শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

শিরোনাম: র‍্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না যুক্তরাষ্ট্র : ভেদান্ত প্যাটেল    জনগণের উন্নয়ন দেখে বিএনপির সহ্য হচ্ছে না : আইনমন্ত্রী    বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ণের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর    কুমিল্লায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ৫    শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ    মালয়েশিয়ান শ্রমবাজারে জনশক্তি পাঠানো বন্ধ হবে না     নির্বাচন কমিশনের প্রতি ভোটার ও প্রার্থীদের বিশ্বাস জন্মেছে : ইসি    
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
দূষণে দুঃসহ ঢাকা
মিথুন মুৎসুদ্দী
প্রকাশ: শনিবার, ২০ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ২০.০৩.২০২১ ১:১২ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

দিন দিন দূষিত বস্তুকণার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে রাজধানীর বাতাস। গতকাল সরকারি ছুটির দিনে এই প্রভাব ছিল লক্ষণীয়।

গতকাল শুক্রবার (১৯ মার্চ) সকাল ৯টায় রাজধানীতে বায়ুদূষণ ছিল ৪৬৯ পিএম-২.৫। ফলে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় ফের উঠে এসেছে ঢাকার নাম। এ তথ্য দিয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ু পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান দ্য ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স প্রজেক্ট (একিউআইসিএন)।

আন্তর্জাতিক মান অনুসারে বায়ুদূষণের মাত্রা ৩০০ পিএম-২.৫ ছাড়িয়ে গেলে সেই দূষণকে বলা যায় বিপজ্জনক। বাতাসে এই মাত্রার দূষণে যে কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। ফলে এ সময় কারও বাইরে যাওয়া উচিত নয়। এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বৈশ্বিক মান অনুযায়ী বাতাসে এমন দূষিত কণার উপস্থিতি থাকলে জারি করার বিধান রয়েছে স্বাস্থ্য সতর্কতার। তবে এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো সংস্থার কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ভোরের পাতাকে বলেন, বায়ু দূষণের উৎসগুলো ট্রেস করা দরকার। ধূলার উৎস, জ্বালানি বর্জ্য, খনিজ ও অখনিজ বর্জ্যের উৎসগুলো খুঁজে বের করতে হবে। সেই সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার পরিবর্তনও দরকার।

আইকিউএয়ারের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বায়ুর গড় দূষণ ১৬২ পিএম-২.৫। এরপর রয়েছে পাকিস্তান, তাদের গড় দূষণের মাত্রা ১৫৩ পিএম-২.৫। তৃতীয় স্থানে আছে ভারত, তাদের গড় দূষণের হার ১৪১ পিএম-২.৫। গড় দূষণ ১২৮ পিএম-২.৫ নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে মঙ্গোলিয়া এবং সমপরিমাণ দূষণ নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। অর্থাৎ বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বায়ুর পাঁচটির মধ্যে চারটি দেশই দক্ষিণ এশিয়ার।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী ভোরের পাতাকে বলেন, একটা সময় ঢাকার ৫৬-৫৭ শতাংশ বায়ু দূষণের জন্যে দায়ী ছিল ঢাকার ইট ভাটাগুলো। পরবর্তীতে পরিবেশ অধিদফতরের হস্তক্ষেপে অধিকাংশ ইট ভাটা বন্ধ হয়েছে। ফলে, সেটি কমছে। কিন্তু, পরিবহনের কারণে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া, বিভিন্ন মেগা প্রজেক্ট ও ব্যক্তিগত নির্মাণ প্রকল্প, কল-কারখানা, বাড়ি ও অফিস-আদালতের আবর্জনার কারণে সৃষ্ট বায়ু দূষণ কমছে না। ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য আইকিউএয়ারের পরামর্শ-এ সময়ে বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, ঘরের দরজা-জানালা খোলা রাখা যাবে না, এয়ার পিউরিফাই ব্যবহার করতে হবে এবং অতি প্রয়োজন ছাড়া চলাফেরা না করা।

