
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহামুদুল হকের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (২০ জুন) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, একজন হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে হত্যার শিকার দেখিয়ে একটি ভিত্তিহীন মামলা সাজানো হয়েছে এবং সেখানেই ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বেরোবির শিক্ষক মাহামুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, অবিলম্বে তাকে মুক্তি দিতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
এ সময় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-
১. বেরোবির শিক্ষক মাহামুদুল হককে কোনো আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাই তাকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
২. ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে এবং পরবর্তী তিন কর্মদিবসের মধ্যে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীরা আগামী তিন কর্মদিবসের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।
তারা আরও বলেন, দাবিগুলো পূরণ না হলে থানা ঘেরাওসহ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক মাহামুদুল হকের স্ত্রী মাসুবা হাসান। তিনি বলেন, আমার স্বামী মাহামুদুল হক জুলাই অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সে কারণেই তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। কাউকে কিছু না জানিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনকি প্রয়োজনীয় পোশাক নেওয়ার সুযোগও দেওয়া হয়নি। আমার ছোট সন্তান প্রতিদিন জানতে চায়- বাবা কোথায়? আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। আমি আমার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই এবং যাঁরা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রংপুর মহানগরীর ধাপ এলাকার নিজ বাসা থেকে শিক্ষক মাহামুদুল হককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মো. সোয়েবুর রহমান তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে, ২০২৪ সালের ২ আগস্ট নগরীর রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় একটি মুদি দোকানে হামলার ঘটনায় ছমেস উদ্দিন নামের এক দোকানি নিহত হন। নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম ওই বছরের অনেক পরে হাজিরহাট থানায় মামলা করেন, যাতে মাহামুদুল হককে ৫৪ নম্বর আসামি করা হয়। মামলায় তাকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।
হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর প্রায় ১০ মাস পর দায়ের হওয়া এ হত্যা মামলায় কোনো তদন্ত ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।