শনিবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পরে ওসমান হাদিকে গুলি করায় সাদিক কায়েমের ক্ষোভ   ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান   “বেঁচে থাকুন, ফিরে আসুন” হাদির জন্য কাঁদছে বাংলাদেশ   ধর্মান্ধদের চক্রান্তে না পড়ে ধানেরশীষে ভোট দিয়ে উন্নয়ন করার সুযোগ দিন: সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন    মওলানা ভাসানীর ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত   মতলব উত্তরে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় খতমে কুরআন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত   মোংলায় ৮ দলীয় ভলিবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন    
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
‘ভারতের আগে উচিত মুসলিমদের সঙ্গে আচরণের প্রভাব স্বীকার করা’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০২৫, ৯:৪০ পিএম

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে মন্তব্য করার আগে ভারত সরকারের এটা স্বীকার করা উচিত যে, তাদের নিজ দেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়— তার একটা প্রতিক্রিয়া অবশ্যই পড়ে।

ভারতের পাক্ষিক ম্যাগাজিন ফ্রন্টলাইনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) ম্যাগাজিনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।

নিরুপমা সুব্রহ্মণ্যমের নেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে গত বছর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাতের পর সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোকে কেন্দ্র করে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সম্প্রতি ভারতীয় পার্লামেন্টে জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ২,৪০০টি এবং ২০২৫ সালে ৭২টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে ফ্রন্টলাইন ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য কি এই পরিসংখ্যানগুলোকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করেন কিনা।

জবাবে শিষ্টি এই অর্থনীতিবিদ ও জননীতি বিশেষজ্ঞ জানান, এই ধরনের ঘটনা হিসাব করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) পলায়নের পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি ঘটে।

দেবপ্রিয় বলেন, “পুলিশ বাহিনী বিশৃঙ্খল ছিলো। কিছু সময়ের জন্য, নিরাপত্তার দায়িত্ব সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর হাতে চলে যায়, কিন্তু পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিলো।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু ঐতিহাসিকভাবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলকে (আওয়ামী লীগ) সমর্থন করেছে। সুতরাং, কিছু ক্ষেত্রে এটি আলাদা করা কঠিন যে— কোনও হিন্দু ব্যক্তির ওপর তাদের বিশ্বাসের কারণে আক্রমণ করা হয়েছিলো নাকি তারা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমর্থক ছিলো।”

ড. দেবপ্রিয় বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা সম্পর্কিত শ্বেতপত্র প্রণয়নের কমিটির প্রধান হিসেবেও দায়িত্বপালন করছেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন ঘটনা বিবেচনা করার মতো ভিন্ন দিক রয়েছে।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা — যেমন হিন্দু এবং বৌদ্ধরা — ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠের অংশ। একইভাবে ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা — যেমন মুসলমানরা — বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই, যখন ভারত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ নিয়ে মন্তব্য করে, তখন তাদের স্বীকার করতে হবে যে— তাদের নিজ দেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের আচরণের প্রতিক্রিয়া রয়েছে।”

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে তিনি কতোটা নিরাপদ বোধ করেন জানতে চাইলে দেবপ্রিয় বলেন, “আমি হয়তো এর সেরা উদাহরণ নই। আমি দুবার ভারতে শরণার্থী ছিলাম — প্রথমত ১৯৬০-এর দশকে দাঙ্গার পর ১৯৬৪ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত এবং আবার ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়। কিন্তু আমার বাবা-মা কখনও বাংলাদেশ ছেড়ে যাননি। আমি ফিরে এসেছি, আমার জন্মভূমিতে বিনিয়োগ করেছি এবং এখানেই আমার জীবন গড়ে তুলেছি। আমি আমার দেশের জন্য অবদান রাখার জন্য মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক পদ ত্যাগ করেছি।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, তার পরিবারের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক ইতিহাসের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, “আমার মা শেখ হাসিনার দলের সংসদ সদস্য ছিলেন এবং আমার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক নিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ছিলেন। কিন্তু এই ব্যক্তিগত সংযোগগুলো আমার পেশার এবং বাস্তব-ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে না।”

পরিচয়ের রাজনীতি ভূমিকা পালন করলে বাংলাদেশে অবস্থান করার ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবাধিকার এবং সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের — হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগত সংখ্যালঘু এবং সমতলভূমির আদিবাসী গোষ্ঠী — সুরক্ষার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্ভুক্তির এই প্রতিশ্রুতিই জাতি গঠনের মূল কথা।”

সাক্ষাৎকারে সংবিধান থেকে “বহুত্ববাদ” শব্দটি বাদ দিয়ে “ধর্মনিরপেক্ষতা” শব্দটি বাদ দেওয়ার বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের বিষয়টিও তুলে আনা হয়েছে। এই বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, এটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত একটি প্রস্তাব এবং এই বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।

তিনি বলেন, “এটি চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অনেকগুলো মতামতের মধ্যে একটি। এই পর্যায়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় আসেনি, কারণ এটি এখনও পর্যালোচনাধীন।”

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজে মানুষ বিভিন্ন মতামত ধারণ করে এবং কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত, আদর্শ বা রাজনৈতিক লাভের কারণে কট্টর অবস্থানও গ্রহণ করে থাকে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, “...বাংলাদেশের কিছু মানুষ ইতিহাস পুনর্লিখন করতে চায়, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে— তাদের দৃষ্টিভঙ্গি দেশের জাতীয় নীতি নির্ধারণ করবে।”



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com