
দেশের ট্রাভেল এজেন্ট ও এয়ারলাইনসের অসাধু একটি সিন্ডিকেট কারসাজির মাধ্যমে প্লেন ভাড়া তিন গুণ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। সিট ব্লক করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ, কখনো দ্বিগুণ-তিন গুণ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে চক্রটি। এতে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন বিদেশগামী শ্রমিক, শিক্ষার্থী ও প্রবাসীরা।
তবে এটা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে প্রায় চার হাজার নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। এ জন্য সরকারকে ১৫টি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আটাব।
গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আটাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে চলমান অন্যতম বড় সমস্যা এয়ার টিকিটের অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধি। এর নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ নামবিহীন গ্রুপ টিকিট বুকিং।
আবদুস সালাম আরেফ বলেন, কিছু মধ্যপ্রাচ্যগামী এয়ারলাইনস তাদের পছন্দের কিছুসংখ্যক এজেন্সির নামে কোনো পাসপোর্ট, ভিসা, ভ্রমণ নথিপত্র এবং প্রবাসগামী শ্রমিকদের কোনো বৈদেশিক ওয়ার্ক পারমিট এমনকি যাত্রী তালিকা ছাড়াই শুধু ই-মেইলের মাধ্যমে বিভিন্ন রুটের গ্রুপ সিট দুই-তিন মাস অগ্রিম তারিখের পিএনআর তৈরিপূর্বক সিট ব্লক করে রাখে। এভাবে টিকিট মজুদদারি করা হয়, যার ফলে সিন্ডিকেট তৈরি হয়, আসন সংকট দেখা দেয়, টিকিটের মূল্য ২০ থেকে ৫০ শতাংশ, কখনো দ্বিগুণ বা তিন গুণ পর্যন্ত বাড়ে।
এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও এয়ারলাইনসের যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট, ভিসা ছাড়া বাল্ক টিকিট বিক্রি ও মজুদদারি বন্ধে আবদুস সালাম আরেফ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
আটাব জানিয়েছে, ভাড়া সহনীয় রাখতে শিডিউল ফ্লাইট বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার ব্যবস্থা এবং দ্রুত অনুমোদন দেওয়া ও ওপেন স্কাই ঘোষণা করতে হবে, যাতে সব দেশের এয়ারলাইনস যাত্রী পরিবহন করতে আগ্রহী হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নাম, পাসপোর্ট নম্বর, ভিসা, ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স ছাড়া কোনো বুকিং করা যাবে না, সিট ব্লকের মাধ্যমে ফ্লাইটের ইনভেন্টরি ব্লক হয়ে যায়, যে কারণে মূল্য বাড়তে থাকে। এ ছাড়া কোনো ট্রাভেল এজেন্সির প্রকৃত চাহিদা না থাকলেও এয়ারলাইনসের কাছে দুই লাইনের একটি ই-মেইল করে কৃত্রিম ডিমান্ড তৈরি করে। কৃত্রিম ডিমান্ডের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে এয়ারলাইনসের এই পলিসির কারণে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর ডিমান্ড না থাকা সত্ত্বেও পণ্য মজুদ করার মতো এয়ার টিকিট মজুদ করছে। এটি বন্ধ করতে হবে।
বর্তমানে ৬০ হাজারেরও বেশি সিট এয়ারলাইনস ব্লক করে রেখেছে। এই সিটগুলো এখনই ওপেন করে দিলে উদ্ভূত সংকট দূর হয়ে যাবে বলে জানান আবদুস সালাম আরেফ। তাঁর মতে, এয়ারলাইনসের ডিস্ট্রিবিউশন পলিসি ওপেন রাখতে হবে। জিডিএস/এনডিসিতে সিট সেল করার নির্দেশনা দিতে হবে এবং সব এজেন্সিকে বিক্রি করার সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন রুটে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ভাড়া বাস্তবসম্মতভাবে নির্ধারণ এবং এয়ারলাইনসের হিডেন ফেয়ারে গ্রুপ টিকিট/প্রাইভেট ফেয়ারে টিকিট বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশনা দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০ থেকে ২০ হাজার সিট/টিকিট দিয়ে দেওয়া হয় কোনো কোনো এজেন্সির কাছে। এর মাধ্যমেই সিন্ডিকেটের উৎপত্তি। এজেন্সিপ্রতি সর্বোচ্চ সেল সিলিং নির্ধারণ করতে হবে।
শ্রমিক ও ওমরা যাত্রীদের এয়ারলাইনস ফরম্যাটে টিকিট প্রদান করতে হবে, যেখানে ভাড়া, এজেন্সি বিবরণ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। প্রকৃত মূল্য যাত্রীর দৃষ্টিতে আসবে। ফলে নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দাম নিতে পারবে না।
বাজেট এয়ারলাইনসগুলো অল্প টাকায় যাত্রী পরিবহন করার ঘোষণা দিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ থেকে তারা লিগ্যাসি ক্যারিয়ারের মতোই বেশি দামে টিকিট বিক্রি করে। বাজেট ক্যারিয়ার সংক্রান্ত বিধিমালা আছে কি না, না থাকলে সেটাও তৈরি করতে হবে। এয়ারলাইনস পরিচালনার গাইডলাইনে তাদের সেলস পদ্ধতি এবং মার্কেটিং পলিসি এ দেশের জনগণের জন্য যেন কোনো রকমের নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট না করে সে জন্য বিধিমালা প্রস্তুত করতে হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, আটাব, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি), ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। তারা চাহিদা, ক্যাপাসিটি ও সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করবে, সমাধান করবে। অসাধু ট্রাভেল এজেন্ট ও এয়ারলাইনস স্টাফদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তারাই ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন আটাবের মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ, সাবেক মহাসচিব জিন্নুর আহমেদ চৌধুরী দিপু, উপমহাসচিব তোয়াহা চৌধুরী, অর্থসচিব মো. সফিক উল্যাহ নান্টুসহ আটাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ ও ঢাকা আঞ্চলিক পরিষদের সদস্যরা।