ড. কাজী এরতেজা হাসান
বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী ম্যারি কুরি ও পিয়েরে কুরি দম্পতি বিশ্ব শান্তির সংগ্রামে যে অবদান রেখেছেন, তা চিরস্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ১৯৫০ সাল থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে, মানবতার কল্যাণে, শান্তির সপক্ষে বিশেষ অবদানের জন্য বরণীয় ব্যক্তি ও সংগঠনকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে আসছে।
ফিদেল ক্যাস্ট্রো, হো চি মিন, ইয়াসির আরাফাত, সালভেদর আলেন্দে, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইন্দিরা গান্ধী, মাদার তেরেসা, কবি ও রাজনীতিবিদ পাবলো নেরুদা, জওহরলাল নেহেরু, মার্টিন লুথার কিং এবং লিওনিদ ব্রেজনেভের মতো বিশ্ব নেতাদের এই পদকে ভূষিত করা হয়।
আজ সেই ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৩ সালের এ দিন ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশীয় শান্তি সম্মেলনে বিশ্ব শান্তি পরিষদের অন্যতম শীর্ষ নেতা শ্রী রমেশ চন্দ্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলিও কুরি শান্তি পদকে’ ভূষিত করেন। মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মান প্রাপ্তির পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এ সম্মান কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহিদদের, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের। ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক সমগ্র বাঙালি জাতির।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ হতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে তার উক্তি নিয়ে প্রকাশিত ই-পোস্টারের শিরোনাম করা হয়েছে ‘মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার-বঙ্গবন্ধু। জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার প্রাপ্তির ৪৮তম বার্ষিকীতে শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।’
আকাশসম হৃদয়ের অধিকারী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক চিন্তাধারায় ছিল শুধু মানুষের কল্যাণ; মানবমুক্তি, অসাম্প্রদায়িক বিশ্ব, ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ও শান্তির বার্তা। যার পরিচয় আমরা তার কর্মকাণ্ডে দেখতে পাই। এ ছাড়া তার লেখা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থেও সেই চিন্তার ছাপ রয়েছে। ১৯৭৩ সালের ৩ মে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, 'একজন মানুষ হিসাবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্প্রীতির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।'
বঙ্গবন্ধু শুধু বাঙালির নেতা ছিলেন না। তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত গণমানুষের নেতা। যেখানে মানবতার বিপর্যয় ঘটেছে, সেখানে মানুষের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। এ জন্য বিশ্বজুড়ে মানুষের ভালোবাসা পেয়েছেন এই মহান নেতা। জনগণের জন্য ভালোবাসা ছিল বঙ্গবন্ধুর কর্মকাণ্ডের প্রেরণা এবং মানুষের কল্যাণই ছিল তার কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য। এই মানবিক মূল্যবোধই তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে; যা প্রতিফলিত হয় তার বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শে, যেমন- গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা ও সমাজতন্ত্র। একটা কথা তিনি প্রায়ই বলতেন, 'আমার সারাজীবনের স্বপ্ন হচ্ছে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।' তার এই প্রত্যয় থেকেই আমরা বুঝতে পারি, সমাজের উন্নয়ন সম্পর্কে তার কত ব্যাপক এবং বহুমাত্রিক ধারণা ছিল।
আজ বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পুরষ্কার প্রাপ্তির ৪৮ তম দিবসে এসে একটি কথা দৃঢ়ভাবেই বলতে পারি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বর্তমান বিশ্বে একজন মানবতাবাদী, শান্তিকামী নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। তার হৃদয় ফিলিস্তিনের শোষিত, নিপীড়িত মানুষের জন্য কাঁদে। তিনিই ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছেন। তাইতো বলতে পারি, বঙ্গবন্ধুর বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার অসমাপ্ত কাজগুলো করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। আজকের এই ঐতিহাসিক দিনে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার কন্যার হাত ধরেই বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা, দ্য পিপলস টাইম
সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ
সদস্য, কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য উপকমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
পরিচালক, এফবিসিসিআই
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