শনিবার ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: এন্ডোসকপির পর খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ বন্ধ, শাশুড়িকে দেখে মায়ের বাসায় জোবাইদা   আগামীর বাংলাদেশ হবে কুরআনের বাংলাদেশ: জামায়াত আমির   খালেদা জিয়ার আরোগ্য কামনায় দোয়ার আয়োজন রাষ্ট্রপতির   খালেদা জিয়াকে লন্ডন নিতে জার্মানি থেকে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স    বাংলাদেশে এলো তারেক রহমানের বুলেটপ্রুফ গাড়ি, দাম কত?   হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা, মধ্যরাতে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স   নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন মনিরুল ইসলাম   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ছাড়া পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর সম্ভব নয়: সেনাপ্রধান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:১৮ AM

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন। এই খাত শক্তিশালী করা না গেলে পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করা সম্ভব হবে না। আমি দুঃখিত, একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছাড়া আপনি আপনার কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষা দেয়। তাই গবেষণা করা উচিত এবং সরকারকে পরামর্শ দেওয়া উচিত।’

রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর র‌্যাডিসন হোটেলে ‘ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (এফএসডিএস)’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বিভিন্ন শাখার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে বিভক্ত হয়।

কিন্তু কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। এমন অবস্থায় আমাদের সমুদ্রপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, আমাদের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে তেমন কোনো পরিকল্পিত সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।’

তিনি বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে এফএসডিএসের একটি বড় দায়িত্ব হলো তারা গবেষণা করবে এবং আমাদের পরামর্শ দেবে কোন ক্ষেত্রকে প্রথমে উন্নত করা প্রয়োজন। আমাদের খুবই সুরক্ষিত সামুদ্রিক যোগাযোগব্যবস্থার প্রয়োজন। আমাদের নৌ খাতে উন্নয়ন করার প্রয়োজন আছে। আমাদের কি এটা আছে? এ ক্ষেত্রে আমাদের নিরাপদ যোগাযোগব্যবস্থা থাকা অত্যন্ত জরুরি। এটা ছাড়া তাহলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে, যা আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে। এ জন্য প্রতিরক্ষা খাত শক্তিশালী করা না গেলে পররাষ্ট্রনীতি কার্যকর করা সম্ভব হবে না।
আমি দুঃখিত, একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছাড়া আপনি আপনার কার্যকর পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষা দেয়। তাই আপনাদের গবেষণা করা উচিত এবং সরকারকে পরামর্শ দেওয়া উচিত, যাতে আমরা সামগ্রিকভাবে জাতি হিসেবে উন্নত হতে পারি; সেটা খাদ্য নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, জলসম্পদ সুরক্ষা, এনার্জি নিরাপত্তাসহ সব খাত; নিরাপত্তাসহ সব ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দেশে বহু গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অসাধারণ কাজ করেছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, আমরা তাদের গবেষণার প্রতিফলন সরকারি নীতি প্রণয়নে তেমনভাবে দেখতে পাই না। এটি একটি বড় সমস্যা। কারণ যত ভালো গবেষণাই করা হোক না কেন, যত গুরুত্বপূর্ণ ফলই আসুক না কেন, যদি সরকার নিজে বা বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে তার কোনো কার্যকারিতা থাকে না। আমি এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর পরামর্শ দেব, কারণ তাঁরা এতে অংশ নিলে এটি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি সমৃদ্ধ করবে। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বে অনেক নেতা ছিলেন, কিন্তু তাঁদের সবার কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬২ সালে জওয়াহেরলাল নেহরু তাঁর শাসনামলে একটি বড় ভূখণ্ড হারিয়ে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত হয়েছিলেন।’

স্বাগত বক্তব্যে এফএসডিএসের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, “এই সংস্থার লক্ষ্য হলো জাতীয় সংহতি ও অগ্রগতির স্বার্থে সবার মধ্যে সহযোগিতা ও সংযোগ বৃদ্ধি করা। যদিও একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা আরো কিছু চিন্তাশীল প্রতিষ্ঠান আছে, এফএসডিএসের মূল দৃষ্টিভঙ্গি হবে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’। আমাদের প্রধান মনোযোগ থাকবে জাতীয় নিরাপত্তা, বেসামরিক ও সামরিক খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখা।”

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সংযোগস্থলে অবস্থিত, যা আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের জন্য বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি কৌশলগত সামুদ্রিক অঞ্চল। এর প্রাকৃতিক সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটগুলোর প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে, যা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তায় প্রধান অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ককেও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার ভিত্তিতে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখা অপরিহার্য, যা আমাদের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের মূলভিত্তি হতে পারে। দুঃখজনকভাবে, আমাদের রাজনৈতিক আলোচনায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে বাংলাদেশ বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এর মধ্যে রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিরাজমান উত্তেজনা, জলবায়ুজনিত দুর্যোগ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদী হুমকি। এই চ্যালেঞ্জগুলো দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এফএসডিএসের মূল লক্ষ্য এই চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা, সম্ভাবনাগুলো বিশ্লেষণ করা এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ তৈরি করা। আমাদের কার্যক্রম হবে অরাজনৈতিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং গবেষণা-বিশ্লেষণভিত্তিক।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘ভারসাম্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আমাদের খুবই প্রয়োজন। আমরা ভূমিগত দিক থেকে খুবই ভালো পজিশনে আছি। এটা কাজে লাগাতে হবে। আমাদের দরজার খুবই কাছে কোল্ড ওয়ার। সে জন্য চীন ও ভারতের সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থার মধ্য দিয়ে ডিল করতে হবে। এই দুটি দেশ নিজেরা-নিজেরা শত্রুভাবাপন্ন।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবুল কালাম মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির, এম নুরুদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান, সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, বিমানবাহিনীর প্রধান, নৌবাহিনীর প্রধান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিশেষ সহকারী মনির হায়দার, মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দেশ রূপান্তরের সম্পাদক কামাল উদ্দিন সবুজ, একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিএনপি চেয়ারপাসনের একান্ত সচিব এ বি এম আব্দুস সাত্তার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com