আইকিউএয়ারের রিপোর্ট অনুযায়ী-গত বৃহস্পতিবার রাত ১টায় ঢাকার বায়ুদূষণ বেড়ে যায়। রাত ২টায় তা ৪৫৪ ছাড়িয়ে যায়। সকাল ১০টা পর্যন্ত বায়ুদূষণের মাত্রা কিছুটা উঠানামা করলেও বাতাসে দূষিত কণার পরিমাণ বিপজ্জনকই রয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রতি বছরই ঢাকার বাতাসের দূষণের মাত্রা গুরুতর হয়ে ওঠে। দূষিত বায়ুর শহরের বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষ ১০ এর মধ্যে থাকে ঢাকার নাম। তবে মহামারি করোনার কারণে চলাচল সীমিত এবং সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত বছরের জুন-জুলাইয়ে ঢাকার বায়ুমান উন্নত হয়েছিল। গত বছর জুনের শেষ সপ্তাহে দূষণ তালিকায় ৫৭তম অবস্থান ছিল রাজধানী ঢাকার। তবে লকডাউন শেষ হতেই ফের বায়ুদূষণ বাড়তে শুরু করে। ফলে রাজধানীর বাতাসের মানের চরম অবনতি হয়েছে।



বায়ু দূষণের প্রভাবের বিষয়ে ডা. লেনিন ভোরের পাতাকে বলেন, ‘বায়ু দূষণের দুই ধরনের প্রভাব দেখা যায়। এক, শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, কাশি, হাঁপানি, টিবি, নিউমোনিয়া, লাংস ক্যানসার। দ্বিতীয়ত, বাতাসে ভাসমান বস্তুকণা, সেটা গতকাল ঢাকার বাতাসে সর্বোচ্চ ছিল। সেটি আমাদের শ্বাসতন্ত্র থেকে রক্ত হয়ে লিভারে যায়। লিভার থেকে আমাদের শরীরে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে কিডনি ও লিভার অকার্যকর হয়ে পড়ে। বায়ুতে যে ভাসমান ক্ষতিকর গ্যাস এখন পাওয়া যাচ্ছে, তার প্রভাবে বন্ধ্যাত্ব, থাইরয়েডের সমস্যা হয়। এভাবে, নগরবাসীর স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এদিকে আমাদের গড় আয়ু বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে গড় ভোগান্তির অর্থাৎ অসুস্থ থাকার সময়ও। হাসপাতালের বেড সংখ্যা বাড়াতে হচ্ছে।’

এই অবস্থা ঠেকাতে হাইকোর্ট বেশ কয়েক দফা নির্দেশনা জারি করেছে স্থানীয় সরকারসহ নানা সংস্থার জন্যে। এ কথাই বলছে সরকার সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু, হাইকোর্টের সে নির্দেশনাগুলোও সমন্বিত বাস্তবায়নের জন্যে এখনো পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে পবা।

পবা বলছে, এখনো পর্যন্ত দু-একটি বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ দেখা গিয়েছে। যেমন মেগা প্রজেক্টগুলোতে পানি ছিটানো, নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখা। কিন্তু, সামগ্রিকভাবে ফিটনেসবিহীন পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা, ঢাকার বায়ুমান যাচাই করা থেকে অন্য যা যা হাইকোর্টের নির্দেশনা ছিল তা মানা হচ্ছে না।

বিশ্বে বায়ু দূষণের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে মঙ্গোলিয়া, পঞ্চম স্থানে আফগানিস্তান, ষষ্ঠ স্থানে ওমান, সপ্তম স্থানে কাতার, অষ্টম স্থানে কিরগিজস্তান, নবম স্থানে ইন্দোনেশিয়া এবং দশম স্থানে বসনিয়া হার্জেগোভিনা। কেউ কেউ বলছেন রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ স্থানের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়ুর মান আবার খারাপ হতে শুরু করেছে।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  ঢাকা   দূষিত   রাজধানী   বাতাস  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]