যাদের মুক্তিযোদ্ধা সহকর্মী হিসেবে পাই, ধরে নিতে পারেন, ৯০ ভাগই ভুয়া: দুদক চেয়ারম্যান

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘কর্মজীবী হিসেবে আমি চাকরি জীবনে যাদের মুক্তিযোদ্ধা সহকর্মী হিসেবে পাই, তাদের ধরে নিতে পারেন ৮০ থেকে ৯০ ভাগই ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। আবার ৫ আগস্টের পর প্রায় দেখি, লক্ষ করি, সমন্বয়ক হাজির হন। এ সমন্বয়কেরা আদৌ সমন্বয়ক ছিলেন কি না, এটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। কাজেই এটাও আরেক সিনড্রোম, ভুয়া সমন্বয়ক সিনড্রোম। রংপুরে এই অনাচারটা কম। যদি এ রকম অনাচার থেকে থাকে, তাদের প্রতিরোধ করুন।’
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের কাছে দুদক চেয়ারম্যান এমন মন্তব্য করেন। রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মরত কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা শীর্ষ মতবিনিময় সভা হয়।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা কিন্তু ’৭১ সালে ফেল করেছি, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ষা করতে। যে জন্য ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানেরা পরবর্তী সময়ে ভালোভাবে বিরাজ করতে পেরেছে।’
চেয়ার বাঁচাতে আমলারা নিজেরাই রাজনীতিবিদদের কাছে যায়—উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটা পর্যায় পর্যন্ত বিশ্বাস করতাম যে প্রশাসনের রাজনীতিকীকরণ হয়। কিন্তু এখন আসলে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। আমি আমার চেয়ারটা রক্ষা করার জন্য, আমি একটা প্রমোশন পাওয়ার জন্য, একটা বাড়তি সুযোগ পাওয়ার জন্য আমি কিন্তু রাজনীতিবিদের কাছে যাই। আমি গিয়ে বলি, প্লিজ গেট মি পলিটিসাইজ। আমি আপনার, আমি আপনাদের। কাজেই বড় রকম একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। যেখান থেকে আমাদের ফিরতে হবে।’
মামলা ঝুলে থাকার বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বহুদিন ধরে অনেক মামলা ঝুলে আছে। মামলা ঝুলে থাকে আদালতে, দুর্নীতি দমন কমিশনে না। আদালতেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। নিশ্চয় আমরা চাব যে ঝুলে থাকা মামলাগুলো যেন শেষ হয়। দুদকের কাজ বিচার করা না, দুদকের কাজ হচ্ছে মামলা প্রস্তুত করে কোর্টে দেওয়া। কাজেই আমরা চেষ্টা করব, কোর্টকে অনুরোধ মামলাগুলো যেন দ্রুত নিষ্পত্তি করে দেন।’
দুদকের ধামাচাপা পড়া মামলা পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘বেশ কিছু পুরোনো মামলা আছে, নতুন মামলাও আসছে। পুরোনো অনেক মামলা বিভিন্ন কারণে ধামাচাপা অবস্থায় ছিল। এর কারণ আমি ব্যাখ্যা করতে চাই না। আমরা সেই মামলাগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি এবং নতুন যে মামলাগুলো আছে, সেগুলো আমরা দেখছি।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুর্নীতির বিপক্ষে উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক সরকার নয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের নেতৃত্বে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি একেবারেই দুর্নীতির বিপক্ষের একজন মানুষ। তাঁর উপদেষ্টা পরিষদের যে কেউ হন, সে ক্ষেত্রেও বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নন। আমাদের যে বিধিবদ্ধ আইন, তাতেও ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটা ব্যাপার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যে অভিযোগ করব, অভিযোগ যেন সুনির্দিষ্ট হয়।’