ মাসে কুড়িগ্রাম জেলায় অন্তত ৬৩ জন, নেত্রকোনায় ৫৪ জন, চট্টগ্রামে ৪২ জন, পটুয়াখালীতে ৩৯ জন এবং দিনাজপুর ও সিরাগঞ্জে ৩৭ জন করে মানুষ পানিতে ডুবে মারা গেছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ এপ্রিল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ৭৫ বছরের ইতিহাসে প্রথম বারের মতো পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ বিষয়ক একটি ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। ফলে জাতিসংঘ ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর ২ লাখ ৩৬ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। বন্যা ও জলযান দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ঘটনা পানিতে ডুবে মৃত্যুর হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফলে কোনো কোনো দেশের পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম। পানিতে ডুবে মোট মৃত্যুর ৯০ শতাংশেরও বেশি ঘটে থাকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এশিয়া ও আফ্রিকাতে পানিতে ডুবে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি। পানিতে ডোবার ক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়। গ্রামাঞ্চলে অধিকসংখ্যক শিশু-কিশোর পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বে শিশু মৃত্যুর ১০টি প্রধান কারণের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু অন্যতম। বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এক-চার বছর বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, এরপর রয়েছে ৫-৯ বছর বয়সী শিশুরা।

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের পরিচালক ও ইন্টারন্যাশনাল ড্রাউনিং রিসার্চ সেন্টারের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ড. আমিনুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সরকার পানিতে ডুবে যাওয়াকে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রাসমূহ (এসডিজি), বিশেষত এসডিজি ৩- সুস্বাস্থ্য এবং কল্যাণ, অর্জনের লক্ষ্যে শিশুদের পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জনসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক পাঁচ বছরের নিচে ২ লাখ শিশুর সুষ্ঠু তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৮ হাজার কমিউনিটি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের সাঁতার শেখানোর একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে শিশুদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিরোধে যত দ্রুত সম্ভব এসব কার্যক্রম দেশব্যাপী পরিচালনা করার এখনই সময়।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক ২০২০-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার পরে পানিতে ডুবা হচ্ছে দ্বিতীয় প্রধান ঘাতক। উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে গৃহীত কার্যকর পদক্ষেপসমূহ বাস্তবায়ন করার মতো আর্থিক সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তাছাড়া এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উপযুক্তও নয়। দেশের প্রেক্ষাপট এবং সমাজে গ্রহণযোগ্য এরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে জাতীয়ভাবে সর্বশেষ জরিপ হয়েছে ২০১৬ সালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ পরিচালিত ঐ জরিপে তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী প্রতি বছর সব বয়সী প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অর্থাৎ আনুমানিক ১৪ হাজার ৫০০ জনই ১৮ বছরের কম বয়সী। অন্যভাবে বলা যায়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের শিশুরা পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন, অর্থাৎ বছরে প্রায় ১০ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ৪৩ শতাংশের কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া।

পানিতে ডুবে মৃতদের ৯১ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। চার বছর বা কম বয়সীদের মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু সবচয়ে বেশি, ৫৬২ জন (৪২ শতাংশ)। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৪৬২ জন (৩৫ শতাংশ), ১০-১৪ বছরের ১৫২ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ৩৮ জন। ১১৮ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের বেশি। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে পানিতে ডোবার ৭৯ শতাংশ ঘটনা ঘটে দিনের বেলায়। দিনের বেলায় শিশুরা পানির সংস্পর্শে বেশি যায়। দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৫৩৭ জন (৪০ শতাংশ) এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৫১৭ (৩৯ শতাংশ) জন মারা যায়। তবে রাতেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যা বা রাতে ২৬৫ (২০ শতাংশ) জনের মৃত্যু হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে ১২ জনের পানিতে ডোবার সময় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।





ভোরের পাতা/কে 

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  বিশ্বে   পানিতে ডুবে   ডুবে   দিবস  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]