
অপরাধের প্রকৃতি ও মাত্রা বিবেচনায় বর্তমান খুলনার পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীনকে জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে দায়েরকৃত বিভাগীয় মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ (শৃঙ্খলা-১ শাখা) থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, মো. জসিম উদ্দীন (বিপি-৭৮০৬১১৪২১৮), বর্তমানে পুলিশ সুপার, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, খুলনা ইতঃপূর্বে উপ-পুলিশ কমিশনার, প্রসিকিউশন বিভাগ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হিসেবে কর্মরত থাকাকালে গত ২০-১১-২০২২ তারিখ কাশিমপুর কারাগার থেকে ৮ জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি জঙ্গি আসামিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যরা স্কর্ট করে বীজ সিএমএম কোর্ট, ঢাকার হাজতখানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। ওইদিন ৮ জন কয়েদি জঙ্গিসহ মোট ১৪ জন কয়েদি জঙ্গি আসামিকে সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম শেষে উক্ত ১৪ জন আসামির মধ্য থেকে জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সাল আরেফিন দীপন ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত চার জন সদস্যকে পুলিশ কনস্টেবল/৫১৯৮ মো. নূরে আজাদ একায় হাজতখানায় ফিরিয়ে আনার জন্য বিজ্ঞ আদালত থেকে রওনা দেন। পথিমধ্যে আনুমানিক ১২ টা ১৫ মিনিটে বিজ্ঞ সিজেএম আদালতের মেইনগেটে পৌঁছানোর আগেই কনস্টেবল মো. নূরে আজাদের চোখে স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি সহযোগীরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় এবং অন্য দুই জন কয়েদি জঙ্গি কনস্টেবল মো. নূরে আজাদকে মারপিট করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
পরবর্তীতে কর্তব্যরত অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা কনস্টেবল মো. নূরে আজাদকে রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে এবং পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা অপর দুই কয়েদিকে আটক করে সিএমএম কোর্ট হাজতখানায় হস্তান্তর করে। তিনি রাষ্ট্রীয় এরূপ গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মামলার আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে হাজির করার বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো কার্যকর পরিকল্পনা/নিরাপত্তা কর্মসূচি বা মামলার কোনো পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রসিকিউশন বিভাগে সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সিকার প্রসিকিউশন বিভাগে কোনো সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেননি।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, প্রসিকিউশন বিভাগের সদস্যদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং, তার অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে সৃষ্ট ঘটনায় জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজুপূর্বক তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি গত ১৮-০৩-২০২৪ তারিখ কারণ দর্শানোর জবাব দাখিলপূর্বক ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ০৭-০৫-২০২৪ তারিখ তার ব্যক্তিগত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
যেহেতু, শুনানিকালে আনীত অভিযোগ, লিখিত জবাব, উভয়পক্ষের বক্তব্য এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ দালিলিক তথ্য-প্রমাণ আজকে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে গুরুদণ্ড আরোপের সম্ভাবনা থাকায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৭(২)(ঘ) বিধি মোতাবেক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় এবং সব বিধি-বিধান প্রতিপালনপূর্বক সরেজমিনে তদন্ত শেষে গত ২৯-০১-২০২৫ তারিখ তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ, লিখিত জবাব, ব্যক্তিগত শুনানিতে উভয়পক্ষের বক্তব্য, তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রাসঙ্গিক অন্যান্য দলিলপত্রাদি পর্যালোচনায় এবং অপরাধের প্রকৃতি ও মাত্রা বিবেচনায় তাকে বিভাগীয় মামলার দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।