বুধবার ২১ মে ২০২৫ ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শিরোনাম: ইশরাকের মেয়র পদ নিয়ে রিটের আদেশ কাল   সামিট গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরের চেষ্টা, আজিজ খানের সহযোগীর এনআইডি ব্লক   জাফলংয়ে হঠাৎ পাহাড়ি ঢল   স্থিতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতি বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার   কত টাকার সম্পদ জব্দ করেছে সরকার, জানালেন প্রেস সচিব   নুসরাত ফারিয়া গ্রেপ্তার: ফারুকীর মন্তব্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া   গৃহবন্দি লেকশোর হোটেল মালিককে হাজির করতে সন্তানদের রিট   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
নির্বাচন এপ্রিলের মধ্যে হওয়া উচিত: জামায়াত আমির
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ৭:৪৫ পিএম

প্রচলিত নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি তুলে ধরে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, “আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্বশীল ব্যবস্থায় নির্বাচন হতে হবে। বিশ্বের ৬২টি দেশ এটা অনুসরণ করে। বেশিরভাগ উন্নত দেশ, তারা এর সুফল পেয়েছে। এটা যারা একবার শুরু করেছে, তারা আর বাদ দেয়নি।”

শনিবার (৩ মে) সকাল ৯টায় ঢাকার মগবাজার এলাকার আল ফালাহ মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “অবশ্যই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হতে হবে। এই সুষ্ঠু এবং বস্তুনিষ্ঠার স্বার্থে কতিপয় সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। এ বিষয় আমরা আমাদের সুপারিশমালা সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলোর কাছে পেশ করছি। আমরা সকল দলের প্রতি আহ্বান জানাবো রাজনীতি নিজের জন্য নয়। রাজনীতি দেশ এবং জনগণের জন্য। আমরা যত বেশি সহযোগিতা করব, জাতি তত বেশি উপকৃত হবে। ততটাই আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু এবং সুন্দর হবে।”

জামায়াত আমির বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা বলেছি, অবশ্যই যারা অপরাধী তাদের বিচারটা দৃশ্যমান হোক- জাতি এটা দেখতে চায়। এ স্বল্প সময় সব বিচার করা সম্ভব নয়, এটা আমরাও বুঝি। কিছু বিচারতো করতে হবে। যাতে জাতির মনে আস্থা তৈরি হয়। যারা প্রধান অপরাধী তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃশ্যমান বিচার জাতির সামনে অবশ্যই উপস্থাপন করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা সরকারের একটা দুর্বলতা লক্ষ্য করি, বিচারের ক্ষেত্রে আমরা আরও গতি চাই। সরকার বেশি তৎপর হয়ে এই কাজটা করবে, এটা আমরা দেখতে চাই। যদি এদের বিচার হয় তাহলে আগামী নির্বাচনেও কালো টাকা এবং পেশী শক্তির প্রভাব খাটাতে পারবে না। আর এ রকমের দুঃসাহস হয়তো কেউ দেখাবে না। কিন্তু বিচার যদি না হয় এর আশঙ্কা তো থেকেই যাবে।”

জামায়াত আমির আরও বলেন, “আমরা এই নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য এবং জনমতের শতভাগ প্রতিফলন ঘটানোর জন্য আমাদের দেশের সংসদকে মানসম্পন্ন  দেখতে চাই। এজন্য নির্বাচনকে পেশীশক্তি এবং কালো টাকার প্রভাবমুক্ত করতে হবে।”

জামায়াত আমির বলেন, “২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের সঙ্গীরা বাংলাদেশকে শাসন এবং শোষণ করেছেন। পুরো সময় জুড়ে তারা এই দেশের বিরোধী দল, মত এবং বিশেষভাবে ইসলামপন্থী জনগণের উপর বিভিন্ন পর্যায় তাণ্ডব চালিয়েছে।”

তিনি বলেন, “দলটি কমপক্ষে তিনটি গণহত্যা সংঘটিত করেছে। প্রথম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায়। যেখানে আমরা হারিয়েছি ৫৭ জন চৌকস দেশপ্রেমিক প্রতিশ্রুতিশীল সামরিক অফিসার। এর পরে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে। আর তৃতীয় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে গত বছরের জুলাই মাসের মধ্য দিনগুলো থেকে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত।”

ফ্যাসিবাদের হাতে দলের অনেক নেতা সহকর্মী, বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং আলেম-উলামা  নির্যাতিত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ডা. শফিকুর বলেন, “গত বছরের আগস্ট মাসের ৫ তারিখ ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। আপনারা সাক্ষী প্রথম তিনদিন কার্যত কোনো সরকার ছিল না। এ রকম পরিবর্তন যেসব দেশে সংঘটিত হয়েছে সেখানে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমরা পারিপার্শ্বিক এ ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়েছি এবং খুবই অনুভব করছিলাম জাতিকে শান্তি-শৃঙ্খলা ও ধৈর্য ধরার আহ্বান করা প্রয়োজন। আমরা ৫ আগস্ট রাতেই সে কাজটা করেছিলাম।”

