শুক্রবার ৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

শিরোনাম: বাংলাদেশে এলো তারেক রহমানের বুলেটপ্রুফ গাড়ি, দাম কত?   হেলিকপ্টারে বিমানবন্দর যাবেন খালেদা, মধ্যরাতে আসছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স   নড়াইল-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন মনিরুল ইসলাম   লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আলমগীরের সঙ্গে ইউএই রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ    পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ অনুমোদন   কেরাণীগঞ্জে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ দোয়া   খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় সেক্রেটারিয়েট জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন'র দোয়া মাহফিল    
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ডিগ্রি পেতে কানাডা পাড়ি, তারপর ‘উধাও’ ২০ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:১৫ পিএম

বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত ব্লকভুক্ত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার বা ডিগ্রির জন্য বিদেশগমণের প্রবণতা অনেক বেশি। আর ডিগ্রির জন্য বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে তাদের পছন্দনীয় দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কানাডা।

ফলে প্রতি বছরই কানাডার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি হওয়ার জন্য সেখানে ভিড় করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা লাখ লাখ শিক্ষার্থী; আর এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভারতীয়দের হার সর্বোচ্চ। কানাডার সরকারি পরিসংখ্যান দপ্তর স্ট্যাটিকটিক্স কানাডার তথ্য অনুসারে, বর্তমানে দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী, যা দেশটিতে অধ্যয়নরত মোট বিদেশি শিক্ষার্থীর ৪০ শতাংশ।

তবে দেশটির অভিবাসী শিক্ষার্থীগের ভর্তি এবং খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি অ্যাপ্লাইবোর্ড সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা অস্বস্তিতে ফেলেছে কানাডার শিক্ষা কর্তৃপক্ষ। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট ৫৫ হাজার ৫০০ জন ভারতীয় শিক্ষার্থীকে পড়াশোনার জন্য কানাডায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল সরকার; কিন্তু তাদের মধ্যে ১৯ হাজার ৫৮২ জন, অর্থাৎ প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি এবং এই মুহূর্তে তারা কোথায় আছেন, কী করছেন— সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য কানাডার সরকারের কাছে নেই।

‘উধাও’ এই ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে সম্প্রতি একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে কানাডার সংবাদমাধ্যম টিএনএন। সেখান থেকে জানা গেছে, এই শিক্ষার্থীদের একটি অংশ প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ, যে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য তারা কানাডায় আসার আবেদন করেছিলেন, আসার পর তারা দেখেন সেসব প্রতিষ্ঠান কেবল কাগজ-কলমে। বাস্তবে সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব নেই।

“তবে এই অংশটি স্বল্প। এই ২০ হাজার শিক্ষার্থীর বড় অংশই পড়াশোনার পরিকল্পনা নিয়ে কানাডায় আসেননি। তাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল কানাডায় আসা এবং এ দেশে স্থায়ী হওয়া,” বলা হয়েছে টিএনএনের প্রতিবেদনে।

ফলে এই শিক্ষার্থীদের কেউই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি এবং টিকে থাকার জন্য কানাডার বিভিন্ন শহরে ছোটোখাটো শ্রমসাধ্য কাজ বা ‘অড জবস’ করছেন।

কানাডায় এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন— এমন একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে টিএনএন। ২৪ বছর বয়সী সেই শিক্ষার্থী জানান, কানাডার অন্টারিও রাজ্যের ব্রাম্পটন শহরের একটি ‘বিখ্যাত’ কলেজে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে সেটি পুরোপুরি সাইনবোর্ডসর্বস্ব ভুয়া একটি প্রতিষ্ঠান। এমনকি সেই প্রতিষ্ঠানটির কোনো শ্রেনীকক্ষও নেই।

“আমাকে প্রথমে বলা হলো যে শিগগিরই ক্লাস শুরু হবে, আমি যেন কিছুদিন অপেক্ষা করি। সপ্তাহ গড়িয়ে গেল, মাস গড়িয়ে গেল— কিন্তু ক্লাস আর শুরু হলো না এবং একসময় আমি বুঝতে পারলাম যে প্রতারণার শিকার হয়েছি। কোর্স ফি বাবদ তারা ১২ লাখ রুপি দাবি করেছিল। ভারতে থাকার সময়েই আমি তার ৪ লাখ পরিশোধ করেছিলাম। কথা ছিল— কানাডায় এসে বাকি টাকা শোধ করব,” টিএনএনকে বলেন ওই শিক্ষার্থী।

এখানে উল্লেখ্য যে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে ইচ্ছুক, তাদেরকে সেই দেশে পৌঁছানোর আগেই কোর্স ফি’র একটি অংশ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দিতে হয়, যা সংক্ষেপে ‘প্রিপেইড সিস্টেম’ নামে পরিচিত। তবে কানাডায় সরকারিভাবে ‘প্রিপেইড সিস্টেম’ স্বীকৃত নয়। কোনো কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় যদি এই রীতি অনুসরণ করে, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কানাডার প্রচলিত আইনে মামলাও করা যাবে।

টিএনএনকে সেই শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, এরপর আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করেননি তিনি, দেশেও ফিরে যাননি। বর্তমানে টিকে থাকার জন্য ব্রাম্পটনের একটি গ্যাস স্টেশনে কর্মী হিসেবে কাজ করছেন।

এমন কয়েক জনের সঙ্গেও কথা বলেছে টিএনএন। গুজরাট থেকে আসা ২৭ বছর বয়সী এক ‘শিক্ষার্থী’ টিএনএনকে বলেন, “আমি নতুন কিছু করি নি। আমার এলাকার অনেক লোক এভাবেই কানাডায় এসে স্থায়ী হয়েছে এবং আমি কেবল তাদের অনুসরণ করেছি। আমি জানি যে এটা অবৈধ, কিন্তু একটি সুন্দও ও নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য এভাবে কানাডায় প্রবেশ ছাড়া আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা ছিল না। আমার অভিভাবকরা ঋণ করে আমার বিদেশযাত্রার খরচ দিয়েছেন। সেই অর্থ আমাকে পরিশোধ করতে হবে।”   

বাড়িতে অর্থ পাঠানোর জন্য বর্তমানে দু’টি চাকরি করছেন বলেও জানিয়েছেন গুজরাটের সেই শিক্ষার্থী। দিনের বেলায় রেস্তোরাঁর কিচেনে এবং রাতে ফুড ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করেন তিনি।

যে পদক্ষেপ নিয়েছে কানাডার সরকার

শিক্ষার্থী ভিসার অনিয়ম রোধ করতে সম্প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে কানাডার সরকার। দেশটির অভিবাসী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ইমিগ্রেশন, রেফিউজিস অ্যান্ড সিটিজেনশিপ কানাডা-এর (আইআরসিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনিয়ম রোধ করতে ২০২৪ সাল থেকে তিনটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নিয়মিত যাচাই : যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর জন্য নিবন্ধিত, সেগুলো প্রতি সেশনে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে, তা নিয়মিত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আইআরসিসি। সেই সঙ্গে অনিবন্ধিত যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের ভর্তি করছে, সেগুলোরও তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।

নজরদারি : শিক্ষার্থীরা তাদের ভিসার মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও কানাডায় বসবাস করছেন কিনা— সে বিষয়টি নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

বিধিনিষেধ জারি: কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যদি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া এবং প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স এক বছরের জন্য বাতিলের সংক্রান্ত একটি আইনও প্রণয়ন করেছে কানাডার সরকার।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: vorerpata24@gmail.com বার্তা ইমেইল:news@dailyvorerpata.com বিজ্ঞাপন ইমেইল:vpgmad@gmail.com