মঙ্গলবার ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: বিএনপির বড় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা আ.লীগের সতর্কতায় বিফল: তথ্যমন্ত্রী   সংকটকে সম্ভাবনায় রূপ দিতে কাজ করছে সরকার: কাদের   নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে ৩ জনের মৃত্যু   ‘কিছুই করি নাই শ্রেণিটা’ চোখ থাকতেও দেখে না: প্রধানমন্ত্রী   রাজকে আমার জীবন থেকে ছুটি দিয়ে দিলাম: পরীমনি   সৌদি আরবের ক্লাবে যোগ দিলেন রোনালদো   বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
দাদনের জাতায় পিষ্ঠ উপকুলের জেলে জীবন!
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২, ৮:৩৯ পিএম

দাদনের ভয়াবহ জাতায় পিষ্ঠ উপকুলের ১৪ হাজার ৬’শ ৮৯ জেলের জীবন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দারিদ্রের শেকলে বাঁধা তারা। তাদের দারিদ্রের কষাঘাতের সুযোগ লুফে নিচ্ছেন দাদন ব্যবসায়ীরা। দরিদ্র জেলেরা দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। দাদনের কারনে মাছের ন্যায্য মুল্য থেকে বি ত তারা। দাদন ব্যবসায়ীদের জিম্মিদশা ও দাদনের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে সরকারীভাবে সহযোগীতার দাবী জানিয়েছেন জেলেরা। দাদন ব্যবসায়ীদের করাল গ্রাস থেকে জেলেদের মুক্ত করতে আমতলী উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর ১৩’শ জেলেদের মাঝে কম সুদে ঋণ, সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকুরীর ব্যবস্থা ও পরিবেশ বান্ধব জাল বিতরন করা হয়েছে।

জানাগেছে, উপকুলীয় অ ল আমতলী ও তালতলীতে ১৪ হাজার ৬’শ ৮৯ জন নিবন্ধনধারী জেলে রয়েছেন। এর মধ্যে আমতলীর ৬ হাজার ৭’শ ৮৯ এবং তালতলীর ৭ হাজার ৯’শ জেলে। এরা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। বংশ পরম্পরায় তারা এ পেশা ধরে রেখেছেন। সারা বছর মাছ শিকার করেই চলে তাদের সংসার জীবন। সাগর, নদী ও খালে মাছ ধরা পড়লে ভালো চলে তাদের জীবন সংসার। আর মাছ ধরা না পড়লে উনুনে পাতিল উঠে না বলে জানান জেলে আল আমিন  ও সোলায়মান । জেলে পরিবারগুলোর মাঝে শিক্ষা নেই বললেই চলে। ফলে দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে অতি সহজে তারা জিম্মি হয়ে যান। উপকুলীয় অ লের গভীর সাগরে, সাগরের কিনারে এবং সাগরের শাখা প্রশাখা নদী ও খালে পাঁচ শ্রেনীর জেলে মাছ শিকার করছেন। জেলেদের মাছ শিকারে জাল, নৌকা, ট্রলার ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু জাল নৌকা ও ট্রলার তৈরিতে প্রয়োজনী টাকা না থাকায় দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হন জেলেরা। দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হলেই তাদের হাতে তারা জিম্মি। মাছ ধরা পরলেই ফুরফুরে মেজাজে দাদন ব্যবসায়ীদের। জেলেদের সংসার চলুক আর নাই চলুক আসল টাকা রেখে ব্যবসার টাকা তুলে নেন তারা। এছাড়াও দাদন ব্যবসায়ীদের মর্জির উপর চলে জেলেদের সংসার জীবন এমন অভিযোগ কয়েকজন জেলের। দাদনের কারনে মাছের ন্যায্য মুল্য থেকে বি ত হন তারা। তাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই নেমে আসে মানষিক ও শারিরিক নির্যাতন। ইলিশের ভরা মৌসুম আষাঢ়, শ্রাবন, ভাদ্র ও আশি^ন মাস। এ চার মাসে চলে দাদন ব্যবসায়ীদের রমরমা বানিজ্য। কেজি প্রতি ইলিশের মুল্য ১০০-২০০ টাকা কমিয়ে জেলেদের দেয়া হয় । এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেই দাদনের টাকা ফেরত দিতে চাপ দেয় দাদন ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ জেলে ছত্তার, লাল মিয়া ও  জয়নাল । দাদন ব্যবসায়ীদের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেতে জেলেরা সরকারের কাছে জাল নৌকাসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের দাবী জানিয়েছেন। জেলেরা বলেন, এক ফার (৪৫০ হাত) জাল ও নৌকা তৈরি করতে অন্তত ৬৫ হাজার টাকা খরচ হয়। ওই পরিমান টাকা জেলেদের হাতে থাকে না । তাই দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হতে হয়। তারা আরো বলেন, দাদন টাকা ছাড়া কোন জেলে নেই। দাদনের টাকা নিলেই জেলেরা দাদন ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি। তারা ইচ্ছেমত মাছের দাম জেলেদের নির্ধারণ করে দেন। ওই নির্ধারিত দামেই তাদের মাছ বিক্রি করতে হয়। এতে ইলিশসহ মাছের ন্যায্য মুল্য থেকে জেলেরা বি ত হচ্ছেন।

