প্রকাশ: শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫, ১:২২ পিএম

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোটা দেশ উত্তাল হয়। নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে, তদন্ত শেষে র্যাব ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয় মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে, যা বাংলাদেশের বিচার ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল রায় দেন। রায়ে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাতজনকে খালাস দেওয়া হয়।
বর্তমানে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি হাইকোর্টের বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমান এবং বিচারপতি সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে চলছে। এই প্রেক্ষাপটে এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ সম্মেলনে চলমান শুনানি দ্রুত শেষ করে প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে তারা উল্লেখ করেছে, "রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী অপরাধী চক্র ও পলাতক ফ্যাসিস্টদের দোসররা বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত করার চেষ্টা করলেও, জনগণের প্রত্যাশা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।" তারা আরও জানিয়েছে, রায় ঘোষণার পরবর্তী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে, অন্যথায় এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।
এছাড়া, সংগঠনটি শিশু আছিয়া, পারভেজ ও তোফাজ্জলসহ জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে। তারা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—কোনো চাপ, প্রলোভন কিংবা রাজনৈতিক প্রভাব যেন ন্যায়বিচারকে বাধাগ্রস্ত না করতে পারে।
এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব লেফটেন্যান্ট সাইফুল্লাহ খান সাইফ (অবঃ) বলেন, "ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মতো নৃশংস ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলেই বিচার বিভাগ ও সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় হবে। একইসঙ্গে তা পলাতক অপরাধীদের বিচারের পথ আরও সুগম করবে।"
মেজর সিনহা হত্যা মামলা বাংলাদেশের আইন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় ও তার কার্যকরের দিকে এখন সারা দেশের নজর।