
বিশ্বে যেসব শহরে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি, সেগুলোর একটি ঢাকা। ঢাকার বাতাস ধুলায় ভরে গেছে! রাজধানীতে উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকালে বাতাসে ধুলার স্তরই বেশি চোখে পড়ে। প্রধান সড়কগুলোতে উড়তে থাকা ধুলো রূপ নিয়েছে ধুলোর কুয়াশায়!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বাতাসে ধুলোদূষণ অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে ধুলোয় আচ্ছন্ন সড়ক ও এর আশপাশের বাসিন্দারা রয়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। শিশুরা রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। অস্বাস্থ্যকর বায়ুর কারণে শীতের আগমনের আগেই মানুষের মধ্যে নানা অসুখ- বিসুখ দেখা দিচ্ছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে বায়ুমান সূচকে জানুয়ারির বায়ু সবচেয়ে বেশি অস্বাস্থ্যকর আর বছরের ১২ মাসের মধ্যে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি-এই চার মাসের বাতাস সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর থাকে। সাধারণত এই সময়কে নির্মাণ মৌসুম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কারকাজ, মেগা প্রকল্প, আশপাশের ইটভাটা, ছোট-বড় কয়েক হাজার শিল্পকারখানা, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো-এসব শহর দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিলক্ষিত হয়।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার প্রধান সড়কের দুই পাশের গাছের পাতায় ধুলোর এমন গভীর আস্তরণ পড়ে যায়, যা পাতাগুলোর ছিদ্র বন্ধ করে দেয়। ফলে পাতাগুলো অক্সিজেন ছাড়তে পারে না। একইভাবে মানুষ শরীর ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইডও গ্রহণ করতে পারছে না। অথচ এ ধুলোর কারণে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গাছের নিজের খাদ্য তৈরির পথও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে মানবদেহেও। কারণ ধুলোর জন্য পাতার মাধ্যমে মানবদেহের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরিতে বিঘ্ন ঘটছে। আর এ কারণে মানুষের ফুসফুস আস্তে আস্তে কর্মক্ষম হয়ে পড়ে, যা মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়।
প্রকৃতপক্ষে ধূলো অনেক জীবাণুর মিশ্রণ। এ কারণে শতকরা ১০ শতাংশ মানুষ এসব জীবাণুর কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়। শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়, নিশ্বাসের সঙ্গে কাশি হয়। ধুলোর মধ্যে মিশে থাকা জীবাণু মানুষের শরীরে ঢুকে অ্যালার্জির সৃষ্টি করে, একসময় যা অ্যাজমায় রূ পান্তর হয়। দীর্ঘমেয়াদে এর ক্ষতি আরো বেশি। জানা যায়, ধুলোর সংস্পর্শে আসা প্রতি ১০০ শিশুর মধ্যে ১০ জনই অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত হয়। আর বড়দের মধ্যে সাত-আট শতাংশ আক্রান্ত হচ্ছে ক্রনিক ব্রংকাইটিসে।
বস্তুত, ধুলাদূষণের ফলে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। রাস্তার পাশে বা ফুটপাতে খাবারের দোকানে রাখা খাবারে ধুলা জমছে। এই ধুলার সঙ্গে নানা রোগজীবাণুও খাবারে মিশছে। আর এ খাবার খাওয়ার কারণে বেড়ে যাচ্ছে মানুষের রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।
সাধারণত যাদের ডাস্ট এবং কোল্ড এলার্জি থাকে, তারা শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায়। একদিকে ঠান্ডা, আরেক দিকে বাতাসে ধুলাবালির বেশি উপস্থিতি শহরাঞ্চলের- বিশেষত ঢাকার বাসন্দিাদের বেশি ভোগায়।
ধুলোর কারণে শুধু জনস্বাস্থ্যই যে হুমকির সম্মুখীন, এমন নয়। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে কাপড় পরিষ্কার, ঘর ধোয়ামোছা, বাড়ির টপের গাছ পরিষ্কার এবং রোগব্যাধির খরচ মিলিয়ে জরিপে এ ধরনের চিত্র পাওয়া গেছে।
এমতাবস্থায় ধুলোদূষণ নিয়ন্ত্রণে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়মকানুন মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও বিষয়টি কেউ কানে তোলে না! ধুলো দূর করতে নেই তেমন সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ। একসময় ঢাকা শহরে সিটি করপোরেশনের গাড়ির মাধ্যমে প্রধান সড়কগুলোতে পানি ছেটানো হতো। এই উদ্যোগটি দুঃখজনকভাবে কমে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, নগরবাসীকে সুস্থ রাখতে হলে এ
ধরনের উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।