জেলে ছত্তার ও সিদ্দিক বলেন, গত বছর দুই ফার (৯০০ হাত) জাল ও নৌকা এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় তৈরি করেছি। ওই টাকা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এনে পরিশোধ করতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দাদন টাকা আনা মানেই দাদন ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি। তারা যেমন ইলিশের দাম নির্ধারণ করেন দেন তেমন নিতে হয়। এতে আমরা ন্যায্য মুল্য থেকে বি ত হচ্ছি। সরকারীভাবে জেলেদের জাল নৌকা বিতরন করা হলে জেলেরা দাদন ব্যবসায়ীদের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পেতো।  

লাল মিয়া বলেন, ৬৫ হাজার টাকা দাদন নিয়ে এক ফার জাল নৌকা তৈরি করেছি। গত ছয় বছরেও এ টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। 

আমতলী গুলিশাখালী ইউনিয়নের নাইয়াপাড়া গ্রামের শামিম, আলমগীর, আমানুল ও নাশির মাদবর বলেন, দাদন ছাড়া জেলেদের জীবন চলে না। প্রত্যেক জেলেরই কিছু না কিছু দাদন রয়েছে।

একই এলাকার নাঈম বলেন, গত ১১ বচ্ছর ধইর‌্যা জাল নৌকা দিয়া ইলিশ মাছ ধরছি। আইজ পোর্যন্ত দাদনের টাহা শ্যাষ হরতে পারি নাই। কবে শ্যাষ হরমু হেইয়্যা কইতে পারি না।
নাইয়াপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ সৈয়দ আকন ও সোহরাফ বলেন, ইলিশ মাছ ধরতে ধরতে বুড়া অইয়্যা গ্যালাম কিন্তু দাদন শ্যাষ হরতে পারলাম না। শ্যাষ হরতে পারমু কিনা জানিনা। সরহার যদি মোগো জাল নৌকা বানাইয়্যা দিতো হ্যালে আর মহাজনদের ধারে যাইতে অইতো না। মোরা সরহারের কাছে জাল নৌকার দাবী হরি।

ফকিরহাট দাদন ব্যবসায়ী সুজন ফরাজী জেলেদের জিম্মি রাখার কথা অস্বীকার করে বলেন, লক্ষ লক্ষ টাকা খাটিয়ে সারা বছর জেলেদের পাশে থাকি। জেলেদের মাছ বিক্রির টাকা থেকে কিছু কমিশন নেই।  তিনি আরো বলেন, যখন বেশী মাছ ধরা পড়ে তখন কিছু কিছু কেটে রাখা হয়।
তালতলী ফকিরহাট মৎস্য সমিতির সহ-সভাপতি ইউপি সদস্য মোঃ ছালাম হাওলাদার বলেন, অধিকাংশ জেলেই দরিদ্র। দাদন ছাড়া জেলেরা চলতে পারেনা। জাল নৌকাসহ  প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র তৈরিতে যে পরিমান টাকার প্রয়োজন ওই পরিমান টাকা জেলেদের কাছে হয়ে উঠে না। তাই বাধ্য হয়েই দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে যেতে হয়। সরকারী ভাবে জেলেদের জাল নৌকা বিতরন করা হলে জেলেরা দাদন ব্যবসায়ীদের কবল থেকে কিছুটা মুক্তি পেত।

আমতলী উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা সায়েদ মোঃ ফারাহ বলেন, মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে সাসটেইনেবল কোষ্টাল এন্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের অধিনে উপজেলার ১০ টি গ্রামের ১৩ ’শ জেলে পরিবারকে প্রয়োজন অনুসারে ৮% হারে ২০ হাজার টাকা ঋণ এবং বেকার জেলেদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকুরীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দাদনের ভয়াবহতা থেকে জেলেদের মুক্তি দিতে ওই প্রকল্পের অধিনে ইতিমধ্যে ৩০ জেলেদের মাঝে পরিবেশ বান্ধব জাল বিতরন করা হয়।  



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com