তিনি আরও বলেন, “এ পরিবর্তনের পর আমাদের প্রথম কাজ ছিল শহীদ পরিবারের কাছে যাওয়া এবং দাঁড়ানো। দল হিসেবে নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তারপরেও মানবিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে আমরা চেষ্টা করেছি শহিদ পরিবারের কাছে যাওয়ার। এরপর আমাদের অগ্রাধিকার ছিল যারা আহত এবং পঙ্গু হয়েছেন তাদের দিকে নজর দেওয়া।”

জামায়াতপ্রধান বলেন, “দেশে যদি অস্থিরতা বিরাজ করে, যদি দেশের অর্থনীতি মুখ থুবরে পড়ে- তাহলে আমরা সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এজন্য এখানে নাগরিক হিসেবে আমাদের সকলের দায় রয়েছে। তবে পরিবর্তনকামী একটি গঠনমূলক দল হিসেবে জামায়াতের দায় অনেক বেশি। এজন্য আমরা সমসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার চেষ্টা করি।”

তিনি বলেন, “সাড়ে ১৫ বছর ধরে যারা হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, খুন, লুণ্ঠন ও অপহরণ করেছেন, জনগণের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছেন তাদেরও আমরা ন্যায্য বিচার দাবি করি। তারা যেন কোনোভাবেই কোন ফাঁকফোকরে পার পেতে না পারে। আইনের আওতায় এনে তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ দাবি আমরা করে আসছি এবং করতেই থাকবো—বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের দাবি থাকবে।”

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা এরপরে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছিলাম, এ সরকার গঠিত হয়েছে জনআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে। তাদেরকে ন্যায়সঙ্গত কাজে সহযোগিতা করা। তাদের জনস্বার্থবিরোধী কোনো কাজ আমাদের সামনে ধরা পড়লে আমরা সহযোগিতা করব না, আমরা পরামর্শ দিব, প্রতিবাদ করব এবং ক্ষেত্র বিশেষে আবার প্রতিরোধ করব।”

তিনি বলেন, “অতিসম্প্রতি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিটি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর সুপারিশমালা পেশ করেছে। তারা কিছু সুপারিশমালায় কিছু কিছু সুপারিশ আল্লাহর বিধানের বিপক্ষে দাঁড় করিয়ে পেশ করা হয়েছে। তাদের এই সুপারিশ গ্রহণ করলে কুরআন পরিবর্তন হয়ে যাবে। অথচ আল্লাহ তায়ালা কুরআন নাযিল করে বলেছেন, কুরআন নাযিল করেছি আমি, রক্ষাও করব আমি। এখানে একটা হরফ, নুকতাও কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না।”

জামায়াত আমির বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী ২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছেন। ফেব্রুয়ারির শেষে এবং মার্চের তিন ভাগের দুই ভাগ সময় জুড়ে রোযা থাকবে, তার পরেই ঈদ। এই সময় কোনো নির্বাচনের সময় নয়। দু’টি সময় আমরা নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত মনে করি। একটি হচ্ছে ফেব্রুয়ারি মাস রোযা শুরুর আগে। আরেকটা হচ্ছে যদি কোনো কারণে এই সময়ের ভিতরে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে—তাহলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত নয়।”

তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের পরিবর্তনের পর শহীদের রক্ত ও পঙ্গু ভাই বোনদের প্রতি সকলের সম্মান দেখানো উচিত ছিল। কিন্তু কোনো কোনো কোন দল সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে, তাদের নিজেদের সহকর্মীদেরকে সামাল দিতে।”

ডা. শফিকুর বলেন, “বিশেষ করে আমরা দেখতে পাচ্ছি গাজায় ফিলিস্তিনের উপর বছরের পর বছর জুলুম করা হচ্ছে। আমরা চাই এটার অবসান হোক। পার্শ্ববর্তী দেশসহ যেখানে ছুতোনাতায় বিশেষ করে ধর্মীয় আবেগকে উসকে দিয়ে জুলুম করা হয়। এটা বন্ধ করা হোক।”

এ সময় দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে নির্যাতন জুলুমের শিকার হয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, “গত সাড়ে ১৫ বছরসহ স্বাধীনতার পর থেকে যারা দেশের সম্পদ চুরি করে বিদেশে পাচার করেছেন, এদের সকলের অপকর্মের শ্বেতপত্র জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। গত সাড়ে ১৫ বছরে ২৬ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। আমরা চাই পাঁচারকৃত সকল টাকা ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা দেওয়া হোক এবং জনকল্যাণে সেটা ব্যয় হবে।”

সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের পরিচালনায় সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা মো. শাহজাহান, অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়েরসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী ও কর্মপরিষদ সদস্য, জেলা ও মহানগরী আমিররা।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com