
চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চল, বরেন্দ্রাঞ্চল ও নদীর ধারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে চলতি বছর সরিষার আবাদ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ফসলের খেতগুলো সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে। সামান্য পরিচর্যা করেই বেশি লাভের আশা করছেন কৃষকেরা।
কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে সরিষার আবাদ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে কৃষকরা সরিষার চাষ করেছেন। প্রতিটি মাঠ সরিষার হলুদ ফুলে সেজেছে। সরিষার ফুলের গন্ধ বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। আমন ধান কাটা শেষে জমিগুলো কিছুদিন পরিত্যক্ত থাকে। ওই জমিতে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকেরা।
সরিষা চাষ সহজ এবং কম খরচে হওয়ায় এটি দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিছু মাঠে বড় দানায় ভরপুর সরিষা খেত। কৃষকদের আশা আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ভালো ফলন হবে।
বারঘেরিয়ার সরিষাচাষি আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে তিনি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন।
তিনি বলেন, ‘এবার সরিষার ফুল ভালো এসেছে। আবহাওয়া এ পর্যন্ত অনুকূলে আছে।
মহারাজপুরের কৃষক মনিরুল ইসলাম মহানন্দা নদীর, তীরে ৫ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এ বছর খরচ কিছুটা বেড়েছে। সরিষার বীজ ও শ্রমিকের দাম বেশি। কিন্তু সরিষা চাষ অতিরিক্ত ফসল হিসেবে করায় তিনি লাভবান হচ্ছেন। এতে ধানের পাশাপাশি তেলের চাহিদাও পূরণ হয়।
কৃষক৷ আবুল কালাম আজাদ জানান, সরিষা চাষের খরচ অনেক বেশি। সরকার থেকে সরিষার বীজ বা সার কখনোই তিনি পাননি। কৃষি অফিসের পরামর্শ তিনি কখনো পাননি। কৃষি অফিসাররা মাঠে আসেন না, ফলে কৃষকদের সমস্যা সমাধানে কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না।
কৃষক শামশুদ্দীন টগর জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করতে খরচ হয় ৭-৮ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় চার-পাঁচ মণ সরিষা পাওয়া যায়। বাজারে এর মূল্য ২০-২২ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভ থাকে।
সূত্র জানায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকেরা এখন সরিষা চাষকে একটি লাভজনক ফসল হিসেবে বিবেচনা করছেন। সরকারের সহায়তা ও কৃষকদের পরামর্শ দিলে সরিষা চাষ আরও সম্প্রসারিত হতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান, আমন ধান কাটতে দেরি হওয়ায় এ বছর কিছুটা দেরিতে সরিষার আবাদ শুরু হয়েছে। তবে এ বছর সরিষার আবাদ রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। কৃষি বিভাগ কর্মীর সার্বক্ষণিক
সরিষা চাষিদের সঙ্গ দিচ্ছে।
কৃষি বিভাগের মতেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় ৩০ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩০ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে।
বিএম ডি এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আল মামুন অর রশিদ জানান নাচোল গোমস্তাপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রাবারডাম থেকে ভোলাহাট ৫২ কিলোমিটার মহানন্দা দুই ধরে রেকর্ড পরিমান সরিষা চাষ হয়েছে। আশাকরি কৃষকরা উপকৃত হবেন ও পাশাপাশি দেশও উপকৃত হবে।