
ইসরায়েল আবারও নতুন কৌশল নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শক্তি প্রদর্শন করছে। দেশটি দুটি অতিরিক্ত কেসি-৪৬ বিমান রিফুয়েলিং জেট কিনছে, যা তাদের দীর্ঘ দূরত্বের আক্রমণ ক্ষমতা আরও জোরদার করবে। ওয়াইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য ইরানের গভীর অঞ্চলে দীর্ঘ সময় ধরে বিমান অভিযান পরিচালনা করার সক্ষমতা অর্জন করা।
নতুন রিফুয়েলিং বিমানগুলো ইসরায়েলের পুরনো ফ্লিটের পরিবর্তে ব্যবহার করা হবে। এর আগে এই ফ্লিট ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এবং চলতি বছরের জুনে ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই সময় ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ইরানের আকাশে আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
জুনে ইসরায়েল হঠাৎ সামরিক অভিযান চালিয়ে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। এতে নিহত হন ১,০৬২ জন, যার মধ্যে ২৭৬ জন নিরীহ বেসামরিক নাগরিকও ছিলেন। পাল্টা আক্রমণে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়, যেখানে সরকারি হিসাবে ৩২ জন ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হন। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও উত্তেজনা কমেনি; বরং দুই দেশই নতুন সংঘাতের জন্য প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ডস প্রধান মোহাম্মদ পাকপোর সতর্ক করে বলেছেন, “যদি আবারও আগ্রাসন ঘটে, ইসরায়েল এমন ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে যা তারা কোনোদিন ভুলতে পারবে না।”
এছাড়া ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসির জাদেহ জানিয়েছেন, দেশটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে গোপনে অস্ত্র কারখানা স্থাপন করছে এবং শিগগিরই এর অবস্থান প্রকাশ করা হবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি কৌশলগতভাবে বড় পদক্ষেপ—যা ইরানের সামরিক উপস্থিতি কেবল নিজ দেশে নয়, দূরবর্তী অঞ্চলেও বিস্তৃত করার ইঙ্গিত বহন করছে।
লেবাননে হিজবুল্লাহ, গাজায় হামাস, ইরাকে কাতেব হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের সহায়তা করছে ইরান। এমনকি সিরিয়াতেও তারা অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করেছিল, যদিও এর অনেকগুলো ইসরায়েল ধ্বংস করেছে। ফলে আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যে এক অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হয়েছে।
নতুন বিমান সংগ্রহের মাধ্যমে ইসরায়েল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তারা প্রতিরক্ষায় সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দূরদূরান্তের আক্রমণ ক্ষমতায়ও পূর্ণ প্রস্তুত। অন্যদিকে ইরানও প্রমাণ করতে চাইছে, তারা শুধু নিজেদের রক্ষায় নয়, প্রয়োজনে আক্রমণ চালাতেও সক্ষম।
এই প্রস্তুতি, প্রতিরক্ষা ও প্রতিশোধের খেলাই মধ্যপ্রাচ্যে নতুন উত্তেজনার চক্র তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি আবারও বড় ধরনের সংঘাতে রূপ নিতে পারে, যা সীমান্ত ছাড়িয়ে গোপন অস্ত্র কারখানা, দূরপাল্লার সামরিক অভিযান এবং কৌশলগত অবস্থানের মতো ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়েছে।
শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা থাকলেও, বর্তমান বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্যের স্থায়ী শান্তি এখনো প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করা হচ্ছে।