
পটুয়াখালীর বাউফলে মুক্তিযোদ্ধা অডিটরিয়ামে রাখা কোটি টাকার বই নষ্ট হলেও কোন রকম অনুভূতি নেই কর্তৃপক্ষের। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বইপ্রেমীরা বিরুপ মন্তব্য করলেও একে অপরকে দোষারোপ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফলে ৬১ টি মাধ্যমিক ও ৬৭ টি দাখিল পর্যায়ের এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক কলেজিয়েট স্কুল ও আলিম ফাজিল প্রতিষ্ঠান হিসাবে শিক্ষাদান করছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের সকল বই জমা রাখা হয় উপজেলার সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী মুক্তিযোদ্ধা অডিটরিয়াম ভবনে। এখান থেকেই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছে দেয়া হয় নতুন বই।
কিন্তু সরজমিনে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটানোর পরেও ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সনের ষষ্ঠ সপ্তম অষ্টম ও নবম শ্রেনীর মাধ্যমিক ও দাখিলের ২৬শ স্কয়ার ফুটের ৩ টি ভবনের নিচে অযত্ন অবহেলায় পরে রয়েছে হাজার হাজার বইয়ের স্তুপ।
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বৃষ্টির পানি ও বাথরুমের ময়লা পানিতে একাকার হয়ে পচে গলে যাচ্ছে বইয়ের স্তুপগুলো।
পরিত্যাক্ত অবস্থায় ময়লার ভাগারে পরিনত হয়েছে বইগুলো। সুযোগ বুঝে স্থানীয় অসাধু লোকজন বইগুলো সঙ্গোপনে ফেরিওয়ালা ও দোকানীদের কাছে বিক্রি করে চলছে।
নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানগন প্রতিষ্ঠানের চাহিদানুযায়ী তালিকা তৈরি করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। শিক্ষা কর্মকর্তা ওই তালিকা যাচাই বাছায় করে জেলায় প্রেরণ করেন।
শিক্ষা অধিদপ্তর চাহিদা মোতাবেকই মাধ্যমিক ও দাখিল পর্যায়ের সকল শ্রেনীর পাঠ্যপুস্তক উপজেলায় প্রেরন করে থাকে। সেখান থেকেই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বইগুলো বিতরন করা হয়।
বইগুলো রক্ষনাবেক্ষনের জন্য রয়েছে ৫ সদস্য কমিটি, যেখানে নিয়োগ দেয়া আছে একজন প্রহরীকে। কিন্তু বাস্তবে এসব কিছুই নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, নৈশ প্রহরি ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য যেসব অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় তা কাজে না খাটিয়ে আত্মসাৎ করছেন দায়িত্বে থাকা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান।
মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম রাসেল সুমন জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থী বই পাচ্ছেনা। অতচ এখানে লক্ষ লক্ষ বই নষ্ট হয়ে পচে গলে যাচ্ছে।
স্থানীয় দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থী সৌরভ একাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী সুমন জানান, বইগুলো বাইন্ডিং করা অবস্থায় পরে থাকায় আমরা ক্রিকেটের স্টাম্প হিসাবে ব্যবহার করছি।
বাউফল মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নার্গিস আক্তার জাহান বলেন, তার ক্যাম্পাসের পাশেই মুক্তিযোদ্ধা অডিটরিয়ামে বইগুলো রাখা হয়েছে , কিন্তু হাজারো বই পানিতে নষ্ট হচ্ছে, এবং বইগুলো প্রায়ই স্থাণীয় কিছু লোকজন বিক্রি করছে। অনেক সময় নৈশ প্রহরি তাদেরকে ধরতে সক্ষম হলেও কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারনে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। বিষয়টি তিনি মাধ্যমিক অফিসারকে অবহিত করেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্যে বিনামুল্যে সরকারের দেয়া পাঠ্য বই নষ্ট হতে পারেনা। তবে তিনি মাত্র ৭ মাস দায়িত্ব গ্রহন করেছেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন।
পদাধিকার বলে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, আমার পদোন্নতি হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আমাকে জড়িয়েন না।
পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বই নষ্ট হয়ে থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবো।