১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট একই সূত্রে গাঁথা: ড. শাহিনূর রহমান
প্রকাশ: শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০২২, ১১:২৫ পিএম

১৫ই আগস্ট ও ২১শে আগস্ট হত্যাকাণ্ড একটু ভিন্নমাত্রিক ঘটনা। ১৫ই আগস্টের হত্যাকাণ্ড কিন্তু কোন স্বাভাবিক হত্যাকাণ্ড না। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে কিন্তু ১৫ই আগস্টের মতো এভাবে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি। ১৫ই আগস্টের অসম্পূর্ণ কাজটি এই ঘাতক চক্র ২১শে আগস্ট সম্পূর্ণ করতে চেয়েছিল।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৮০২তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহিনূর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার বিশেষ প্রতিনিধি উৎপল দাস।
ড. শাহিনূর রহমান বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট একই সূত্রে গাথা। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১ দিনেই খোকাবাবু থেকে বঙ্গবন্ধু হননি। একটি অজো পাড়াগাঁয়ে কোটালিপাড়া গ্রামে যেখানে কেবলই পানি নদী, ওখানে নৌকা ছাড়া আর কিছুই চলাচল করতো না, সেখান থেকেই এরকম একজন মহান নেতা শুধু জাতীয় না যে বিশ্বের একজন নেতা হতে পেরেছিলেন এবং কাজ করে গিয়েছিলেন পুরো বিশ্বের জন্য। এজন্যই বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছেন আমাদের জাতির পিতাকে বিশ্বনেতা হিসেবে। তিনি কখনোই নেতা হতে চাননি কিন্তু তিনি তাকে মানুষ নেতা বানিয়েছে কারণ মানুষ তাঁর প্রতি আস্থাশীল ছিলেন। তাঁর সততা, নিষ্ঠা, তাঁর কর্ম দক্ষতার মধ্যে যে লিডারশীপ কোয়ালিটি অর্থাৎ একজন মানুষের যে নেতৃত্বের গুণাবলী থাকা দরকার যার মানবতাবোধ মানুষকে ভালোবাসতে শেখায় সেটা তাঁর মধ্যে ছিল এবং বিশেষ করে তাঁর কথা বলার মধ্যে যে আন্তরিকভাবে মানুষকে সম্মান করার মধ্য দিয়ে যে কারিশমা তিনি অর্জন করেছেন এবং আমি মনে করি এটা ছিল একজন বিরল কৃতিত্বের অধিকারী। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এই ভূখণ্ডের সব আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন সংগঠক হিসেবে এবং নেতৃত্বে। বন্ধুর পথে চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করেই তিনি পেয়েছিলেন বাঙালি জাতির অকৃত্রিম ভালোবাসা। জেল-জুলুম ছিল তাঁর জীবনের নিত্যসঙ্গী। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকদল ও তাদের প্রকাশ্য-নেপথ্যের মদদদাতারা ভেবেছিলে, বঙ্গবন্ধুকে তারা মুছে ফেলতে পেরেছে। কিন্তু তারা কল্পনাও করতে পারেনি যে, বঙ্গবন্ধু জাতির চোখের সামনে থেকে সরে গিয়ে স্থান করে নিয়েছেন চোখের তারায়, হৃদয়ের গভীরে, যে আসন থেকে কোনো অপশক্তি তাঁকে সরাতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু নেই, কিন্তু আছে তাঁর আদর্শ। আছেন তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর দক্ষ ও গতিশীল নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে তৎপর লাখো-কোটি কর্মী। সেই রয়ে যাওয়া আদর্শকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সেই ঘাতক দালালরা আরেকটি রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট ঘটাতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় দলীয় কার্যালয় ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সেসময় সারা দেশে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাস ও বোমা হামলার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ একটি প্রতিবাদ সভায় শেখ হাসিনার বক্তৃতার শেষ দিকে মুহূর্তেই শুরু হলো নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হতে লাগলো একের পর এক গ্রেনেড। আর জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ মুহূর্তেই পরিণত হলো মৃত্যুপুরীতে। শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে খই ফোটার মতো একের পর এক গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় ঘাতকরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ১৩টি গ্রেনেড হামলার বীভৎসতায় মুহূর্তেই রক্ত-মাংসের স্তূপে পরিণত হয় সমাবেশস্থল। একুশে আগস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ক্ষমতাসীন দল ও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এমন হামলার ঘটনা পৃথিবীতে বিরল।