কক্সবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ও চাঞ্চল্যকর মামলা নিষ্পত্তিকারী বিজ্ঞ জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছেন "কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি" ও জেলা বিচার বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সন্ধায় জেলা জজ আদালত এর সম্মেলন কক্ষে এই বিদায়ী সংর্বধনা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় তিনি দীর্ঘ কর্মজীবনের নানান অভিজ্ঞতার কথা স্মৃতিচারণ করেন। পরে রের্কড পরিমান চাঞ্চল্যকর মামলা নিষ্পত্তি করায়, এই বিচারককে জেলাবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান, জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। এসময় উপস্থিত সবাই তার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, সুস্থাতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। এসময় সহকারী জুডিসিয়াল জজসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাঁকে বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এর সরকারি চাকুরীর বয়সসীমা পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় তাঁর করা আবেদনের প্রেক্ষিতে আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৩ এর উপসচিব (প্রশাসন-১) মোহাম্মদ ওসমান হায়দার স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বুধবার (৯ আগস্ট) তাঁকে কক্সবাজার থেকে বদলি করে তাঁর চাকুরী আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। সরকারি চাকুরি বিধি অনুযায়ী মোহাম্মদ ইসমাইল আইন মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত হয়ে ১৪ আগষ্ট তিনি অবসরে চলে যাবেন বলে জানাগেছে। বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল কক্সবাজারের ১৭তম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে তিন বছর ৬ মাস ৮ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিয়ে আগামী ১০ আগষ্ট কক্সবাজারে শেষ কর্মদিবস অতিবাহিত করছেন। এর আগে তিনি বান্দরবান জেলার জেলা ও দায়রা জজ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
চট্টগ্রামের ভূজপুর উপজেলার সন্তান মোহাম্মদ ইসমাইল। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১০ম ব্যাচে এলএলবি অনার্সসহ এমএলএম সম্পন্ন করেন। তিনি বিসিএস (জুডিসিয়াল) ১০ম ব্যাচের একজন সদস্য।
কক্সবাজারে দায়িত্ব পালনকালে মাদক নিয়ে সরাসরি ধৃত হওয়া আসামীদের জামিন দিতে তিনি জামানত প্রথা চালু করেন। ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে গত কয়েক বছরে আসামীদের জামিনের জামানত খাতে ১৮ কোটি টাকারও বেশি অর্থ জমা করা হয়েছে। যা অন্যান্য জেলার আদালত সমূহেও অনুসরণ করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এছাড়া তিনি কক্সবাজারে প্রায় ৩০ হাজার মামলা নিষ্পত্তি করেন।
বিচারকালীন সময়ে নিষ্পত্তিকৃত মামলা সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দায়রা মামলা (মাদক ও হত্যা মামলা)-৯৩টি, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা- ১৪৩টি, স্পেশাল মামলা ২টি, ক্রিমিনাল আপীল-- ১৯৭টি, ক্রিমিনাল বিভিশন-৫৮৫টি মামলা নিষ্পত্তি করেন।
আলোচিত কয়েকটি হত্যা ও মাদক মামলা হলো,
