
প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও জাপানমুখী শ্রমবাজারে আশার বার্তা দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি জানান, প্রবাসীদের নিরাপদ, স্বল্প ব্যয়ে এবং প্রতারণামুক্ত কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকার একাধিক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, প্রথমবারের মতো মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি কর্মী প্রেরণের জন্য শতভাগ অনলাইন ব্যবস্থাপনা চালু করায় খরচ ও ভোগান্তি কমেছে এবং প্রতারণার সুযোগও হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া সরকার আশ্বাস দিয়েছে, বাংলাদেশের গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য "গ্রাজুয়েট প্লাস ভিসা" চালু করা হবে, যার আওতায় পড়াশোনা শেষে তারা চাকরির সুযোগ পাবেন।
তিনি আরও জানান, প্রায় ৭ হাজার ৯০০ শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া একচেটিয়া সিন্ডিকেট ভেঙে সব রিক্রুটিং এজেন্টকে সমান সুযোগ দিতে বাংলাদেশ পক্ষ থেকে জোরালো দাবি জানানো হয়েছে।
সৌদি আরবের সঙ্গে নতুন একটি নিরাপদ শ্রম প্রেরণ চুক্তি (MoU নয়, পূর্ণাঙ্গ চুক্তি) স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এর মাধ্যমে শ্রমিকরা কম খরচে নিরাপদে সৌদি যেতে পারবেন। ইতোমধ্যে সৌদি সরকার বিভিন্ন অপরাধে আটক ১,৮৭৬ বাংলাদেশিকে মুক্তি দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকেও ১৮৮ জনকে দেশে ফিরিয়ে এনে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা জানান, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের সুদের হার ১% কমানো হয়েছে, মূলধন বাড়ানো হয়েছে এবং সরাসরি রেমিট্যান্স পাঠানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। ওয়েজ আর্নার বন্ডের সীমাও তুলে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, জাপানে আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। এজন্য ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধিতে জাইকার সহযোগিতায় জাপানি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান বাড়াতে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে ফিনান্সিয়াল গ্যারান্টার হিসেবে যুক্ত করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা শুধু মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকব না। জাপান, কোরিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দিকেও নজর দিচ্ছি। এই পদক্ষেপগুলো অব্যাহত থাকলে আগামী দুই–তিন বছরের মধ্যে বিদেশে কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় পরিবর্তন আসবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তাদের কল্যাণে আরও অনেক কিছু করার প্রয়োজন আছে। আমরা শুধু ভিত্তি গড়ে দিয়েছি, ভবিষ্যৎ সরকার এগুলো অব্যাহত রাখলে প্রবাসীরা সুখে ও সম্মানের সঙ্গে বিদেশে থাকতে পারবেন।”