তবে এ সময়ের মধ্যে দুই শিশুর বাবা ইমরান শরীফ প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে যেকোনও সময় সন্তানদের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেয়েছেন।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।
আদালতে ইমরান শরীফের আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে ডা. নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
গত ২১ নভেম্বর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাটি চলমান প্রক্রিয়াধীন রেখে রায় দেন।
হাইকোর্ট ডা. নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিক ইমরান শরীফের কাছেই দুই কন্যাশিশুকে রাখার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত বলেন, জাপানি মা বছরে তিনবার বাংলাদেশে এসে ১০ দিন করে দুই শিশুর সঙ্গে থাকতে পারবেন। এছাড়া প্রতি মাসে দুই সপ্তাহ পরপর ভিডিও কলে শিশুরা মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। দেশে থাকাকালে ডা. নাকানো এরিকোর খরচ ইমরান শরীফকেই বহন করতে হবে। পাশাপাশি শিশুদের মাকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ইমরান শরীফকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ছোট আরেক কন্যাশিশুকে নিয়ে করা বাবার রিট খারিজ করে দেন আদালত। পরে সেই রায়ের বিরুদ্ধে গত ৫ ডিসেম্বর আপিল করেন ডা. এরিকো নাকানো।
দুই মেয়েকে হাইকোর্টে হাজির করতে রিট জমা দেন জাপান থেকে আসা ডা. এরিকো নাকানো। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ আগস্ট ইমরান শরীফের জিম্মায় থাকা দুই সন্তানকে ৩১ আগস্ট হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে দুই শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগে তাদের মা পৃথক মামলা করলে তাদের উদ্ধার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এরপর তাদের তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছিল। ইমরান শরীফের জিম্মা থেকে দুই শিশুকে সিআইডি কর্তৃক উদ্ধারের পর গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ৩১ আগস্ট শিশুদের হাইকোর্ট হাজির করতে এবং এ সময়ের মধ্যে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখার প্রচেষ্টা চালাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।
গত ৩১ আগস্ট বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের দুই সন্তানকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পরিবর্তে গুলশানে একটি বাসায় বসবাসের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ঢাকার সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক পদের একজন বিষয়টি তদারকির দায়িত্ব পান। পাশাপাশি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামকে পরিবারটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়। এ সময়ের মধ্যে দুই পক্ষকে বিষয়টি সুরাহা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন আদালত। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় দুইপক্ষের আইনজীবীদের আলোচনায় বসার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে কোনও সুরাহা না হওয়ায় মামলাটি পুনরায় শুনানিতে ওঠে। এদিকে জাপানে থাকা তৃতীয় কন্যাশিশুকে হাজির করানো ও দেখা করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক আরেকটি রিট দায়ের করেন তার বাবা ইমরান শরীফ।