শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: বাংলাদেশে এলো তারেক রহমানের বুলেটপ্রুফ গাড়ি, দাম কত?   হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা, মধ্যরাতে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স   নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন মনিরুল ইসলাম   লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীরের সঙ্গে ইউএই রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ    পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন   কেরাণীগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া   খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সেক্রেটারিয়েট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন'র দোয়া মাহফিল    
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
মুরগি-ডিমে সিন্ডিকেট
অসাধু ব্যবসায়ীদের পকেটে ৬ মাসে ৯৬০ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫, ২:১৭ পিএম

মুরগি, ডিম, মুরগির ফিড ও মুরগির বাচ্চাকে ঘিরে বাজারে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের অসাধু চক্র গত ছয় মাসে ৯৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। 

সংগঠটির দাবি, পোল্ট্রি খাতে সরকারের কোনো নজর না থাকায় এই অরাজকতা তৈরি হয়েছে। তবে সরকার চাইলে এই ফিড-মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব।

শনিবার (১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিপিএ সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার।

তিনি বলেন, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। কিন্তু এরপর সরকারি পর্যায়ে ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করতে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে বড় গ্রুপগুলো কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এমনকি পরিকল্পিতভাবে শবে বরাত, রমজান, ঈদসহ বিভিন্ন সময়ে বাজারে সংকট তৈরি করে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ানো হয়। এমনকি বর্তমানে মুরগির বাচ্চার সরকার নির্ধারিত দাম ব্রয়লার ৪৯ টাকা এবং লেয়ার ৫৭ টাকা হলেও কোম্পানিগুলো এসএমএসের মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা এবং কখনো কখনো ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি করছে। সে হিসাবে এই খাতের সিন্ডিকেট চক্র গত ৬ মাসে ৯৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সুমন হাওলাদার বলেন, মুরগির বাচ্চার বাজারে সিন্ডিকেটের একাধিক বড় কোম্পানি নিজেদের ইচ্ছামতো মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয়। কোম্পানির কিছু অসাধু সেলস অফিসার দুর্নীতির মাধ্যমে দাম আরও বাড়িয়ে তোলে। মুরগির বাচ্চার কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়, যার ফলে খামারিরা ৭০ থেকে ৯০ টাকা দামে বাচ্চা কিনতে বাধ্য হন। প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্যে বাচ্চা ও ফিড কিনতে পারছেন না, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, এবং ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী ব্রিডার কোম্পানিগুলো প্রতি সপ্তাহে ২ কোটি এবং প্রতি মাসে ৮ কোটি বাচ্চা উৎপাদন করে। যদি প্রতি বাচ্চায় মাত্র ২০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়, তাহলে ছয় মাসে সিন্ডিকেটের পকেটে জমেছে প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্য না পেয়ে দিন দিন উৎপাদন থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৫০-৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান।

সিন্ডিকেট চক্র থেকে ক্ষুদ্র খামারিদের রক্ষার দাবি জানিয়ে বিপিএ সভাপতি বলেন, দেশজুড়ে মুরগির দাম ২০ টাকা বাড়লেই হইচই পড়ে যায়, অথচ বাচ্চার দাম ১০০ টাকা বেড়ে গেলেও কেউ কথা বলে না। এই যে সিন্ডিকেট ক্ষুদ্র খামারিদের রক্ত চুষে নিচ্ছে, এটা নিয়ে কোথাও তেমন কোনো আলোচনাই নেই। গত দুই মাসে দেশের ৯০ শতাংশ খামারি লস দিয়েছে। সবাই আশা করেছিল, ঈদে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে, কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠীর কারণে সেই আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, রমজান মাসে ডিম ও মুরগির দামে কিছুটা স্বস্তি থাকবে, কারণ উৎপাদন খরচ কম এবং বাজারের চাহিদা সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে। তবে ঈদের সময় মুরগির দাম বাড়বে, কারণ ঈদের জন্য যে মুরগি বাজারে আসবে, তার উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হবে। মূলত কোম্পানিগুলো আগেই মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করেছে এবং এই কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, ঈদে ভোক্তার চাহিদাও বাড়বে, যার ফলে বাজারে মুরগির সংকট সৃষ্টি হবে এবং মৌসুমীভাবে দাম আরও বাড়বে। এই দাম বৃদ্ধির পিছনে একমাত্র দায়ী হচ্ছে মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে সংকট তৈরি করে এবং বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।

পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের ৬ দফা দাবি-

১. প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে নীতি নির্ধারণ কমিটিতে প্রান্তিক খামারিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে শুধু কর্পোরেট কোম্পানিগুলোই এই মিটিংগুলোতে অংশগ্রহণ করে, যার কারণে বাজারে বারবার একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে।

২. বাজার মনিটরিং ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা কমিশনকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে এবং সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. ন্যায্য মূল্যে ফিড ও বাচ্চা সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারি উদ্যোগে একটি স্বতন্ত্র পোল্ট্রি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যা সরাসরি খামারিদের ফিড ও বাচ্চা ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ করবে।

৪. কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের অপব্যবহার বন্ধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের নামে খামারিদের শোষণ করছে, যা বন্ধ করতে হবে। খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় একটি স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করতে হবে এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের জন্য বাধ্যতামূলক নীতিমালা তৈরি করে খামারিদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

৫. প্রান্তিক খামারিদের সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া উচিত। ‘পোল্ট্রি উন্নয়ন তহবিল’ গঠন করে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য আর্থিক প্রণোদনা ও ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. পোল্ট্রি কোম্পানিগুলোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। বড় কোম্পানিগুলোর আদালতের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com