(১) দেশব্যাপী বহুল আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলা (এস.টি মামলা নং-৪৯৩/২০২১) এ ৩১/০১/২০১২ইং তারিখের রায়ে ২জন কে মৃত্যুদন্ড ও ৩ জন কে যাবজ্জীবন কারাদ- ও প্রত্যেককে ৫০,০০০/- টাকা জরিমানার আদেশ প্রদান করা হয়।
(২) টেকনাফের চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত আলো হত্যা মামলা (এস টি মামলা নং-২০৮২/২০১৮) এ ১১/০৫/২০২২ইং তারিখের রায়ে ৩ জন আসামীকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়।
(৩) কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ছাত্র কাসাল হত্যা মামলা (এস.টি মামলা ১২৮/২০১৮) এ ৩১/০৮/২০১২ইং তারিখের রায়ে ৪জন আসামীকে মৃত্যুদ- ও ২জন আসামীকে আমৃত্যু কারাদ- এবং প্রত্যেককে ৫০,০০০/- টাকা জরিমানা করা হয়।
(৪) টেকনাফে ৩০/- টাকা মূল্যমানের কাঠালের জন্য দিনদুপুরে খুন করায় (এস.টি মামলা - ০১/০৬) এ ২৮/১০/২০২০ইং তারিখের রায়ে ১জন আসামীকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। আলোচিত কাঠাল হত্যা ও ১৩ লক্ষ পিস মামলায় ১৮জন কে মৃত্যুদন্ড ।
(৫) কক্সবাজার সদরে উদ্ধারকৃত বিপুল পরিমান ১৪ লক্ষ পিস ইয়াবা উদ্ধারের মামলা (এস.টি মামলা নং-১৩৫৬/২০২১) এ ১৬/১১/২০১২ ইং তারিখের রায়ে ৪ জন আসামীকে মৃত্যুদন্ড ও প্রত্যেককে ৫০,০০০/- টাকা করে জরিমানা আদেশ প্রদান করা হয়।
(৬) কক্সবাজার এর কলাতলীতে আলোচিত সুইট হোম রিসোর্ট এ হত্যা মামলা ( এস,টি মামলা নং-১১৮২/২০২১) এ ৩০/১১/২০২২ইং তারিখের রায়ে ২জন আসামীকে আমৃত্যু কারাদ- ও ১০,০০০/- টাকা জরিমানা আদেশ প্রদান করা হয়।
(৭) ডি.বি এর পুলিশ কর্তৃক অপহরণ ও চাঁদাবাজীর আলাচিত মামলা (এস টি মামলা নং- ১০২১/২০১৯) এ ২০/০৯/২০২২ইং তারিখের রায়ে জন আসামীকে পেনাল কোড এর ৩৬৫ ধারার অভিযোগে ৫বছর সশ্রম কারাদ- ও প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং পেনাল কোড এর ৩৮৬ ধারার অভিযোগে প্রত্যেককে এবছর কারাদন্ড ও ২লক্ষ টাকা জরিমানার আদেশ প্রদান করা হয়।
(৮) দুইলক্ষ পঞ্চান্ন হাজার পিচ এর মানক মামলা (এস.টি মামলা নং-১৫৯৭/২০১৯) এবং ২০/১১/২০২২ইং তারিখের রায়ে ৫জন আসামীকে ৫ বছর সশ্রম কারাদ- ও প্রত্যেককে ১০,০০০/- টাকা জরিমানার আদেশ প্রদান করা হয়।
(১১) কক্সবাজার শহররে ১৪লক্ষ পিস ইয়াবা উদ্ধারে মামলা (এস.টি মামলা নং ৩৩২/২০২৩) এ ১৬/০৩/২০২৩ইং তারিখের রায়ে ৩ জন আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারা ও ১২লক্ষ টাকা জরমিানার আদশে প্রদান করা হয়।
(১২) উখয়িার আলোচতি স্বামী কর্তৃক স্ত্রী হত্যা মামলা (এস টি মামলা নং ৮৭৬/২০১৮) এ ৩০/১১/২০১২ইং তারখিরে রায়ে ১জন আসামীকে আমৃত্যু সশ্রম কারাদন্ড ও ১০,০০০/ টাকা জরমিানার আদশে হয়।
(১৩) চকরিয়ার আলোচতি মোহাম্মদ হোসন হত্যা মামলা ( এস টি মামলা নং ২০৯/২০১৬) এ ৭/০৮/২০১৩ইং তারখিরে রায়ে ১জন আসামীকে আমৃত্যু, ২জন আসামীকে যাবজ্জীবন ও প্রত্যেককে) ২০হাজার টাকা জরমিানার আদশে হয়। এছাড়া র্মাচ ২০২২ হতে জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত ফৌজদারী কার্যবিধি আইনরে ৫১৩ ধারা মতে ১৮ কোটি ৬০লক্ষ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা জামানত আদায় করে দিয়েছেন।
কর্মোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সম্ভব
নববর্ষের আনন্দ যেন বিষাদের কারণ না হয়: রাষ্ট্রপতি
পাল্টাপাল্টি হামলা-মামলায় উত্তপ্ত পাবনা ১: আসামীরা ঘুরছে প্রকাশ্যে!
মহাসমাবেশ স্থগিত করলো হেফাজতে ইসলাম
বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
রিজার্ভে বাংলাদেশের উন্নতি
