
ঢাকার ডেমরা ও নারায়ণগঞ্জের তারাবোর সংযোগকারী সুলতানা কামাল সেতুটি এখন চরম ঝুঁকিতে। সেতুটির গুরুত্বপূর্ণ অংশের কয়েকটি এক্সপানশন জয়েন্টের রাবার পুরোপুরি উঠে গেছে, এছাড়া জয়েন্ট ধরে রাখার চাপযুক্ত কংক্রিট ঢালাই নষ্ট হয়ে পাথর-ইট-বালু বের হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে জয়েন্টের মাঝখানে সম্প্রসারণ যুগ্ম ফাঁক ও পাশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, যা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটির এসব অংশ দোলে ওঠে। রেলিং ও ফুটপাতের কিছু অংশ ফেটে পড়েছে বহু আগেই। আর সেতুটির বেশিরভাগ বাতি অকেজো হওয়ায় রাতে অন্ধকারে পথচারীরা চলাচলে পড়ছেন চরম বিপাকে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
২০০৬ সালে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) এর তত্ত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং শেষ হয় ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ে। প্রায় ১,০৭২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৭৯.৮৮ কোটি টাকা। ২০১০ সালের জুন মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন।
সেতুটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী ঢাকার ডেমরা এলাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলার তারাবোর দ্রুত সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা। তবে দেড় দশক না যেতেই সেতুটি এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই ঝুঁকি নিয়েই সেতু দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে ছোট-বড় কয়েক হাজার যানবাহন। পায়ে হেঁটে চলাচল করছে পথচারীরা। সেতুটির উপর অংশে গিয়ে দেখা যায়, যানবাহন চলাচল এর সময় ভাংগা অংশটি সজোরে কেঁপে উঠে। অনেক স্থানে ফাটলও দেখা গিয়েছে।
সেতু দিয়ে চলাচলরত ট্রাকচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু পাড় হই। রাবার উঠে যাওয়ার কারণে ট্রাকের টায়ার পিছলে যায়, ব্রেক ঠিক মতো কাজ করে না। এটির দ্রুত সংস্কার করা উচিত।
নিয়মিত সেতু দিয়ে চলাচলকারী গার্মেন্টস কর্মী রাবেয়াসহ কয়েকজন বলেন, ফুটপাতের অনেক অংশ ভেঙ্গে গেছে। যখন ভারী যানবাহন চলাচল করে তখন ভাংগা অংশগুলো প্রচন্ড জোরে কেঁপে উঠে। রাতে চলাচল করতে আমাদের ভয় লাগে। কারন জানতে চাইলে বলেন, ব্রীজের বেশীরভাগ লাইট জ্বলে না। ফলে অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সেতুর উপরের বেশিরভাগ সোডিয়াম বাতি না জ্বলার কারনে প্রায়ই ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটে। গত কয়েকদিন আগেও এক মহিলার ব্যাগ ছিনতাই করে দুই মোটরসাইকেল আরোহী পালিয়ে যায়।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মোতালেব শিকদার বলেন, রাতে সেতুর সোডিয়াম বাতি জ্বলে না। অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়ে আমরা পথচারী ও যানবাহন পারাপার হই। এবং এই সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলের সময় এমন ভাবে কম্পন হয় যেনো ব্রীজ এখনই ভেঙে পড়বে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেতুটির আজ এই বেহাল দশা। এটি দ্রুত সংস্কার করা জরুরী। তা-না হলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (প্ল্যানিং এন্ড ডাটা সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: খালেদ শাহেদ প্রতিবেদক কে বলেন, এই সেতুটির ব্যাপারে আমরা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করব। এরপর সেতুটির ত্রুটিপূর্ণ অংশগুলো দ্রুত সংস্কার করার বিষয়ে আলোচনা করা হবে।